রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন স্থগিতের জন্য সরকারের প্রতি আহবান

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

২৮ জুন, শনিবার, রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান করফারেন্স হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম শাখার আয়োজনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান।

বক্তব্য রাখেন বিশিস্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য উষাতন তালুকদার এমপি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবু সাঈদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, এএলআরডির পরিচালক রওশন জাহান মনি, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব তারেক আলী, হরেন্দ্র নাথ সিং প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ফোরামের সহ সাধারণ সম্পাদক বিনোতা ময় ধামাই।

অনুষ্ঠানে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী আদিবাসীরা অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ভাবে বিপর্যয়ের শিকার । এখন আবার নতুন করে শিক্ষার কথা বলে তাদের উপর উন্নয়ন চাপিয়ে দিয়ে বিপর্যয় ডেকে আনছে সরকার”। তিনি অবিলম্বে সরকারের এই কার্যক্রম বন্ধ করার আহবান জানান। তিনি আরোও বলেন, “পাহাড়ের সমস্যা রাজনৈতিক তাই রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান করতে হবে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করে ভূমি সমস্যা সমাধান করে প্রয়োজনে পাহাড়ী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে কমিটির সুপারিশক্রমে তা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে” বলে মত প্রকাশ করেন।

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি শ্রী পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, “এটা একটা সরকারের প্রতারণা মূলক উন্নয়ন প্রকল্প। পাহাড়ের আদিবাসীদের সাথে বারবার এধরনের প্রতারণা করা হচ্ছে এসময় তিনি কাপ্তাই বাঁধের ফলে স্থানীয় আদিবাসীদের উচ্ছেদের” কথা উল্লেখ করেন।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবু সাঈদ খান বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলে এ ধরণের উন্নয়ন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখতে পারে, তবে অবশ্যই পাহাড়ী আদিবাসীদের স্বার্থকে তাদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে উপেক্ষা করে নয়”। তিনি আলোচনার মাধ্যমে, শান্তি চুক্তির আলোকে তা বাস্তবায়ন করার কথা বলেন।

সাংসদ উষাতন তালুকদার তার বক্তব্যে বলেন, “পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ এবং স্থানীয় জুম্ম জনগনের মতামতকে পাশ কাটিয়ে আলাপ আলোচনা না করে চুক্তির উল্টোপথে চলছে সরকার। যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজ তড়িঘড়ি করে স্থাপন জনগনের কাছে প্রশ্নের উদ্রেক করছে”।
শক্তিপদ ত্রিপুরা বলেন, “পাহাড়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার অবস্থা শোচনিয় এ অবস্থায় এই বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন সরকারের অন্য উদ্দেশ্যকেই প্রমাণ করে। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হলে আদিবাসীরা কি পাবে এবং কি হারাবে তা তুলে ধরেন”।

গৌতম দেওয়ান মূল বক্তব্যে বলেন: “আমাদের শিক্ষা দরকার। উচ্চ শিক্ষা আরো বেশী দরকার। এদিক থেকে চিন্তা করলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা দরকার। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে যে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে, বিশেষ করে বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে তা পাহাড়ী জনগণের জন্য কতটুকু উপকারে আসবে- তা পর্যালোচনার দাবী রাখে। কারণ, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো- সরকারের অতীতের উন্নয়ন প্রকল্প বা বিভিন্ন ভাল ভাল উদ্যোগ পাহাড়ীদের উপকারে আসেনি। সরকারের অতীতের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য পরিলক্ষিত হয় না। দ্বিতীয় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল রাঙ্গামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হলে, সে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবার যোগ্যতাসম্পন্ন পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রী খুব বেশী পাওয়া যাবে না। বাস্তবে দেখা যায় যে, বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যলয়ে যে পাহাড়ী কোটা রয়েছে সে পাহাড়ী কোটার আসন এখনো খালি থেকে যায়। যোগ্যতার অভাবে / প্রয়োজনীয় নম্বর (মার্কস) না পাওয়ার কারণে পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রীরা পাহাড়ী কোটার আসনসমূহ পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এর অন্যতম কারণ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মানসম্মত শিক্ষার অভাব। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না। সেকারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠা না করে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হলে এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুফল পাহাড়ীরা পাবে না; বরঞ্চ তা পাহাড়ীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে”।
উদাহরন হিসেবে তিনি বলেন- “পাকিস্তান আমলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল এ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে, ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা কি? আমাদের অভিজ্ঞতা হলো- কাপ্তাই বাঁধের কারণে লক্ষাধিক পাহাড়ী উদ্বাস্তু হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে উর্বর ভূমি যার পরিমাণ ৫৪ হাজার একর এবং জুমচাষীদের জুম ভূমি পানির নীচে তলিয়ে গেল এবং একারণে পাহাড়ীদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়লো; সর্বোপরি, পাহাড়ীদের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বাস্তবতা সম্পর্কেও আমরা অবগত আছি। আজও বরকল, থানচি উপজেলাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বহু জায়গায় বিদ্যুত পৌঁছেনি। বেশীরভাগ পাহাড়ী এখনো বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
পাকিস্তান আমলে কাপ্তাই- এ বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হল। পাহাড়ীদের শিক্ষা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হল। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও আমাদের অভিজ্ঞতা কি বলে? পূর্বে এ ইনষ্টিটিউটে বহু পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এখানে মাত্র ৪%-৫% পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয় যদিওবা এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবার যোগ্যতাসম্পন্ন ভর্তিচ্ছু বহু পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।
চন্দ্রঘোনা পেপার মিল, ঘাঘড়া রেয়ন মিল ইত্যাদি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একইরূপ চিত্র আমরা দেখতে পাই। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রথমদিকে শ্রমিকসহ বিভিন্ন পদে পাহাড়ীদের অবস্থান ছিল। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পাহাড়ী শ্রমিকদের সংখ্যা হাতেগুণা কয়েকজন মাত্র।
১৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হল। সরকারের প্রতি বিশ্বাস রেখে এ চুক্তি করা হয়েছে। এ চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বশাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পাহাড়ীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সরকার এ প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে। সরকার এ অঞ্চলকে পাহাড়ী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের অঙ্গীকার করলেও সরকার তার বিপরীতে এই অঞ্চলকে একটি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার সকল প্রকার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমি মনে করি সেই মহা-পরিকল্পনার অংশ হল পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার এই অপচেষ্টা। সরকার যদি সত্যি সত্যিই এ অঞ্চলের শিক্ষা উন্নয়নের আন্তরিক হতো তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে শিক্ষা সংক্রান্ত যেসব বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকার ছিল সেসব বিষয় বাস্তবায়নে এবং এ অঞ্চলের পাহাড়ীদের শিক্ষা উন্নয়নের এগিয়ে আসতো, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও এর আলোকে প্রণীত আইন অনুসরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ গ্রহণ করতো। সরকার যদি আন্তরিক হতো তাহলে অঙ্গীকার অনুসারে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতো, পাহাড়ীদের সকল গ্রামে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতো এবং এসব মহৎ দায়িত্ব পালনের জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদকে শক্তিশালী করতো। