রোহিঙ্গা: প্রথম দিনে ২৫ বাসে ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত ৩৪টি ক্যাম্পে থেকে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই ৬শ পরিবারের ২ হাজার ৫শ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নেওয়ার কথা রয়েছে। আগামীকাল আরও সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নেওয়া হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উখিয়া কলেজ মাঠের অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে প্রথম পর্যায়ে ২৫টি বাসে করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। প্রতি ১০টি বাসের বহরে ১টি এ্যাম্বুলেন্স ও ১টি করে পুলিশের গাড়ি রয়েছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে তাদেরকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৪টি জাহাজ।

ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের প্রথমে স্ব-স্ব ক্যাম্প থেকে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে উখিয়া কলেজ মাঠে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাবু ও বুথ তৈরি করে তাদেরকে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। পরে তাদের ডাটাএন্ট্রি করে বাসে তোলা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বহনের জন্য শতাধিক বাস এবং ৪০টি মালবাহী কাভার্ড ভ্যান এবং ট্রাক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, পালংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১৩ পরিবারের ৫৬জন। বালুখালী পানবাজার ক্যাম্প থেকে ২৩ পরিবারের ১১০জন। শামলাপুর ক্যাম্পের ৫ পরিবারের ২৭জন। কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ৯ পরিবারের ৪৫জন। নয়াপাড়া ২ পরিবারের ১০জন। এ পর্যন্ত ৫২ পরিবারের ২৪৮জনসহ প্রায় ১ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নেওয়া হয়েছে।

এদের মধ্যে ২৩নং ক্যাম্পের মাঝি আবুল হাশেম বলেন, ভাসানচরে যাওয়ার জন্য কোন ধরনের জোর দেয়া হচ্ছে না। যারা স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক তাদের নেওয়া হচ্ছে ভাসানচরে।

মিজান নামে এক যুবক জানিয়েছেন, গতরাত থেকে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে উখিয়া কলেজ ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদেরকে নাস্তা ও খাবার পরিবেশন শেষে বাসে তোলা হয়। তার ধারণা প্রতিটি বাসে ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কতো পরিবার রোহিঙ্গা ভাসানচর যাচ্ছে তার কোন সঠিক তথ্য পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্বশীল কেউ এ পর্যন্ত মুখ খুলেনি। কাছে ভিড়তে দেয়া হচ্ছে না গণমাধ্যমকর্মীদের। তবে রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাপক আয়োজন ও নিরাপত্তা বেস্টনী দৃশ্যটি চোখে পড়ার মতো। এর আগে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম ঘিরে বঙ্গোপসাগরের এ দ্বীপ ঘুরে আসেন ২২টি এনজিও প্রতিনিধি দল।

প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূমি থেকে চার ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে শেল্টার হোম। রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি এই অস্থায়ী আবাসস্থল এখন শহরে পরিণত হয়েছে।

সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারপার্সন জেসমিন প্রেমা জানান, শুধুমাত্র আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নেওয়ার কাজ করছে সরকার এবং ২২টি উন্নয়ন সংস্থা। তাদের স্থানান্তরের জন্য অর্গানাইজড হয়ে কাজ করছে সরকার। এসব রোহিঙ্গাদের জাহাজে উঠার পূর্বে বিভিন্ন ডাটা এন্ট্রি সাপেক্ষে বরাদ্দ কৃত আশ্রায়ণের টোকেন ও চাবি হস্তান্তর করা হবে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, দ্বীপটি বাসস্থানের উপযোগী করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক বাসস্থান ছাড়াও বেসামরিক প্রশাসনের ও আবাসিক ভবন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ভবন, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সেখানে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে।

প্রকল্পটিতে যেন এক লাখ এক হাজার ৩৬০ জন শরণার্থী বসবাস করতে পারেন সে লক্ষ্যে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। ১২০টি গুচ্ছগ্রামে ঘরের সংখ্যা এক হাজার ৪৪০টি।

রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবায় দুটি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এবং চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানাস্তর কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অপরদিকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে অবগত থাকলেও তাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সঙ্গে সংস্থাটিকে যুক্ত করা হয়নি বলে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী মিয়ানমারে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন