কক্সবাজারে ঐতিহ্যবাহী খাদ্যপণ্য বিক্রির নামে প্রতারণা
নিজস্ব প্রতিনিধি:
বগুড়ার দই, পদ্মার ইলিশ, কুমিল্লার রসমালাই, পাহাড়ী খাঁটি মধুসহ বিভিন্ন নামকরা খাবার ও পণ্য ক্রয়ের সময় লোকজন আস্থার সাথে ক্রয় করে। কারণ দীর্ঘদিনের গুনগত মান অক্ষুন্ন থাকায় লোকের মুখে জয়জয়কার রয়েছে ওইসব এলাকার খাদ্য ও পণ্যসামগ্রীর।
আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে কিছু অসাধু লোকজন। তারা প্রসিদ্ধ খাবার ও পণ্য বিক্রি করেছে ওই এলাকার নাম ভাঙ্গিয়ে। প্রসিদ্ধতার কারনে লোকজনও ক্রয় করছে নিশ্চিন্তে, আর ঠকছে। ফলে লোকজনের আস্থা কমছে সে সব প্রসিদ্ধ খাবারের প্রতি। সৃষ্টি হচ্ছে বিভ্রান্তির। এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগী ক্রেতাদের।
কক্সবাজার শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের কিছু দই বিক্রেতা ফেরি করে বগুড়ার দই বিক্রি করে। তারা বেশিরভাগই ভিন্ন জেলার লোকজন। অনেকে আবার বগুড়ার বাসিন্দা। কিছু মাছ বিক্রেতা পাতিল মাথায় নিয়ে বিক্রি করছে পদ্মার ইলিশ। এছাড়া শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেই বিক্রি করা হচ্ছে কুমিল্লার রসমালাই। অনেক পাহাড়ী নারী’কে দেখা যায় প্লাষ্টিকের বোতলে ভরে শহরের ফুটপাত ও রাস্তায় বিক্রি করছেন পাহাড়ী মধু। এসব খাদ্য-পণ্য বিক্রির অন্তরালেই রয়েছে যত কারচুপি। কিছু বিক্রেতা ঠিক থাকলেও বেশি লাভের আশায় বেশিরভাগই আশ্রয় নিচ্ছে প্রতারণার।
খবর নিয়ে জানা যায়, যারা বগুড়ার দই বিক্রি করে তাদের মধ্যে অনেকে কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর পাড়স্থ বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে থাকে। তারা চট্টগ্রাম থেকে ঝুড়ি ভরে এসব দই নিয়ে আসে। যার রং, আকার ও পাত্রের ধরণ সবই বগুড়ার দইয়ের মত দেখতে। তাই বগুড়ার দই ভেবে চোখ বন্ধ করে ক্রয় করছে লোকজন।
শহরের কানাইয়াবাজাস্থ শাহাজাহান মিয়া বলেন, গত বছর বগুড়া থেকে আসার সময় বগুড়ার প্রসিদ্ধ দই নিয়ে আসেন। আর বড়িতে মজা করে খেয়েছেন। কয়েকদিন আগে শহরের এক ভ্রাম্যমাণ বগুড়ার দই বিক্রেতার কাছ থেকে দই ক্রয় করে চরমভাবে ঠকেন। ওই দইটি ছিল স্বাদহীন, পানসে এবং পানিতে ভরপুর। তবে ওই দইয়ের ধরণ, রং ও পাত্র সবই ছিল আসল দইয়ের মত।
পদ্মার ইলিশ নামে যে ইলিশ মাছ ফেরি করে বিক্রি করা হয় তাতেও রয়েছে প্রতারণার আশ্রয়। মুলত শহরের ফিসারিঘাট থেকে ক্রয় করে এসব মাছ পাতিলে করে বেশিদামে বিক্রি করে পদ্মার ইলিশ বলে। বিক্রেতারা ভিন্ন জেলার হওয়ায় অনেকে বিশ্বাস করে। আর বেশি দামে ক্রয় করে পদ্মার ইলিশের নামে কক্সবাজারেরই ইলিশ।
এছাড়া কক্সবাজার শহরের যেসব রেস্টুরেন্ট কুমিল্লার রসমালাই বিক্রি করা হয় তাতেও রয়েছে ভেজাল। স্থানীয় বেকারিতে তৈরী রসমালাই কুমিল্লার রসমালাই বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে সবখানে যে ভেজাল তা ঠিক নয় এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগীরা (যারা কুমিল্লার রসমালাই সর্ম্পকে অবগত)।
শহরের ফুটপাত বা রাস্তার পাশে পাহাড়ী নারীরা প্লাষ্টিকের বোতলে ভরে তাতে চিনির মিশ্রন থাকলেও কিছু কিছু রয়েছে খাঁটি।
জেলা ভোক্তাধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জানান, খাঁটি পণ্য যাচাই-বাচাই করে নেওয়া ভাল। শুধুমাত্র নামশুনে ক্রয় করা উচিত নয়। এছাড়া এ প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যাতে খাবার ও পণ্যের জন্য প্রসিদ্ধ এলাকাগুলোর মানক্ষুন্ন না হয়। আর লোকজনও না ঠকে।