রাঙামাটির রাইখালীতে কাঠ পাচারের ঘটনায় নিহত-২ আহত-১০: বিজিবি’র চেকপোষ্টে আগুন
(ফলোআপ)
স্টাফ রিপোর্টার:
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নে কাঠ পাচারের ঘটনায় কেন্দ্র করে ২ জন নিহত হয়েছে। এঘটনায় স্থানীয় ও বিজির মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০জন। নিহতের নাম মো. সাদ্দাম হোসেন (৩৫) ও মো. জাবেদ (৩৪)। বৃহষ্পতিবার রাতে কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নে বড়খোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে ১৫জনের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা করেছে বলে জানায় থানা পুলিশ।
পুলিশের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নে বড়খোলা এলাকায় সড়ক দিয়ে অবৈধভাবে স্থানীয় এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী খোলাজিপ (চাঁদেরগাড়ি) করে কাঠ পাচার করে নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় রাইখালী ইউনিয়নে বড়খোলা এলাকায় ঢংছড়ি চেক পোষ্টের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টহল দলের সামনে পড়ে যায় পাচারকারী কাঠ বোোই গাড়িটি। বিজির সদস্যরা গাড়িটির গতিরোধ করতে সিগনাল দেয়।
কিন্তু চালক গাড়ি না থামিয়ে বিজিবি ক্রসলাইনের বাঁশ ভেঙে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। এতে বিজিবির সদস্যরা ধারণা করে গাড়িয়ে কোনো দামী চোরাই পণ্য বা সন্ত্রাসী অস্ত্র বহন করছে। ফরে তারাও গাড়িটির পিছু নেয়। এমতাবস্থায় গাড়িটি বেপরোয়াভাবে চালাতে গিয়ে ক্যাম্প থেকে ৫০০ গজ দুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই মারা যায় সাদ্দাম ও তাঁর সঙ্গে থাকা জাবেদ।
এসময় স্থানীয় জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিহত লাশকে বিজিবি ক্যাম্পের নিচে পাহাড়ের পাদদেশে এনে রেখে এই হত্যাকান্ডের জন্য বিজিবিকে দায়ী করে এলাকাবাসীকে উত্তেজিত করে তোলে।
এতে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে বিজিবি চেকপোস্টে হামলা করে প্রথমে ভাংচুর ও পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সময় ১০ জন আহত হয়। এ সময় আত্মরক্ষার্থে বিজিবি ক্যাম্প কমাণ্ডার ৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পার্শ্ববর্তী ব্যাটালিয়ন থেকে অতিরিক্ত জনবল নিয়ে ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার স্বয়ং ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান, পুলিশ, ফায়ার ব্রিগ্রেড, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং মৃত্যুর কারণ দূর্ঘটনা বলে নিরূপণ করেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (১৯বিজিবি) অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল সোহেল উদ্দিন পাঠান জানান, অবৈধ কাঠ পাচার করার সময় সড়ক দূর্ঘটনায় ২জন নিহত হয়েছে। নাশকতাকারীরা এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এসময় এঘটনাস্থল থেকে জুয়েল নামে একজনকে আটক করা হয়। আগুনে বিজিবির চেকপোষ্টের ঘর ও বিদ্যুতের তারও পুড়ে গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
বিজিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের রিজিয়ন কমাণ্ডার ব্রি. জে. হাবিবুল করিম পার্বত্যনিউজকে বলেন, যিনি নিহত হয়েছেন তাকে দেখে বোঝা গেছে, তার বুকের একপাশের হাড় ভেঙে গেছে, মুখ থেতলে গেছে। গাড়ি দূর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণ। বিজিবির উপর হামলা ও ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিলেও স্থানীয় বিজিবি সহিষ্ণুতা দেখিয়ে কোনো একশনে না গিয়ে ফাঁকাগুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে।
রাঙামাটির কাপ্তাই থানার কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার সামন্ত জানান, বিজিবি ও স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত বিজিবি ও পুলিশ মোতায়ন করা হয়ছে। সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতদের উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার সাইদ তারিকুল হাসান পার্বত্যনিউজকে এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ সময় তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, কাপ্তাই সার্কেলের এএসপি আবুল কাশেম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম ও কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন।