লংগদুর বাবলু এখন বাফুফের জাতীয় রেফারি

fec-image

রাঙ্গামাটির প্রত্যন্ত লংগদু উপজেলার ছেলে তারিকুল ইসলাম বাবলু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)-এর জাতীয় রেফারিতে উন্নীত হয়েছেন। রাঙ্গামাটি জেলায় এখন পর্যন্ত তিনিই এই কৃতিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এর আগে তিনি বাফুফের ক্যাটাগরি-২ শ্রেণির রেফারি ছিলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশ এন্ড স্পর্টস সাইন্স ডিপার্টমেন্টের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বাবলু ক্যাটাগরি-২ শ্রেণির রেফারি থাকা অবস্থাতেই বিভিন্ন পর্যায়ের অসংখ্য ম্যাচ পরিচালনা করার মাধ্যমে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল টুর্নামেন্টেও ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে তার। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ৫টি, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন লিগের (বিসিএল) ১০টি ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করেছেন দক্ষতার সাথে।

এসব ম্যাচ পরিচালনায় তার দক্ষতা ও বিচক্ষণতার পাশাপাশি শারীরিক ফিটনেস এবং লিখিত পরীক্ষায় সফলতার মাধ্যমেই জাতীয় পর্যায়ের রেফারি হওয়ার চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, বাফুফে ও রেফারিজ কমিটির পরিচালনায় গত ফেব্রুয়ারিতে ফিটনেস টেস্ট এবং ১৫ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়ে ক্যাটাগরি-২ থেকে ক্যাটাগরি-১ রেফারিতে উন্নীত হয়েছেন ৬ জন। রাঙ্গামাটির তারিকুল ইসলামও তাদের একজন।

এ প্রসঙ্গে তারিকুল ইসলাম পার্বত্যনিউজকে জানান, সারাদেশ থেকে বাছাই করা ক্যাটাগরি-২ শ্রেণির ১৫ জন রেফারি ক্যাটাগরি-১ উন্নীত হওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ৬ জন। তাদের একজন হতে পারাটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তবে আমি এখানেই থামতে চাই না। পরবর্তী লক্ষ্য ফিফার আন্তর্জাতিক রেফারিতে উন্নীত হওয়া। শারীরিক ফিটনেস ধরে রেখে আন্তর্জাতিক রেফারি হওয়া অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। তারপরও আমি আশাবাদী, আমি সেটা পারবো।

তারিকুল ইসলাম বাবলু বন্ধুদের কাছে বাবলু সরকার নামেই পরিচিত। বাবলু শুধু ফুটবলে পারদর্শী না, ক্রিকেটেও অলরাউন্ডার। ২০১৩ সালে রাবেতা স্কুল থেকে তাদের ক্রিকেট টিম জেলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জনের রেকর্ড আছে তার। ক্রিকেট আর ফুটবলেই সীমাবদ্ধ নয় বাবলু, তিনি একজন দক্ষ সাঁতারু, অ্যাথলেট হিসেবে ১০ হাজার এবং ৫ হাজার মিটার দৌড়ে ইতোমধ্যে তার ঝুলিতে জমা আছে অনেক মেডেল। ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিসসহ অন্যান্য খেলাতেও রয়েছে তার অনেক অর্জন। তবে ফুটবলটাই তার এখন ধ্যানজ্ঞান।

খেলাধুলার প্রতি ঝুঁক ছিল ছোট বেলা থেকেই। সেই ঝুঁকটা পরিণত বা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে। ২০১৩ সালে রাবেতা হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে রাবেতা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্যাল এডুকেশ এন্ড স্পর্টস সাইন্স বিভাগে ভর্তি হন বাবলু। এরপর থেকেই পড়ালেখা আর খেলাধুলা চলতে থাকে সমান তালে।

সেখান থেকেই ক্রমান্বয়ে রেফারিংকে পেশা হিসেবে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে পেশাদার রেফারিংয়ের শুরু। ধারাবাহিক সাফল্যের মাধ্যমে এখন তিনি জাতীয় পর্যায়ের সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি-১ রেফারি হওয়ার মর্যাদা অর্জন করলেন। খেলাধুলা সম্পর্কে বাবুলর অভিমত, ‘খেলাধুলা আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে, আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, স্বাবলম্বী করেছে, সম্মানও দিয়েছে।’

বাবলু সরকারের বাবা আব্দুল বারেক সরকার একজন জনপ্রতিনিধি, লংগদু উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। আর মা বানেছা খাতুন গৃহিণী। সাত ভাই-বোনের মধ্যে বাবলু পঞ্চম।

১৯৯৭ সালে ১০ নভেম্বর লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ ইউনিয়নের পশ্চিম জারুল বাগানে জন্ম নেয়া বাবলু পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলায় পারদর্শিতা দিয়ে যেমন নিজের সম্মান অর্জন করেছেন, তেমনি নিজের জেলা রাঙ্গামাটির নামও উজ্জ্বল করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন