মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কেন এত নিষ্ঠুর

fec-image

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কর্তৃক গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সুচির সরকারকে এক বছর আগে উৎখাত করা করেছিল , যেটি টাটমাডো নামে পরিচিত। গত এক বছরে এই টাটমাডো অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভ দমনে যেভাবে শিশুসহ শত শত বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে, তা বিচলিত করেছে গোটা বিশ্বকে।

মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য এটি ছিল রাস্তায় নির্বিচার হত্যা এবং গ্রামগুলোতে রক্তাক্ত অভিযানের এক বছর। সামরিক বাহিনীর একের পর এক অভিযানে কীভাবে বিরোধীদের নির্যাতন এবং গণহারে হত্যা করা হয়েছে, তা বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এই তথ্য দিচ্ছে বার্মার একটি মানবাধিকার গ্রুপ, এসিস্টেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (বার্মা)।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কিভাবে এত ক্ষমতাশালী হয়ে উঠলো এবং এটি কেন এরকম নিষ্ঠুর এক বাহিনী।

টাটমাডো কারা?

বার্মিজ ভাষায় টাটমাডো মানে হচ্ছে ‘সামরিক বাহিনী’। কিন্তু এটি এখন বার্মার বর্তমান সামরিক শাসকদের সমার্থক হয়ে উঠেছে। কারণ বার্মায় এই বাহিনী সাংঘাতিক ক্ষমতার অধিকারী এবং সারা পৃথিবী জুড়ে তারা কুখ্যাত তাদের নিষ্ঠুরতার জন্য।

বার্মায় কিন্তু বহু শতাব্দী ধরেই রাজপরিবারগুলোর অধীনে স্থায়ী সামরিক বাহিনী ছিল। কিন্তু ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকরা এসে এই সেনাবাহিনী ভেঙ্গে দেয়।

অং সা‌নকে মিয়ানমারের মানুষ আধ্যাত্মিক ‌‌’জ‌াতির পিতা’ ব‌‌‌লে মানে। তিনি অং সান সুচির পিতা।

 

টাটমাডোর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বার্মা ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি বা বিআইএ’র ইতিহাস। একদল বিপ্লবী এই বাহিনীর গোড়াপত্তন করেন ১৯৪১ সালে, এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অং সান, যাকে বহু বার্মিজ তাদের জাতির পিতা বলে মনে করেন। তিনি ছিলেন বার্মার ক্ষমতাচ্যূত নেত্রী অং সান সুচির পিতা।

বার্মা যখন ১৯৪৮ সালে বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে, তার কিছু আগে অং সান আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। কিন্তু তার মৃত্যুর আগেই বার্মা ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি বা বিআইএ দেশের অন্যান্য এলাকার মিলিশিয়া বাহিনী গুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী গঠনের কাজ শুরু করে। স্বাধীনতার পর এই বাহিনীকেই টাটমাডো বলে পরিচিত বাহিনীতে রূপান্তরিত করা হয়।

মিয়ানমারে এই সামরিক বাহিনীকে বেশ উচ্চ মর্যাদার সঙ্গে দেখা হয়। বার্মায় অনেক মানুষের জীবনের লক্ষ্যই থাকে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া। তবে সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই মোহ কিছুটা কেটে গেছে বলে মনে হচ্ছে।

“আমি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম, কারণ আমি চেয়েছিলাম আমার হাতে বন্দুক থাকবে, আমি যুদ্ধক্ষেত্রে যাব এবং যুদ্ধ করব। আমি অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করি এবং দেশের জন্য আত্মত্যাগ করবো, এরকম একটা লক্ষ্য আমার ভেতরে কাজ করেছিল,” বলছিলেন লিন টেট অং*, সামরিক বাহিনীর এক সাবেক ক্যাপ্টেন।

কিন্তু তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করে এখন বার্মার অসহযোগ আন্দোলনে (সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স মুভমেন্ট বা সিডিএম) যোগ দিয়েছেন।

গতবছরের অভ্যুত্থানের পর এর বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল, তখন সিডিএম গঠিত হয়। এতে যোগ দিয়েছেন অনেক ডাক্তার, নার্স, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বহু মানুষ।

“কিন্তু এখন আমি সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে লজ্জাবোধ করি। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আমরা আসলে ভুল করেছিলাম। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তাদের উপর বোমা ফেলা হয়েছে, প্রাণঘাতী আক্রমণ চালানো হয়েছে, গুপ্তস্থান থেকে গুলি চালানো হয়েছে। এরকম টাটমাডো তো আমরা চাইনি। সেজন্যই আমি এখন সিডিএমে যোগ দিয়েছি”, বলছেন তিনি।

দেশের ঐক্যের প্রতীক

মিয়ানমারে একশো তিরিশটির বেশি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, তবে এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বামার জনগোষ্ঠী।

বার্মার সমাজের অভিজাত শ্রেণী কিন্তু এই বামারদের নিয়ে গঠিত। আর সেনাবাহিনী নিজেদেরকে দেখে সমাজের এই অভিজাত অংশের আরো অভিজাত শ্রেণী হিসেবে।

মিয়ানমারের আধুনিক ইতিহাসের সঙ্গে টাটমাডোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। এই বাহিনী নিজেদেরকে বার্মার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তুলে ধরে এবং প্রায়শই বলে থাকে যে বার্মা বলতে যা বোঝায় সেটা আসলে তারাই।

“তাদের উগ্র জাতীয়তাবাদী আদর্শের মধ্যে এই ধারণাটা কিন্তু গভীরভাবে প্রোথিত”, বলছেন গোয়েন রবিনসন, যিনি ব্যাংককের চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটির একজন গবেষক।

“টাটমাডো সব সময় বার্মার জাতিগত সংখ্যালঘু মানুষদেরকে একটা হুমকি হিসেবে দেখেছে। বার্মায় সংখ্যালঘু জাতিগুলোর নিজস্ব একটা আলাদা জায়গা বেছে নেয়ার কোনো অধিকার নেই। এদেরকে দেখা হয়েছে সেই ধরনের কিছু গোষ্ঠী হিসেবে, যারা বার্মার ঐক্য এবং স্থিতিশীলতাকে উল্টে দিতে চায়। এদেরকে হয় নিশ্চিহ্ন করতে হবে, অথবা বশে আনতে হবে।”

এর পরিণামে যেটা দাঁড়িয়েছে, তা হলো, কয়েক দশক ধরে আসলে বার্মায় ডজনে ডজনে ছোটখাট গৃহযুদ্ধ চলছে।

মিয়ানমার জুড়ে আছে অনেক সশস্ত্র জাতিগত মিলিশিয়া গোষ্ঠী। প্রতিদ্বন্দ্বী এই গোষ্ঠীগুলো স্ব স্ব জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য লড়াই করছে, এরা বার্মিজ রাষ্ট্রযন্ত্রের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে যেতে চায়।

এর ফলে, বার্মার সামরিক বাহিনী সব সময় একটা-না-একটা লড়াইয়ে জড়িয়ে আছে। অনেক সময় একই সঙ্গে হয়তো তাদের লড়তে হচ্ছে অনেকগুলো ফ্রন্টে।

সত্যি কথা বলতে কি, বার্মার সেনাবাহিনী যে এই মিলিশিয়া গোষ্ঠীরগুলোর বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াইয়ে জড়িয়ে আছে, সে কারণে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, বিশ্বে সবচাইতে দীর্ঘ সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে আসলে মিয়ানমারে।

মিজ রবিনসন বলছেন, এর পরিণামে টাটমাডো এমন একটা নিষ্ঠুর যুদ্ধ মেশিনে পরিণত হয়েছে, যারা যে কোনো নির্দেশ রোবটের মত পালন করে।

একের পর এক যুদ্ধের পরিণামে সৈনিকরা এতটাই নির্দয় হয়ে উঠেছে যে, নিজের দেশের ভেতরেই নিজের দেশের লোকদের হত্যায় তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।

কিছু জাতিগত সংখ্যালঘু, যেমন রোহিঙ্গা মুসলিমরা টাটমাডোর সবচাইতে বেশি নৃশংসতার শিকার হয়েছে। তবে এখন শত শত বিক্ষোভকারীও সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত হচ্ছে, যার মধ্যে অনেক বামার বৌদ্ধও আছে।

“একটি গোঁড়া ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর মতো”

মিজ রবিনসনের মতে, বার্মার সামরিক বাহিনী টাটমাডো প্রত্যেককেই একজন সম্ভাব্য বিদ্রোহী বলে বিবেচনা করে। “এরা বিক্ষোভকারীদেরকে দেখে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে।”

সৈনিকদের কাজের সময় অনেক দীর্ঘ, আর এরা সমাজের বাকি অংশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন জীবন-যাপন করে। এর ফলে তাদের মধ্যে এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি আরও বদ্ধমূল হয়ে ওঠে। এদের রাখা হয় কিছু বিচ্ছিন্ন কম্পাউন্ডের মধ্যে, যেখানে তাদের এবং তাদের পরিবারের উপর কড়া নজর রাখা হয়। সেখানে তাদেরকে দিনে-রাতে সামরিক প্রোপাগান্ডা দিয়ে মগজ ধোলাই করা হয়, বলছেন বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে এরকম একটা বোধ গড়ে উঠে যে তারা সবাই আসলে একই পরিবারের অংশ। এমনকি সামরিক অফিসারদের সন্তানদেরও বিয়ে হয় অন্য কোন অফিসারের সন্তানের সঙ্গে।

“মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অনেক সময় একটি ‘রিলিজিয়াস কাল্ট’ বা গোঁড়া ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে তুলনা করা হয়” বলছেন মিজ রবিনসন। “এদের সঙ্গে বাইরের লোকজনের আসলে সেরকম কোন মেলা-মেশা নেই।”

সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স মুভমেন্টে বা সিডিএমে যোগ দেয়া এক সৈনিকও এরকম কথাই বললেন।

“এই সৈনিকরা এত দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক বাহিনীতে আছে যে, কেবল একটা ভাষাই তারা বোঝে, সেটি হচ্ছে সেনাবাহিনীর ভাষা। সেনাবাহিনীর বাইরে সারাদেশে আর কী ঘটছে, তার কিছুই জানেনা।”

টাটমাডোকে বার্মায় বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি-গোষ্ঠীর মিলিশিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে অনবরত নিষ্ঠুর লড়াই চালাতে হলেও এরকম সংঘাত কিন্তু তাদের জন্য বেশ লাভজনক একটা ব্যাপার।

সামরিক বাহিনী বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যেসব যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছে, তার মাধ্যমে কিন্তু তারা মূল্যবান পাথর, তেল এবং গ্যাসের মত মূল্যবান সম্পদের নিয়ন্ত্রণ হাতিয়ে নিয়েছে। এসব সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয়, যা অনেক সময় বৈধ, অনেক সময় অবৈধ- তা ছিল কয়েক দশক ধরে সামরিক বাহিনী আয়ের একটা বড় উৎস।

বার্মার অর্থনীতির নানা খাতে সামরিক বাহিনী বিপুল বিনিয়োগ করেছে। তাদের বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর বিনিয়োগ আছে ব্যাংকিং এবং পর্যটন থেকে শুরু করে বিয়ারের ব্যবসা পর্যন্ত- সবকিছুতে।

অর্থনীতির উপর তাদের এই ব্যাপক নিয়ন্ত্রণের কারণে বার্মায় সেনাবাহিনীর বিরোধী কিন্তু সবাই নয়। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগ সত্ত্বেও অনেক রক্ষণশীল ব্যবসায়ী ব্যবসা বাগানোর জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মেলায়।

কিন্তু বছরের পর বছর ধরে চলা দুর্নীতি আর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার ফলে জনমত কিন্তু একসময় সাংঘাতিকভাবে সামরিক নেতৃত্বের বিপক্ষে চলে যায়। অং সান সুচির নেতৃত্বে তারা গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি সম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে বিপুলভাবে জয়ী হয়।

রাষ্ট্রের ভেতরে আর একটি রাষ্ট্র

টাটমাডোকে ঘিরে, তাদের চিন্তাভাবনাকে ঘিরে অনেক ধরনের রহস্য আছে।

“এটি আসলে রাষ্ট্রের ভেতরে আর একটি রাষ্ট্র”, বলছেন স্কট মার্সিয়েল, যিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।

“এরা সমাজের অন্য সব অংশের সঙ্গে মেলামেশা করে না। এমন এক বিরট গহ্বরে এরা নিজেদের আটকে রেখেছে, যেখানে তারা কেবল নিজেদের কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পায়। সেখানে তারা সারাক্ষণ পরস্পরকে বলছে, তারা কত গুরুত্বপূর্ণ লোক। তারা মনে করে তারাই একমাত্র দেশটাকে এক রাখতে পারে এবং তারা ক্ষমতায় না থাকলে কিভাবে বার্মা খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাবে”, বলছেন স্কট মার্সিয়েল।

