কক্সবাজার সদর হাসপাতালে দালালদের দৌড়াত্বে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন রোগী

12345

ওমর ফারুক হিরু:

রফিকুল ইসলাম বাবু, রামুর চেইদা থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ছোট ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে এসেছেন। তার ছোট ভাই মোহাম্মদ ইমরান (১২) সাইকেল চালাতে গিয়ে ডান হাত ভেঙ্গে ফেলেছে। চিকিৎসকের পরার্মশ অনুযায়ী ইমরানকে এক্সরে কারাতে নিচ্ছিল সদর হাসপাতালের নীচ তলায় অবস্থিত ১১৫ নাম্বার এক্সরে রুমে। ওই সময় নিজেকে হাসপাতালের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলে রফিকুল ইসলামের সাথে। ওই যুবক বলেন, হাসপাতালের এক্সরে রিপোর্ট ভাল না। ভুল আসে রিপোর্ট। ওই যুবকের কথা শুনে ঘাবড়ে যান রফিকুল ইসলাম। তার কাছেই জানতে চান কোথায় এক্সরে করালে ভাল হবে? ওই যুবক তাকে পরার্মশ দেয় তার এক পরিচিত প্যাথলজি রয়েছে যেখানে এক্সরে’র ভাল রিপোর্ট আসে। এছাড়া তার অনুরোধে দামও কম রাখবে।

এরই মধ্যে এক ব্যক্তি এসে জানান, সদর হাসপাতালের এক্সরে মেশিন ঠিক আছে। ওই ব্যক্তি মিথ্যা বলছে। তিনি কমিশনের জন্য দালালী করছেন। ততক্ষণে যুবকটি ওখান থেকে সরে পড়েন। পরে রফিকুল ইসলাম বুঝতে পারেন, তিনি দালালের খপ্পরে পড়তে যাচ্ছিলেন। এসব দালালেরা অসাধু চিকিৎসক ও প্যাথলজির কাছ থেকে কমিশন নিতে রোগীর অভিভাবকদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলীয়ে বিভিন্ন ক্লিনিক, ডক্তার এবং প্যাথলজির কাছে নিয়ে যায়। যেখানে গলাকাটা দাম রাখা হলেও পাওয়া যায়না সুষ্ঠু চিকিৎসা।

শুধু এক্সরে রির্পোটের ক্ষেত্রে নয় এই দালালেরা কমিশনের জন্য চিকিৎসা নিতে আসা রোগী, অপারেশন রোগী (অস্ত প্রচার), আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা এমনকি প্রশাব পরীক্ষার রোগীর অভিভাবকদের ভুল বুঝিয়ে অন্যত্রে নিয়ে যায়। এতে প্রতিনিয়ত ঠকছে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় রোগী ও অভিভাবকেরা।

সূত্রে জানা যায়, শহরে কিছু অসাধু চিকিৎসক ও প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে যেখানে চিকিৎসা সেবার পরিবর্তে রোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলে। তাদের রয়েছে নিজস্ব দালাল। যারা সদর হাসপাতাল থেকে কৌশলে রোগীর অভিভাবক ও রোগীদের অন্যত্রে নিয়ে যান কমিশনের জন্য। আর এই অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে ২ শ্রেণির দালাল। বহিরাগত দালাল আর অভ্যন্তরিন দালাল। এমনটাই বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সুলতান মোহাম্মদ সিরাজী দালালদের কথা স্বীকার করে জনান, তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সদর হাসপাতালে ২ ধরনের দালাল চক্র রয়েছে। এক শ্রেণির দালাল হচ্ছে বহিরাগত। আর অন্য শ্রেণির দালাল চক্র হচ্ছে অভ্যন্তরিন। যারা সদর হাসপাতালে চাকরি করে। এসব দালালের অসাধু চিকিৎসক ও প্যাথলজি থেকে কমিশনের জন্য চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ঠকায়। এর ফলে হাসপাতালের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের। দালালের বিরুদ্ধে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খুবই কঠোর অবস্থায় রয়েছে। এর আগেও কয়েকজন কর্মচারীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে এই অপকর্মের সাথে জড়িত থাকায়। বহিরাগত হোক অথবা অভ্যন্তরিন হোক কোন দালালকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন