ইরান কি গোপনে মিয়ানমার জান্তাকে অস্ত্র সরবরাহ করছে?

fec-image

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সম্পর্ক বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার জান্তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান সোয়ে তেহরানে ১৯তম এশিয়া কোঅপারেশন ডায়ালগ (এসিডি)-এর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। সেখানে তিনি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আলি বাঘেরি কানির সঙ্গে আলাদা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বৈঠকের পর মিয়ানমার জান্তাকে ইরান অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সিরিয়া ও ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনসহ বিভিন্ন সংঘাতময় অঞ্চলে অস্ত্র বিক্রির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে ইরান। ধারণা করা হয়, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ইরান মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে।

গোপন সামরিক সহযোগিতা?

এশিয়া টাইমস জানিয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে একটি ইরানি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার সফর করেছিল। যা সম্ভবত ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় ইরানি সফর ছিল। ওই সময় ইরানের কার্গো এয়ারলাইন কেশম ফার্স এয়ার পরিচালিত একটি বোয়িং ৭৪৭ কার্গো প্লেন জানুয়ারি থেকে এপ্রিল ২০২২-এর মধ্যে তিনবার নেপিদো ও ইয়াঙ্গুনে অবতরণ করেছিল।

মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে কেশম ফার্স এয়ারের বিরুদ্ধে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তেহরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র পরিবহনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

মার্কিন ট্রেজারির অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল কেশম ফার্স এয়ারের দুটি বিমানকে সন্দেহজনক হিসেবে উল্লেখ করেছে, যার মধ্যে একটি, যার নিবন্ধন ‘ইপি-এফএএ’ ছিল। মিয়ানমারে যাওয়া বিমানটি নিষেধাজ্ঞায় থাকা উড়োজাহাজ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই ফ্লাইটগুলোর একটি সামরিক ড্রোন ও ইঞ্জিন ধারণ করে ২১ বাক্সের একটি চালান সরবরাহ করেছিল।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী থেকে পক্ষ ত্যাগকারীরা নিশ্চিত করেছে, সেনাবাহিনী ইরানি ড্রোন ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে। যা মান্দালয় অঞ্চলের মাইকটিলা টাউনশিপের মাইকটিলা বিমানঘাঁটিতে স্থাপন করা হয়েছিল।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় নতুন মিত্রতা?

তেহরান থেকে বিমানের আগমন মিয়ানমার ও তেহরানের মধ্যকার গোপন সামরিক সহযোগিতা নিয়ে গুঞ্জন বাড়িয়েছে। এই অভিযোগ যদি নিশ্চিত হয় তাহলে পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় বিঘ্ন ঘটাবে। তবে এখন জান্তা ও তেহরান প্রকাশ্যেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে।

পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া, চীন, ভারত, বেলারুশ ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে মিয়ানমার জান্তা। তারা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় চালু করেছে।

বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতায় গুরুত্বারোপ

সোমবারের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে থান সোয়ে মিয়ানমারে শান্তি, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করার জন্য জান্তার প্রচেষ্টার ব্যাখ্যা দেন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যম। তিনি বর্তমান এসিডি চেয়ার ইরানকে তাদের নেতৃত্বের জন্য প্রশংসা করেছেন এবং থাইল্যান্ডের আসন্ন চেয়ার পদ গ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি গত মাসে একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত প্রয়াত ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

জান্তা মিডিয়া জানিয়েছে, থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাংগিয়ামপংসা, নেপালি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণ কাজি শ্রেষ্ঠ প্রকাশ এবং কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রগুলোতে এসিডির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন থান সোয়ে।

থাইল্যান্ডের উদ্যোগে ২০০২ সালে এসিডি গঠিত হয়। মিয়ানমার এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তেহরানে এসিডির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ৩১টি সদস্য দেশ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইরান, জান্তা সেনাবাহিনী, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন