মানিকছড়ি গুচ্ছগ্রামে বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণে গ্রাহক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

fec-image

মানিকছড়ি সদর গুচ্ছগ্রাম এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণের নামে গ্রাহক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র! ফলে বিদ্যুৎ স্থাপনের শুরুতে হয়রানীর কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন গুচ্ছগ্রামের অর্ধশত ভোক্তভোগী পরিবার। তবে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

খোঁজ নিয়ে এবং অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আমতলা এলাকার পূর্বপাশ্বে মলঙ্গীপাড়ার পশ্চিমে মানিকছড়ি সদর গুচ্ছগ্রামে স্থানীয় এবং গ্রুচ্ছগ্রামে সমবেত (বসবাসরত) দু’শতাধিক পরিবারের বসবাস।

উপজেলা সদর হওয়া সত্ত্বেও ওখানে মধ্যবিত্ত কিংবা প্রভাবশালী কোন পরিবার-পরিজন না থাকায় যুগের পর যুগ বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত ওই এলাকার লোকজন। বলতে গেলে বাতির নীচে অন্ধকার!

ফলে গেল বছর ২০১৯ সালের শেষের দিকে রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে এই জনপদে বিদ্যুৎ সম্প্রসারণে প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার যথাসময়ে সরজমিনে কাজ শুরু করেন।

গুচ্ছগ্রামের শুরু আমতল এলাকা থেকে মৌলভীপাড়া পর্যন্ত প্রায় ২কিলোমিটার এলাকায় ইতোমধ্যে অর্ধশত পিলার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। যদিও অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার কাজ শুরু করার পরপর কতিপয় লোকজন পিলার প্রতি সর্বোসাকুল্যে ১৫ হাজার টাকা দাবী করে ৩ থেকে ৫হাজার টাকা হারে অগ্রীম অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সরকারি ত্রাণ নির্ভর পরিবারগুলো থেকে! যেখানে ‘প্রধানমন্ত্রীর পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুতায়ণের ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করেছেন।

আর এখানে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বিপরীত কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিরীহ গুচ্ছগ্রামবাসীর নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে!

অর্ধশত ভোক্তভোগী লোকজন গত ১৩ জুলাই তাদের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দায়ের করেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক বরাবর।

অভিযোগে তারা দাবী করেন এলাকায় প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে বিদ্যুৎ সম্প্রসারণের নামে নিরীহ গুচ্ছগ্রামবাসীর কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় জনৈক আসাদুল, মো. শাহজাহান ও ইব্রাহীম হোসেন লিটন নামের ৩ব্যক্তি! এরা নিজেরা লবিং বা তদবির করে বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প এনেছে এবং এতে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে বলে প্রকাশ্য দাবী করে গ্রাহক পর্যায় থেকে লোকজনকে জিন্মি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হাই, টুটুল সরকার ও হালিমা খাতুন অভিযোগ সর্ম্পকে বলেন, অভিযুক্ত আসাদুল, মো. শাহজাহান ও ইব্রাহীম হোসেন লিটন নিজেদের দলীয় পরিচয় ও প্রভাব বিস্তার করে নিরীহ গুচ্ছগ্রামবাসীর কাছ থেকে বিদ্যুৎ পিলার স্থাপনের নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিলেও এখনো অনেকে পিলার পায়নি।

প্রধানমন্ত্রী যেখানে পার্বত্যাঞ্চলে ঘরে ঘরে বিদ্যুতায়ণে ঘোষণা দিয়ে কাজ করেছেন। আর সেখানে দলীয় পরিচয়ে সাধারণ ইউনিয়ন/ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা হয়ে তারা জনগণের ওপর প্রভাব চালিয়ে টাকা নিচ্ছে এবং দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করছে। তাই আমরা নিরুপায় হয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছি।

এদিকে প্রকল্পের ঠিকাদার মো. জাহেদুল করীম এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী পার্বত্যাঞ্চলের ঘরে ঘরে বিদ্যুতায়ণে কাজ করছে। বিদ্যুৎ দেয়া বা পিলার স্থাপনে গ্রাহক থেকে কোন প্রকার সুবিধা আদায়ের সুযোগ নেই। বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণে কেউ টাকা পয়সা লেন-দেনের কোন যুক্তি নেই। আমি এ ধরণের প্রতারণা করার লোক নই। বিষয়টির সাথে কারা জড়িত বের করা উচিৎ।

অভিযুক্ত আসাদুল এর নিকট এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি রাজনীতি করার কারণে দলে বির্তকিত ও বহিঃস্কৃত ব্যক্তিদের সাথে মতানৈক্য রয়েছে। ফলে তারা আমাকে জড়িয়ে নানা অপ-প্রচারসহ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অভিযোগ উপস্থাপন করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

মানিকছড়ি আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দীন এ প্রসঙ্গে বলেন, জনপদে নতুন বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ প্রকল্পের সাথে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিস জড়িত না। সম্প্রসারণ কাজ শেষে ঠিকাদার অফিসকে কাজ বুঝিয়ে দিলে মিটার সংযোগ থেকে গ্রাহকের সাথে আমাদের সর্ম্পক হবে।

গ্রাহক থেকে কারা বা কেন টাকা-পয়সা লেন-দেন করছে বা আদৌ তা হয়েছে কী না আমাদের এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জেলা প্রশাসক, বিদ্যুৎ লাইন, মানিকছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন