খাগড়াছড়িতে বাঙালী ছাত্র পরিষদের সমাবেশ ও হরতালের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী: জনমনে বিভ্রান্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইউপিডিএফ ও জেএসএসসহ আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠনগুলোর অপহরণ, খুন, গুম, চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে আগামী রবিবার(২১ মে) খাগড়াছড়িতে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত মহাসমাবেশের দিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ জেলা কমিটির একাংশ।
এদিকে একই দিন বাঙালী ছাত্র পরিষদের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী ঘোষণায় শহর জুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনটির জেলা কমিটির একাংশ রবিবার হরতাল ঘোষণা করে হরতাল সফল করতে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবীকারী মো. মাঈন উদ্দীন। পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ইঞ্জিয়ার আলকাস আল মামুন ভুঁইয়ার দাবী মাইনুদ্দীন জেলা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি এবং সভাপতি হলেন ইঞ্জিনিয়ার লোকমান হোসেন ভুঁইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর এস এম মাসুম রানা, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা কামাল, জেলা যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, জেলা সহ সাংগঠনিক পারভেজ আলম, জেলা সহ সাংগঠনিক আশ্ররাফুল রণি, দপ্তর সম্পাদক বাবু মৃদুল বড়ুয়া, জেলা প্রচার সম্পাদক শাহীন আলম, পৌর সভাপতি মো. রাশেদুল ইসলাম, কলেজ সভাপতি ওমর ফারুক ভারপাপ্ত ও কলেজ সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাতসহ অন্যান্য উপজেলা এবং সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে এস এম মাসুম রানা বলেন, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের জেলা কমিটি ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২১ মে খাগড়াছড়ি জেলার সকল উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, এখন একটি মহল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের জেলা, উপজেলা ও সকল অংগকে বাদ দিয়ে বাঙালিদের নাম ভাঙ্গিয়ে পকেট ভারী করার জন্য তথাকথিত কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করে মানুষের মাঝে বিভ্রাান্তি তৈরী করার চেষ্টা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটিতে নির্যাতিত বাঙালীর ব্যানারে আয়োজিত মহাসমাবেশ ব্যাপকভাবে সফল হলে তার ধারাবাহিকতায় পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ ও নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি খাগড়াছড়িতে একই ধরণের একটি মহাসমাবেশ আয়োজনের ডাক দেয়। শুরুতে এই আয়োজন জেলার মধ্যে ব্যাপক সাড়া দিলেও পরবর্তীকালে এই সমাবেশে জেলার একজন বহুল আলোচিত সমালোচিত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সংশ্লিষ্টতার কথা প্রকাশিত হওয়ায় ওই প্রতিনিধির বিরোধী নিজ দলের ও প্রতিপক্ষ দলের একাধিক গ্রুপ সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা এ ধরণের সমাবেশে যোগ দিয়ে ওই জনপ্রতিনিধি যেন আরো শক্তিশালী হতে না পারে তা ঠেকাতে বাঙালী ছাত্র পরিষদের একাংশকে মাঠে নামায় সমাবেশ বাঞ্চাল করার জন্য। এ ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে জেলা কমিটির একাংশের ডাকা রবিবারের হরতাল প্রসঙ্গে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলকাস আল মামুন ভুঁইয়া পার্বত্যনিউজকে বলেন, যারা এই হরতাল ডেকেছে তাদের এই কর্মসূচী ডাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। কারণ এই সংগঠনের একটি চেইন অভ কমান্ড ও গঠনতন্ত্র আছে। এ ধরণের কর্মসূচী ডাকার আগে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দরকার ছিলো কিন্তু তারা তা নেয়নি। এমনকি জেলা কমিটির সভাপতির অনুমোদনও নেয়নি। কাজেই এই কর্মসূচীর কোনো বৈধতা নেই।
এদিকে রবিবারের কর্মসূচীর এখনো অনুমতি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান আবদুস সামাদ মোড়ল। তিনি পার্বত্যনিউজকে বলেন, একটি আবেদন পেয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আলকাস আল মামুনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে, অনুমতি পাওয়া গেছে। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধানের বক্তব্য তাকে জানানো হলে তিনি বলেন, আমাকে আরেকটু খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।
বর্তমান প্রেক্ষিতে কর্মসূচী অব্যাহত রাখবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আমাদের কর্মসূচী চলবে। প্রয়োজনে যারা হরতাল ডেকেছে তাদের সাথে আগামীকাল বৈঠক করে সমন্বয় করা হবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।