রাঙামাটিতে অটোরিকশা ভাড়ায় যাত্রী হয়রানী

fec-image

বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির শহর বলা হয় পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিকে। এ জেলার আরেকটি পরিচিতি হলো-দেশের রিকশাবিহীন একমাত্র শহর। উঁচু-নিচু পাহাড়ি বাকের সড়কে রিকশা চলে না।

ছোট এ পাহাড়ি মফস্বল শহরে যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য একমাত্র ভরসা অটোরিকশা (সিএনজি)। এখানে কোন সিটি সার্ভিস নেই। যাত্রীরা যোগাযোগ রক্ষা করে অটোরিকশা দিয়ে।

বর্তমানে বাহনটির চালকদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। করোনার দোহাই দিয়ে  যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বাহনটির চালকরা। জেলা প্রশাসন থেকে ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করার পরও তারা কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। যে কারণে যাত্রীরা প্রতিদিন হয়রানীর শিকার হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং প্রকাশ্যে যাত্রী সাধারণ তীব্র প্রতিবাদ জানালেও কিছুতেই তাদের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। এসব অপকর্ম বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসন প্রতিদিন অভিযোগের ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও তারা আরও বেপেরোয়া হয়ে পড়ছে। থামানো যাচ্ছে না তাদের এহেন কর্মকান্ড।

যাত্রীরা অটোরিকশায় উঠলে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে এক প্রকার জোর করে। কোন কোন যাত্রী  তীব্র প্রতিবাদ জানালেও  চালকরা বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ছে।

জানা যায়, করোনার আগে, শহরের মধ্যমণি বনরূপা শহর থেকে কলেজ গেইট কিংবা ভেদভেদী, তবলছড়ি এবং রিজার্ভবাজার যেতে যাত্রীদের ভাড়া গুণতে হতো জনপ্রতি ১২টাকা। করোনাকালীন সময়ে মানুষকে ভাইরাস মুক্ত করতে সরকার যাত্রী বহনে কিছুটা পরিবর্তন আনে।

সরকারি নির্দেশনা মেনে শারীরীক দূরুত্ব বজায় রাখতে অটোরিকশাগুলোতে প্রতি সিটে দু’জন বহন করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি নির্দেশনা জারী করে প্রশাসন। ভাড়া  ৬০ভাগ বৃদ্ধি করে ১২টাকার ভাড়া ১৬টাকা করা হয়েছে।

সরেজমিনে গেলে যাত্রীরা অভিযোগ করছে, চালকরা কোন তালিকার তোয়াক্কা করছে না। যার থেকে যত পাচ্ছে জোর করে ভাড়া নিচ্ছে। অটোরিকশাগুলোতে দু’জন যাত্রী বহন করার নির্দেশনা থাকলেও তারা তা মানছে না। আগের মতো পাঁচজন যাত্রী বহন করছে এবং নির্ধারিত তালিকার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এসব বাহনের চালকের মানছে না স্বাস্থ্যবিধিও।

যাত্রী মো. পিয়ারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমি অটোরিকশা করে বনরূপা থেকে ভেদভেদী গিয়েছি। চালক আমার কাছ থেকে ২০টাকা ভাড়া নিয়েছে। অথচ ভাড়া আসে ১৬টাকা। সিটে চারজন যাত্রীও নিয়েছে। প্রতিবাদ জানালে চালক আমার সাথে বাকবিতন্ডা শুরু করে।

আরেক যাত্রী  শিক্ষক রণি ধর পার্বত্যনিউজকে জানান, আমি বেসরকারি চাকুরী করি। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় বেতন-ভাতা ঠিক মতো পাচ্ছি না। অনেক কষ্টে জীবন কাটছে। এর মধ্যে বাসা থেকে স্কুলে যেতে অটোরিকশা চালকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অত্যাচার। তাদের জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাবো?

রাঙামাটি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরেশ মজুমদার পার্বত্যনিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করার জন্য আমরা চালকদের বলে দিয়েছি। কিন্তু যারা আদেশ অমান্য করে এসব অপকর্ম করছে তাদের দায়ভার আমরা নিবো না। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মিজনুর রহমান পার্বত্যনিউজকে জানান, অটোরিকশা চালক কর্তৃক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং যাত্রী হয়রানী করার ব্যাপারে আমরা একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। যে কারণে আমরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এসব চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি এবং জরিমানা আদায় করছি।

তিনি আরও জানান, যাত্রীদের এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে এবং বেশি করে অভিযোগ করতে হবে। তাহলে আমাদের অভিযান পরিচালনা করা আরও সহজ হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন