কাপ্তাইয়ের রাইখালির পাহাড়ি ছড়া ও খালের উৎসস্থলে বালু পাচারকারীদের বেপরোয়া তান্ডব

কাপ্তাই উপজেলা map

মো. রেজাউল করিম, কাপ্তাই:
কাপ্তাইয়ের রাইখালি পাহাড়ি এলাকায় সংঘবদ্ধ বালু পাচারকারী চক্রের ব্যাপক তান্ডব চলছে।  পাহাড়ের শান্ত পরিবেশে বয়ে চলা ছড়া এবং খাল থেকে উত্তোলন করে পাহাড়সম বালুর মজুদ গড়ে তুলছে এই চক্রটি। মজুদ থেকে বালু পাচারে পরিবহনের জন্য পাহাড় উজার করে তৈরী করা হচ্ছে রাস্তা। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরীর বিরুদ্ধে দেয়া আদালতের  নিষেধাজ্ঞাও মানছেনা দুর্ধর্ষ বালু পাচারকারী একাধিক সিন্ডিকেট।

জানা গেছে, কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন খালের উৎস স্থল এবং পাহাড়ি ছড়াগুলোতে  বালুর উৎসের সন্ধানে চষে বেড়াচ্ছে বালু পাচারকারী চক্র। নিরবে বয়ে চলা দুর্গম পাহাড়ের উৎস স্থলগুলোতে তাদের হস্তক্ষেপে উত্তাল হয়ে উঠছে প্রাকৃতিক ছড়া এবং খালগুলো। এতে স্থানীয় উপজাতী পল্লির  বাসিন্দাদের জীবন যাপনে ভোগান্তিরর সম্মুখীন করছে। অভিযোগ পাওয়া যায়, রাইখালির  বড়ঢহর নামক পাহাড়ি এলাকায় কোদালা খালের উৎস স্থলে বালু পাচারকারী একটি চক্র সম্প্রতি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে খালের তীব্র ভাঙ্গনের মুখে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হওয়াসহ মারত্মক দুর্যোগের আবাস পাচ্ছে এলাকার বাসিন্দারা।

এলাকাবাসী জানায়, বড়ঢহর এলাকায় কোদালা খালের আগা থেকে সম্প্রতি প্রচুর বালু উত্তোলন করা হয়েছে। প্রায় লক্ষ ঘটফুটের পাশাপাশি কয়েকটি মজুদ ডিপো থেকে বালু পাচারের পরিবহন সুবিধার জন্য এখানে পাহাড় কেটে তৈরী করা হয়েছে রাস্তা। স্থানীয়দের আপত্তির প্রতি পাচারকারীরা কোন তোয়াক্কা করেনা। প্রশাসনিক এবং স্থানীয় বন বনবিভাগও পালন করছে নিরব ভুমিকা।

বড়ঢহর গ্রামের চিংহ্লা মারমা জানান, কোদালা খালের আগা ও খালের উৎসস্থল বড়ঢহর এলাকায় উত্তোলন করা  মজুদ থেকে বালু পরিবনে যানবাহন চলাচলের জন্য পাহাড় এবং আবাদি জমি কেটে রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত একটি মামলার সুত্রে রাঙ্গামাটি জেলা জজ আদালত কতৃক নিষেধাজ্ঞা জারীসহ সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য চন্দ্রঘোনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও বালু পাচারকারীর চক্রটির তৎপরতা থামছেনা। কতৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই বালু পাচার হচ্ছে নির্বিঘেœ এবং বাধাহীনভাবে।

এদিকে রাইখালী ইউনিয়নের ডংনালা খালে অব্যাহত রয়েছে অবৈধভাবে বালু আহরনকারীদের  উৎপাত। এতে  বিপন্ন হতে চলেছে খালের অস্তিত্ব। পানির অভাবে খালের পাশের ডংনালা বিলে চাষাবাদে দেখা দিয়েছে প্রতিবন্ধকতা। তীরবর্তী উপজাতী পল্লির বাড়ি ভিঠায় দেখা দিয়েছে মারাত্মক ভাঙ্গন। তাছাড়া  এলাকার রাস্তঘাট ও পুল কালভার্ট ক্রমে বিপর্যস্থ হয়ে পড়ছে অবৈধ বালু পরিবহনের ভারি যানবাহনের চলাচলে। এলাকাবাসি জানায়, কোদালা খালের একটি শাখা খাল হচ্ছে ডংনালা।

এ খালের  একমুখি স্রোতের পানিতে দিগন্তজোড়া ডংনালা বিল এবং আশে পাশে সহস্র একর জমিতে চাষাবাদ হয় বোরো ধানের। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহের ধারায় নিয়ন্ত্রন হয় এসব বিলের বন্যা জনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ডংনালা ছড়ায় শুরু হয়েছে বালু সন্ত্রাসীর তান্ডব। এতে বিলে এখন আর চাষাবাদ হচ্ছে না। ডংনালা গ্রামের প্রায় সহস্র কৃষক পরিবারের পেশায় দেখা দিয়েছে প্রতিবন্ধকতা। জমিতে চাষাবাদে এ প্রতিবন্ধকতায় কৃষক পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে দারিদ্রতা।

অভিযোগ পাওয়া যায়, গত দুবছর আগে ডংনালা খালে বালু উত্তোলনের উৎপাত শুরু হয়। ক্রমে এখানে বালু সন্ত্রাসীর উৎপাত বেড়ে চলেছে। বর্তমানে ১০/১২ টি বালু পাচারকারী সিন্ডিকেট এ খালের বালু উত্তোলন করছে। তাদের বেপরোয়া বালু উত্তোলনে তীরের ডংনালা গ্রামের দিকে দেখা দেয় ভয়াভহ ভাঙ্গন। সম্প্রতি ডংনালা সড়কের উপরপাড়া ব্রীজের রিটার্নিং ওয়াল ধসে গেছে।  গ্রামের উপজাতীয় নিরিহ অধিবাসীর ঘরবাড়ি এবং আবাদি জমি বিলীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বন্ধ হয়ে গেছে ডংনালা বিলে বোরো মৌসুমের চাষাবাদ। আমন মৌসুমে দেখা দেয় পাহাড়ি ঢলের বন্যাজনিত দুর্যোগ। জমির বুক চিড়ে জোরপুর্বক কৃষকের আবাদি জমির উপর রাস্তা করে বালি বোঝাই ভারি ট্রাক চালিয়ে জমির প্রকৃতি নষ্ট করছে।

প্রতিদিন ২০ টি ট্রাকে কমপক্ষে ৫ হাজার ঘনফুট বালু ডংনালা খাল হতে পাচার করা হচ্ছে। বালি বোঝাই ভারি ট্রাকের চাপে ডংনালা থেকে রাইখালি বড়খোলা পর্যন্ত ১০/১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়কের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। ফলে চরম দুর্ভোগের হয়ে উঠেছে এ সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপজাতীয় এলাকাবাসীর আপত্তির কোন পাত্তা দেয়না বালু সন্ত্রাসীরা।

অভিযোগ পাওয়া যায়, সরকার দলীয় নেতা কর্মীর দাপটে বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট প্রতিদিন নির্বিঘ্নে পাচার করছে ডংনালা খালের বালু। পরিবেশ, প্রকৃতি এবং স্থানীয় রাস্তঘাট এবং পুল কালভার্টের অস্তিত্ব রক্ষা করতে ডংনালা খালের বালু উত্তোলন ও পাচার বন্ধে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের দাবি ডংনালা গ্রামের উপজাতী মানুষের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন