ইলিশ রপ্তানীতে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ীরা
কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজারে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ। এতে ট্রলার মালিক, জেলে ও ভোক্তাদের মুখে হাঁসি ফুটলেও ভাল নেই দূরবর্তী স্থানে ইলিশ নিয়ে যাওয়া মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তারা খুবই হতাশা এবং ক্ষুব্ধ কিছু অসাধু হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে।
এসব পুলিশেরা চেক-আপ এর নামে চাঁদার জন্য চরমভাবে হয়রানি করছে মাছ ব্যবসায়ীদের। ইলিশ ভর্তি এক একটি গাড়ি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দিতে হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দিলে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখছে মাছ ভর্তি ট্রাক। যার ফলে মাছ ফুলে গিয়ে মান কমে যাচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে বাজার দর। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, বিষয়টি সঠিক নয়। গাড়িতে করে কি যাচ্ছে এবং গাড়ির বৈধতা চেক করাই তাদের কাজ। সেই অনুযায়ী চেকআপ করা হচ্ছে। এর বাহিরে কিছুনা।
শহরের বিমান বন্দর সড়ক এলাকার মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী মৎস্য বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ফিসারি ঘাটে প্রচুর ইলিশ। মাছ ব্যবসায় সংশ্লিষ্টদের ব্যস্ত সময় কাটছে বোট থেকে ইলিশ নামানো, বিক্রি, বরফ দিয়ে মজুদকরন সহ নানা ভাবে। কিন্তু এত ইলিশ পাওয়ার পরেও দূরবর্তী স্থানে মাছ নিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের মন ভাল নেই। তাদের অভিযোগ জায়গায় জায়গায় হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে তারা অতিষ্ট। তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।
ফিসারি ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী মো. ফরহাদ জানান, কক্সবাজারের ইলিশ চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। আর এসব ট্রাক থেকে জায়গায়-জায়গার চাঁদা আদায় করছে হাইওয়ে পুলিশ। তাদের দাবি থাকে ১ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে গাড়ি রেখে দেয় ঘন্টার পর ঘন্টা। যার ফলে মাছ ফুলে যায় এবং মান কমে যায়। এতে ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হয় মাছ ব্যবসায়ীর।
কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম জানান, সরকারকে টেক্স দিয়ে মাছ ভর্তি ট্রাক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। আর ওসব মাছের ট্রাকে হাইওয়ে পুলিশের চেকআপের নামে চাঁদাবাজি চলছে। এই হয়রানি বন্ধ না হলে ব্যবসায়ীরা মারাত্বক ক্ষতি হবে। এটি শুধু কক্সবাজার নয় পুরো বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ জরুরী হয়ে পড়েছে।
ট্রাক চালক ওসমান মিয়া জানান, কক্সবাজার থেকে মাছ নিয়ে ঢাকা পর্যন্ত যেতে হাইওয়ে পুলিশকে ১০ হাজারের মত চাঁদা দিতে হয়। তাদেরকে ১-২ শত টাকা দিলে মানেনা। অতিরিক্ত টাকার জন্য গাড়ির কাগজ-পত্র দেখাতে বলে। আর ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখে।
মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী মৎস্য বাজারের ব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, মৎস্য ব্যবসায়ীরা প্রায়ই অভিযোগ করে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির ব্যাপারে। তাদের বলা হয়েছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পেশ করা হবে। যাতে করে তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এ ব্যাপারে এ্যাডভোকেট লিয়াকত মিয়া জানান, কিছু অসাধু হাইওয়ে পুলিশের কারণে যদি মৎস্য ব্যবসার ক্ষতি হয় এটি মারাত্বক অপরাধ। তারা দেশের জন্য ক্ষতিকারক। তাদের বিরুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাড়ির এসআই রুহুল আমিন জানান, এ অভিযোগটি সঠিক নয়। এছাড়া এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেননা।
জেলা হাইওয়ে পুলিশের ওসি মোজাহিদুর রহমান জানান, তার জানা মতে বিষয়টি সঠিক নয়। অন্তত তিনি যতদিন থাকবেন এ ধরনের কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হতে দেবেননা।