উদাহারণ হিসেবে সমালোচকরা গত বছরের মার্চে রাজধানী নেপিড’তে এক চোখ ধাঁধানো সামরিক কুচকাওয়াজ এবং নৈশভোজের কথা উল্লেখ করছেন। সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশ জুড়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভে যখন প্রায় একশো বেসামরিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তার পর মার্চে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

তবে নীচের স্তরের সৈনিকরা বলছেন, এরকম ভ্রাতৃত্ববোধ কেবল সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে সীমাবদ্ধ।

“সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের অফিসাররা খুবই ধনী এবং তারা তাদের এই সম্পদের ভাগ কিন্তু নিচের স্তরের লোকজনকে দেয় না” বলছেন মেজর হেইন থ ও*, সেনাবাহিনীর এক সাবেক কর্মকর্তা।

“আমি যখন টাটমাডোতে যোগ দেই, তখন আমি ভেবেছিলাম আমি হয়তো আমার দেশের সীমান্ত পাহারা দেব, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবো। কিন্তু পরিবর্তে আমি দেখলাম সেনাবাহিনীতে নীচের স্তরের অফিসারদের কোন সন্মান নেই, তাদেরকে বরং উর্ধ্বতন অফিসাররা হেনস্থা করে।”

সেনাবাহিনীর শীর্ষ অধিনায়ক হচ্ছেন অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল মিন অং লেইং। শেষ পর্যন্ত তার নির্দেশই সবাইকে মানতে হয়।

তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাধারণত একজন সামরিক শাসককে ঘিরে যে ধরনের অন্ধ ভক্তি থাকে, জেনারেল মিন অং লেইং ঠিক সেধরণের ব্যক্তিত্ব নন।

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিস্টার মার্সিয়েল বলছেন, “জেনারেল মিন অং লেইংকে মূল সমস্যা বলে ধরা হলে সেটা ভুল করা হবে। আমার মনে হয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে ধরণের প্রতিষ্ঠান এবং এই সেনাবাহিনীর মধ্যে যে ধরনের সংস্কৃতি চালু আছে, সেটাই মূল সমস্যা। এই জেনারেল হচ্ছেন তারই একটা প্রোডাক্ট।”

“আমি আমার কর্ম জীবনে যত ধরনের প্রতিষ্ঠান দেখেছি, সম্ভবত তার মধ্যে আর কোন প্রতিষ্ঠানে এটির লোকজন নিজেদেরকে কিভাবে দেখে এবং অন্যরা তাদেরকে কিভাবে দেখে, তার মাঝে এত বেশি দূরত্ব আর চোখে পড়েনি।”

মেজর হেইন থ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যখন জেনারেল মিন অং লেইং অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন, তখন তিনি তার বাহিনীর সমর্থন পেয়েছেন। কারণ এর আগে তিনি সেনাবাহিনীকে আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে এবং নতুন ইউনিফর্মে সুসজ্জিত করেন।

“কিন্তু যখন তার মেয়াদ শেষ হলো, তিনি নিজেই তার মেয়াদ বাড়িয়ে নিলেন। তার চাইতেও কিন্তু অনেক ভালো অধিনায়ক ছিলেন, কিন্তু জেনারেল মিন অং লেইং নিজের পথ থেকে সরে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানালেন। নিজের সুবিধার জন্যই তিনি নিয়ম ভঙ্গ করলেন,” বলছেন এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

তবে সেনাবাহিনীতে মেজর হেইন থ ও’র মতো কর্মকর্তারা একেবারেই হাতেগোনা সংখ্যালঘু। বেশিরভাগ সৈনিক কিন্তু জেনারেল এবং তার অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেন।

টাটমাডো এখন আগের চাইতে আরো বেশি করে তাদের নিজের চেহারায় ফিরে গেছে। মিয়ানমারে এই বাহিনীর কাজ-কর্ম আগের মতোই কঠোর গোপনীয়তায় ঢাকা। তারা মনে করে তারাই শ্রেষ্ঠ, নিজেদের ছাড়া বাকী কারো কাছে তারা জবাবদিহি করে না।

অথবা মিস্টার মার্সিয়েলের ভাষায়, “বাকি বিশ্ব তাদেরকে নিয়ে কি ভাবলো সেটা নিয়ে তারা মোটেই পরোয়া করে না।”

সূত্র: বিবিসি
Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টাটমাডো, মিয়ানমার, সামরিক বাহিনী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন