রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কে এই আনজরশাহ
রোহিঙ্গা শীর্ষ ডাকাত নবী হোসেনের খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে আনজরশাহ। বেশভুষায় ‘ভালো মানুষ’ মনে হলেও যত সব অপরাধীর সঙ্গে তার গভীর খাতির। কৌশলে চালাচ্ছে চোরাকারবারি।
অভিযুক্ত আনজরশাহ মিয়ানমারের উত্তর মংড়–র হাচারবিলের বাসিন্দা মৌলানা নুরুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে টেকনাফ জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন রবি টাউয়ার এলাকার বাসিন্দা।
ক্রস ফায়ারের ভয়ে বালুখালী ক্যাম্প-৯ থেকে মিয়ানমারে পালানো সিরাজুল ইসলাম প্রকাশ শুক্কুইন্নার অবৈধ কারবারের অংশিদার আনজরশাহ। সব জানার পরও ভয়ে মুখ খোলেনা রোহিঙ্গা।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার করে ডাকাত নবী হোসেন, মো. ইসলাম, মুন্না সিন্ডিকেট। তাদের বিক্রিত ইয়াবার টাকা উত্তোলন করে আনজরশাহ। নবী হোসেন, মুন্না ক্যাম্প-২২এ অবস্থান করতো।
ক্যাম্প-৯, ডি-৪ এর বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে লোক নিয়োগ করেছে ডাকাত নবী হোসেন। তিনি বর্তমানে মিয়ারে অবস্থান করলেও তার নিয়োগকৃতরা বাংলাদেশ সরকারের কর্মকাণ্ডে ও রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন অবস্থার খবরাখবর সংগ্রহ করে। তাদের বেতনভাতা প্রদান করে আনজরশাহ।
ক্যাম্প-২২ এর কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানায়, আনজরশাহ ঠকবাজ ও খুব ধূর্ত প্রকৃতির লোক। রয়েছে মাদক ও চোরাচালাতি সিন্ডিকেট। মুবাশশির নামক ঘনিষ্ট বন্ধু রয়েছে তার। যিনি স্বর্ণ, মাদকসহ এ পর্যন্ত ৩ বার ধরা পড়ে। ১০ মাস মতো আগে কারামুক্ত হন। সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কন্টাক্ট করে তাদের রোগি সাজিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মাদক পাচার করে থাকে মুবাশশির।
মাদক, মানবপাচার ও পাসপোর্ট জালিয়াতির হোতা আনজরশাহ
বাংলাদেশী এনআইডিসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট হাতিয়ে নিচ্ছে শক্তিশালী রোহিঙ্গাচক্র। পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে। জড়াচ্ছে মাবনপাচার ও চোরাচালানে। এসবের নেপথ্যে রয়েছে আনজরশাহ।
তিনি জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন রবি টাউয়ার এলাকার বাসিন্দা হলেও নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে ৫টি বসতভিটার মালিক। বেশ কয়েকটি ব্যাংক একাউন্টও রয়েছে। তার কারণে সংসার ভাঙছে দুবাই প্রবাসী আরেক রোহিঙ্গার।
অনুসন্ধান করে জানা গেল, আনজরশাহর মাধ্যমে দুবাই গিয়েছে মাস্টার তকি, মৌলভী মুজিবুল্লাহ ও মৌলভী জামাল উদ্দিনসহ অন্তত ১০ রোহিঙ্গা। সম্প্রতি ডকুমেন্ট জালিয়াতি করে আরো তিনজনকে পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়েছেন।
তারা হলেন, জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন রবি টাউয়ার এলাকার বাসিন্দা মুফতি আবদুল্লাহর স্ত্রী হাফছা, হাফছার ছেলে মোশাররফ ও মেয়ে খালেছা খানম। তারা বিদেশে যাওয়ার অপেক্ষায়।
ক্যাম্প ৯ এর ডি-৪ একজন বাসিন্দা অভিযোগ করেছে, আনজরশাহ মানবপাচার, মাদক ও স্বর্ণ চোরাকারবারিতে জড়িত। জালিয়াতিতে পাক্কা। হাত রয়েছে অপরাধ সিন্ডিকেটের সঙ্গে।
ক্রস ফায়ারের ভয়ে বালুখালী ক্যাম্প-৯ থেকে ইয়াঙ্গুন পালানো সিরাজুল ইসলাম প্রকাশ শুক্কুইন্নার অবৈধ কারবারের অংশিদার আনজরশাহ। মিয়ানমার থেকে স্বর্ণ, মাদক পাঠায় শুক্কুইন্না। আর তা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয় আনজরশাহ। মাদকসহ বেশ কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তবু থেমে নেই অপকর্ম। আনজরশাহর নামেবেনামে টেকনাফে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে একাউন্ট আছে। যেখানে প্রচুর টাকার লেনদেন হয়।
বছর দেড়েক আগে দুবাই গিয়েছিলেন আনজরশাহ। গত করোনার আগে ইয়াঙ্গুন থেকেও ঘুরে এসেছে।
আনজরশাহর নামে জাদিমুরা এলাকায় ৫টি বসতবাড়ি আছে। সেখানে মৌলভী জামাল উদ্দিন, জামালের মা রোকেয়া খানম, ভাই মাস্টার ছব্বির, শ্বাশুড়ি হাফছা (আনজরশাহর খালা) এবং দুবাই প্রবাসী মুজিবুল্লাহর স্ত্রী রাবেয়া খানম বসবাস করেন।
মিয়ানমারের উত্তর মংডুর ধুদাইং এলাকার বাসিন্দা মুফতি আবদুল্লাহর মেয়ে রাবেয়া খানমের আনজরশাহর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে মুজিবুল্লাহ নামক রোহিঙ্গার সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ২টি সন্তান জন্ম নেয়। স্বামী মুজিবুল্লাহ ৫ বছর আগে দুবাই পাড়ি জমানোর সুযোগে পরকিয়ায় জড়িয়ে যায় রাবেয়া। পুরনো প্রেমিক আনজরশাহর সাথে একেক জায়গায় রাত কাটায়।
বিষয়টি অবগত হলে প্রতিবাদ করে রাবেয়ার পিতা মুফতি আবদুল্লাহ। তাতে থামে নি। উল্টো ক্ষেপে যায়। ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই তাকে গুম করে আনজরশাহ। ঘটনার প্রায় সাড়ে ৩ বছরেও হদিস মেলে নি।
এদিকে, মেয়ে রাবেয়ার সাথে অনৈতিক সম্পর্কে বাধা দেয়ায় মুফতি আবদুল্লাহকে অপহরণ করা হয় বলে সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছে।
ক্যাম্প-১৫ এর জামতলি ‘এ’ ব্লক, সাব ব্লক এ ৮ এর বাসিন্দা হাজি খলিল আহমদের ছেলে মুফতি আবদুল্লাহ বালুখালী-১ ক্যাম্প-৯ এর একটি মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন। তিনি ৫ ছেলে মেয়ের জনক।
মিয়ানমারে উচ্চশিক্ষা শেষে হাটহাজারি মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আনজরশাহ। তিনি বলেন, আমার বিষয়ে ক্যাম্পে এসে খোঁজখবর নেন। কারা অপপ্রচার করছে, কেন করছে জানবেন।