সিএইচটি কমিশনের উপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় ‘নাগরিক সমাজের’ মানববন্ধন

image_4

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

গত ৫ জুলাই ২০১৪ পার্বত্য চট্টগ্রামে সফররত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্যদের উপর হামলার প্রতিবাদে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বৃহস্পতিবার শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা কমিশনের উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। গণঐক্যের আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা রাশেদ রাইনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, উষাতন তালুকদার এমপি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামছুল হুদা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিনিধি দীলিপ পাল ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রাজীব মীর প্রমুখ।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কমিশন সদস্যদের উপর হামলা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এর আগেও দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগণ পার্বত্য চট্টগ্রামে সফরকালীন অবস্থায় বেশ কয়েকবার আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন’। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে বলেন, ‘সেনাবাহিনী বেষ্টিত এ অঞ্চলে কিভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের উপর তিন তিনবার হামলা হয়, সেখানে কিভাবে সমঅধিকার নামক সংগঠন রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয় তা প্রশ্নসাপেক্ষ’। 

সঞ্জীব দ্রং বলেন, বাংলাদেশকে তিনি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক একটি দেশ হিসেবে ভাবতে পছন্দ করেন। কিন্তু বিশিষ্ট নাগরিক সুলতানা কামাল, খুশী কবীর, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামানদের উপর হামলার ঘটনাকে নিন্দা জানিয়ে সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন, আমরা কি এমন রাষ্ট্র চাই? তিনি দুস্কৃতকারীদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়ে উল্লেখ করেন,  ‘সরকার যদি মনে করে রাষ্ট্র সবার জন্য, আদিবাসীদের জন্য তাহলে সরকার ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে’।

কমিশনের উপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি তৎপর হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক কমিশনের উপর আক্রমণ মানে দেশের আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের উপর আক্রমণের সামিল। হামলাকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও স্থানীয় প্রশাসন তাদেরকে গ্রেপ্তার না করে বরং নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। তিনি সরকারকে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সিএইচটি কমিশন অতি সম্প্রতি বাবুছড়া বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের নামে যারা নিজ নিজ ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন তাদের সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। তারা সেখানে কোন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে যাননি। তিনি বাবুছড়া নামক জনপদ থেকে যারা উচ্ছেদ হয়েছেন তাদের পুর্নবাসনের দাবি এবং কমিশন সদস্যদের উপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।

উষাতন তালুকদার বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাধীন, ভয়মুক্ত ও হামলামুক্ত জীবনের দাবি জানান। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক কমিশন সদস্যদের উপর হামলাকারীদের যথাযথ বিচারের দাবি জানান।

শামছুল হুদা বলেন, আন্তর্জাতিক কমিশন সদস্যবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করতে গেলে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় উগ্র সামপ্রদায়িক একটি গোষ্ঠী তাদের উপর হামলা চালায়। এ হামলা এদেশের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও শান্তিকামী মানুষদের উপর হামলা। কিন্তু ঘটনার এতদিন পরও প্রশাসন আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।

এছাড়াও মানববন্ধনে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস, আইইডি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, হিল উইমেন্স ফেডারেশন,পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, জনউদ্যোগ, কাপেং ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, ব্লাস্ট, প্রান্তিক সংস্কৃতি, আরডিসি, আইপিডিএস বিভিন্ন সংগঠন সংহতি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন