ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং..

কক্সবাজার উপকূলে সতর্ক প্রশাসন, সেন্টমার্টিন থেকে ফিরেছে পর্যটক

fec-image

বঙ্গোপসাগরে সিত্রাং নামে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। শক্তি অর্জন করে সিত্রাং আগামী মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ইতোমধ্যে দেশের সবকটি সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলে ৫ থেকে ৭ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে সকাল থেকে হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পযটকের সমাগম তেমন নেই। কয়েকশ পযটক নেমে পড়েন একেবারে পানির ধারে। উত্তাল সমুদ্রের কাছে মনের ইচ্ছাপূরণে কোনো পর্যটক যেন সমুদ্রে ঝাঁপ না দেন-তার জন্য প্রস্তুত আছে লাইফগার্ড, বিচকর্মী ও ট্যুরিষ্ট পুলিশ। উড়ানো হচ্ছে লাল পতাকা।

বেড়াতে আসা পর্যটক রিদুয়ান কবির বলেন, কক্সবাজার সমুদ্রে একবার গোসল করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু নামতে দিচ্ছেনা। ইচ্ছেটা পূরণ হলো না।

জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ৭০০ কিলোমিটার দূরে থাকলেও এর প্রভাবে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। কারণ আঘাত হানার সময় অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাব থাকবে। তাতে ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে।

এদিকে বৈরি আবহাওয়ায় সেন্টমার্টিনে বেড়াতে যাওয়া চার শতাধিক পর্যটককে কক্সবাজারে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পর্যটকরা রবিবার (২২ অক্টোবর) রাত ৮ টার সময় কর্ণফুলী জাহাজযোগে কক্সবাজারে এসে পৌঁছেছে বলে জানান জাহাজটির কক্সবাজারের ইনচার্জ হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর।

জরুরিভিত্তিতে জাহাজ মালিক ও জেলা প্রশাসন এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজার, মোংলা, পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে।

কর্ণফুলী জাহাজের কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সেন্টমার্টিনে যেসব পর্যটক গেছেন, সবাই কর্ণফুলী জাহাজের যাত্রী। সাগর উত্তাল হলেও পর্যটকদের কক্সবাজারে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। রাত ৯টার মধ্যে জাহাজটি পুনরায় কক্সবাজার পৌঁছার কথা রয়েছে।

সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দ্বীপের তিন শতাধিক নৌকা, ট্রলার, স্পিডবোট জেটি ঘাটে নোঙর করা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, বৈরি আবহাওয়া সংকেতের কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে তাই প্রায় পর্যটক কর্ণফুলী জাহাজে করে চলে গেছে। তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী প্রায় ১০ জনের মতো পর্যটক দ্বীপে রয়ে গেছেন বলেও জানান তিনি ।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিনে সকাল থেকে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে । এখন জাহাজ চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। যেসব পর্যটক দ্বীপে অবস্থান করছেন, তাঁদেরকে জাহাজে করে কক্সবাজার ফিরে যেতে অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জাহাজ চলাচল শুরু হবে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, ” দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক রয়েছে।”

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ) ও সহকারী কমিশনার ( ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে স্থানীয় লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি রোধে সাইক্লোন শেল্টার ও বহুতল ভবনগুলো খোলা রাখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দ্বীপের মানুষের জন্য শুকনা খাবার, পানিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ জানান, ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে সবধরনের সতর্কতা ও ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে মেডিকেল টিম গঠন ও সার্বিক বিষয়ে তদারকির জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উপকূল, কক্সবাজার, পর্যটক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন