সাভার হত্যাকাণ্ড: এ পর্যন্ত লাশ উদ্ধার ৩৩২, হস্তান্তর ৩১৯, জীবিত উদ্ধার ২৪০৮
ডেস্ক নিউজ
সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এ পর্যন্ত লাশ উদ্ধার ৩৩২, হস্তান্তর ৩১৯, জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২৪০৮ জনকে। হস্তান্তরের অপেক্ষায় থাকা লাশগুলো সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় রাখা হয়েছে। আহতদের নেওয়া হচ্ছে এনাম মেডিকেলে কলেজ ও হাসপাতালে।
দুর্ঘটনার ৩য় দিন শুক্রবার ৩২ জনের লাশ ও ৯০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে আইএসপিআরের পরিচালক শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন।
এর আগে লাশ হস্তান্তর গণনার কাজে নিয়োজিত সাভার থানার সিনিয়র এএসপি মো. মশিউল্লাহ রেজা বলেন, “উদ্ধারকৃত লাশ থেকে বেশি দুর্গন্ধ বের হচ্ছে, সে রকম ২৬টি লাশ আঞ্জুমান মুফিদুলে পাঠানো হয়েছে। তবে অপেক্ষমাণ স্বজনের চেয়ে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা কম।”
তিনি জানান, অনেক স্বজন তাদের হারানো স্বজন ফিরে পেতে স্বপ্রণোদিতভাবে অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও এনাম মেডিকেল কলেজের দেওয়ালে নাম-ঠিকানা লিখে টানিয়ে রেখেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন ৬৩৮ জন। স্বজনের আহাজারিতে শোকাহত সবাই। অনেক স্বজন স্বজনের সন্ধান না পেয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।
এ পরিস্থিতিতে হাসপাতাল ও অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, আপনজনের মরদেহ নিতে অপেক্ষায় আছেন উৎকণ্ঠিত স্বজনরা। পরিচয় শনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
এখনও ধসে যাওয়া ভবনের নিচে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারে তৎপর রয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র্যাব, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন।
উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. তামিম জানান, আমি নিজে ভবনের নিচ তলায় আন্ডারগ্রাউন্ডের মধ্য মসজিদ রয়েছে সেখান থেকে দুউজন মহিলাকে জীবিত উদ্ধার করেছি। সেখানে মৃত মানুষের পঁচা গন্ধ এতোটাই বেশি বমি আসছে আমাদের। তারপরও নিজের মানবতার তাগিদে জীবন বাজি রেখে ভিতরে গিয়ে আটকে পড়াদের উদ্ধার করছি। আমার মতো স্বেচ্ছায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসে উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছি। সরকারি বাহিনীগুলো যদি আমাদের মতো ভিতরে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালাতো তবে জীবিত অবস্থায় আরো অনেক মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হতো। শামিম নামের উদ্ধারকর্মী একই কথা জানিয়ে বলেন, সরকারি উদ্ধারকর্মীরা যদি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করা উদ্ধারকর্মীদের মতো তৎপরতা চালাতো তবে আরো বহু মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো। কেননা ভবনের একেবারে ভিতরে যেতে চান না নিজের জীবনের ভয়ে। তবে আমরা যারা মানুষ মানুষের জন্য এই কথায় বিশ্বাসী হয়ে দূরদূরান্ত থেকে এসেছি তারা সব কিছুকে জয় করে ভিতরে ঢুকছি। জীবিত ও মৃতদের উদ্ধার করে আনছি।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামে বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে।
সাভার পৌর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানার মালিকানাধীন এই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও পোশাকের দোকান ছিল। ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে ওপর পর্যন্ত কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানা ছিল। এগুলো হলো-নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউ ওয়েভ স্টাইল, নিউ ওয়েভ অ্যাপারেলস, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ইথার টেক্সটাইল লিমিটেড।
ছয় তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়ে নয় তলা ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।