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখতে পাই? আমরা দেখতে পাই যে, সরকার পার্বত্য জেলা পরিষদে দুর্ণীতিবাজ ও অদক্ষ লোকদের বসিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ঘুষ নিয়ে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে এবং এর কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছে এবং এতে সমাজের যে ক্ষতি হবে তা পূরণ হবার নয়। এর জন্য সরকার দায়ী এবং এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
এধরণের প্রতিশ্রুতি ও প্রতারণার চিত্র আমরা অতীতে দেখেছি এবং বর্তমানেও দেখতে পাচ্ছি এবং এক্ষেত্রে পাহাড়ীরা বার বার প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাহলে কিসের ভিত্তিতে, কোন যুক্তিতে পাহাড়ীরা সরকারের উদ্যোগের ব্যাপারে আস্থা রাখতে পারবে?
এ মূহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হলে তাতে ক’জন পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হতে পারবে? বাস্তবতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় ভর্তির যোগ্যতা না থাকার কারণে খুব বেশী পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রী এ দু’টি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে না। ফলত: এ দু’টি প্রতিষ্ঠান পাহাড়ীদের উপকারে আসবে না; ররং পাহাড়ীরা নানামূখী ক্ষতির শিকার হবে। আমাদের কোনটি জরুরী-উন্নয়ন না অস্তিত্ব? চিকিৎসা বা শিক্ষার সুবিধা না অস্তিত্ব রক্ষা? কোনটিকে আমরা প্রাধান্য দেবো? অবশ্যই আমরা এক্ষেত্রে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া উচিত ও প্রাধান্য পাওয়া উচিত। শিক্ষা বা অন্য কোন উন্নয়ন করতে যেয়ে যদি আমাদের অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যায় বা অস্তিত্ব ধ্বংস হবার ভিত্তিভূমি আমরা নিজেরাই তৈরী করি তাহলে সেটি অবশ্যই আমাদের আত্মঘাতি হবে। নিশ্চয়ই আমরা এমন উন্নয়ন প্রকল্পে সায় দেব না, যার কারণে আমাদের অস্তিত্ব ধ্বংস হবার ভিত্তিভূমি তৈরী হবে, সেটি শিক্ষা উন্নয়ন কিংবা অন্য কোন উন্নয়ন হোক। আমি শুরুতেই বলেছি- আমাদের শিক্ষা দরকার। উচ্চ শিক্ষা আরো বেশী দরকার। সেকারণে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ দরকার। কিন্তু এ মূহুর্তে নয়। ‘স্থান-কাল-পাত্র’ বলে একটি কথা আছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার সময় এখনো হয়নি। আমার সামর্থ্য হলো ১ মণ ওজণের একটি বস্তা বহন করার। কিন্তু আমি যদি ৩ মণ ওজনের একটি বস্তা নিই বা আমাকে দেওয়া হয় তাহলে আমার অবস্থা কি হবে? ঠিক তেমনি যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজ স্থাপন শাকান্ন ভোজী গরীব মানুষকে পোলাও-বিরানী খাওয়ায়ে অসুস্থ করার সামিল হবে। এ বিষয়গুলি আমাদের গভীরভাবে ভাবার দাবী রাখে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজ না হলে পাহাড়ীদের উচ্চ শিক্ষা থেমে থাকবে না; কিন্তু এ দু’টি প্রতিষ্ঠান হলে পাহাড়ীদের জীবন থেমে যাবে। এ জনগোষ্ঠীর জীবন থেমে যাবার ভিত্তিভূমি রচিত হবে”।
তিনি আরো বলেন- “ভবিষ্যতের পানে তাকিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার সকল স্তর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাব্যবস্থায় মানসম্মত শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে যাতে যোগ্যতা অর্জন করতে সেদিকে অধিক পরিমানে মনোনিবেশ করতে হবে। এটি করা যদি সম্ভব হয় তাহলে নিকট ভবিষ্যতে যদি বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় তখন পাহাড়ীরাই উপকৃত হবে এবং এর সুফল পাবে।

আলোচনা সভায় সর্বশেষ নিন্মোক্ত দাবগুলো উত্থাপন করা হয়:
(১) বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ সকল উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত আইন প্রণয়ণের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও প্রথাগত নেতৃত্বের সাথে আলোচনা ও পরামর্শ গ্রহণ করা;
(২) পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রী তথা পাহাড়ী জনগণ যাতে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সুফল পেতে পারে সেজন্যে এই দু’টি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা;
(৩) আপাতত: রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সকল প্রকার কার্যক্রম স্থগিত রাখা;
(৪) পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা করা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন স্থগিতের জন্য সরকারের প্রতি আহবান”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন