“একে অন্যের দায়িত্ব বলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে পাথর ব্যবসায়ীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে”

লামা-আলীকদমে পাচারের জন্য মজুদ ৬ লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর

পাচারের জন্য মজুদ পাথর

 

লামা-আলীকদমে বিভিন্ন নদী, ঝিরি, খাল, ছড়া ও ঝর্ণা থেকে পানির উৎস সমূহ নষ্ট করে উত্তোলনকৃত প্রায় ৬ লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর পাচারের জন্য মজুদ করা হয়েছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসন কর্তৃক কোন প্রকার সরকারি অনুমোদন বা পারমিট না দিলেও নির্বিচারে অবৈধ পাথর উত্তোলন চলছে, বন্ধ করা যাচ্ছেনা কোন অবস্থায়। লামা-আলীকদমের বেশ কয়েকটি স্থানে বিশাল বিশাল স্টক করে উত্তোলনকৃত এইসব অবৈধ পাথর রাখা হয়েছে। বিষয়টি সবাই জানলেও না জানার ভান করছে এবং একে অন্যের দায়িত্ব বলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে পাথর ব্যবসায়ীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি বছরে লামা-আলীকদমে কোন পাথরের পারমিট দেয়া হয়নি। অবৈধ পাথর ব্যবসায়ী ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এলাকাবাসী বলছে, লামা-আলীকদম উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে রাতের আঁধারে পাচারের জন্য মজুদ করা হয়েছে লাখ লাখ ঘনফুট অবৈধ পাথর। বিশেষ করে লামার ইয়াংছা কাঁঠাল ছড়া, বনপুর, হরিণঝিরি এবং আলীকদমের ১০ কিলো, ৬ কিলো, রেপারপাড়ি, চৈক্ষ্যং আবাসিক এলাকায় বিশাল বিশাল পাথরের মজুদ করা হয়েছে। পাহাড়-খাল-নদী-ছড়া খুঁড়ে উত্তোলনকৃত এই অবৈধ পাথর থেকে কোন রাজস্ব পাচ্ছেনা সরকার। আসন্ন বর্ষা মৌসুম তাই ইতিমধ্যে পাথর ব্যবসায়ীরা কোয়ারী ও দূর্গম জায়গা থেকে পাথর সমুহ আহরণ করে গাড়ি পয়েন্টে এনে রাখছে। অজ্ঞাত কারণে বিপুল পরিমাণের এই মজুদকৃত পাথর নিয়ে প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা।

সরজমিনে গিয়ে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের কাছ থেকে জানা যায়, লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজার, কাঁঠালছড়া, ইয়াংছা মেম্বার পাড়া, গুলির মাঠ, শামুকঝিরি, বদুরঝিরি, মিরিঞ্জা, বনপুর বাজার, ছমুখাল, পাইকঝিরি, ওয়াক্রা পাড়া, খ্রিস্টান পাড়া, মরার ঝিরি, চচাই পাড়া, কেরানী ঝিরি, কইতরের ঝিরি, বুদুম ঝিরি, চিনির ঝিরি, গয়ালমারা, বালস্ট কারবারী পাড়া ঝিরি, জোয়াকি পাড়া, বাকঁখালী ঝিরি, হরিণ ঝিরি, রবাট কারবারী পাড়া ঝিরি, বালুর ঝিরি, আলিক্ষ্যং ঝিরি হতে নির্বিচারে পাথর তুলে মজুদ করা হয়েছে।

এছাড়া গজালিয়া ইউনিয়নের ব্রিকফিল্ড, নিমন্দ মেম্বার পাড়া, মিনঝিরি, ফাইতং রাস্তার মাথা, আকিরাম পাড়া, নাজিরাম পাড়া, ফাইতং ইউনিয়নের মিজঝিরি অংশ, লম্বাশিয়া, মেহুন্ধা খাল, শিবাতলী পাড়া এবং সরই ইউনিয়নের লুলাইং, লেমুপালং এ কয়েক হাজার স্তুপে লক্ষাধিক অবৈধ পাথর জমা করা হয়েছে। বর্তমানে লামা উপজেলায় পাচারের জন্য ৪ লক্ষাধিক পাথর মজুদ করা হয়েছে। যা হতে প্রতিরাতে চুরি করে পাথর পাচার হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা। পাথর উত্তোলন, পাচার করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা পানির উৎস নদী, খাল, ছড়া গুলো ধ্বংস করছে অপরদিকে ভারি ট্রাকে করে পরিবহণ করতে গিয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট সমুহ ভেঙ্গে নষ্ট করছে। এতে করে অত্র অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

অপরদিকে আলীকদম উপজেলার ২৮৭নং তৈন মৌজার ছোট ভরি, বড় ভরি, ঠাণ্ডা ঝিরি, মাংগু ঝিরির শাখা প্রশাখা, আলীকদম-থানচি সড়ক, চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের পাট্টাখাইয়া সড়কের পথে পথে পাথরের স্তুপ, চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ভরিখাল, কলারঝিরির শাখা প্রশাখা, রেপারপাড়া এলাকার ডপ্রু ঝিরি, চিনারি দোকান এলাকার ভরিমুখ, মমপাখই হেডম্যান পাড়া, থানচি সড়কের ১০ কিলো, ৬ কিলো থেকে সরকারি অনুমতি ছাড়াই নির্বিচারে পাথর আহরণ ও পাচার করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এইসব পয়েন্টে কমপক্ষে ২ লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর মজুদ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, এই উত্তোলনকৃত অধিকাংশ পাথর বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকা থেকে তোলা। এই পাথর সিন্ডিকেটের সাথে সরকারি কিছু কর্মচারী ও স্কুল শিক্ষক জড়িত রয়েছে। এছাড়া সরকারি বড় একটি উন্নয়ন কাজকে পুঁজি করে পাথর ব্যবসায়ীরা লামা-আলীকদমে অবৈধ পাথর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এইসব অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীরা প্রায়সময় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়েও পাথর নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এইসব অবৈধ পাথরের বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আলীকদমের অতিরিক্ত দায়িত্বরত ইউএনও নুর-এ জান্নাত রুমি বলেন, এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কে অবহিত করুন।

এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বান্দরবানের উপ-পরিচালক একেএম সামিউল আলম বলেন, আমরা বান্দরবানে নতুন অফিস সেটআপ করছি। দ্রুত লামা-আলীকদমের অবৈধ পাথরের বিষয়ে অভিযান চালানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন