নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণ

গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে সীমান্তের ৮ গ্রামের কৃষক

fec-image

বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণ এখন নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার সীমান্তবর্তী ৪৩ থেকে ৪৭নং পিলার এলাকায় ১৫ দিন ধরে এ ঘটনা বেশি ঘটেছে। ফলে জামছড়ি থেকে বামহাতিছড়া পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এলাকায় কোথাও না কোথায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে।

সীমান্তের বাসিন্দা আবদুর ছালাম এই প্রতিবেদককে জানান, এ সীমান্তে গ্রাম রয়েছে ১২টি। তন্মধ্যে ঝুঁকিতে আছে ৮টি। এ গুলো হলো জামছড়ি, সাপমারাঝিরি, চেরারমাঠ, নুরুল আলম কোং বাগান এলাকা, কক্সবাজার পাড়া, জারুলিয়াছড়ি, ফুলতলী ও বামহাতির ছড়া। তারা এখন বিপাকের এ গৃহপালিত প্রাণিসম্পদ নিয়ে।

জানা যায়, এ সব গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে এখন স্থলমাইন বিস্ফোরণে, আগে ভাঙতো গোলাগুলির আওয়াজে।

নাইক্ষ‍্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণাধীন ৮নং ওয়ার্ড জামছড়ির বাসিন্দা মো. রহমান জানান, ৪৫নং সীমান্ত পিলার এলাকায় ভোর ৫টা ২৯ মিনিটের সময় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ১টি স্থলমাইন বিস্ফোরণের শব্দ ঘুমন্ত মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আবার সকাল ৭টা ০৩ মিনিটের সময় ৪৬-৪৭নং সীমানা পিলারের মাঝখান দিয়ে আরো একটি বিকট শব্দ পাওয়া যায়। যার ফলে স্থানীয় অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

চাকঢালা ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ফরিদ জানান, সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১১টা পযর্ন্ত তিনি মোট তিনটি মাইন বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তবে আওয়াজ গুলো কত নম্বর পিলার দিয়ে এসেছে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। কারণ সবতো পাহাড়ি জনপদ।

সীমান্তের একাধিক সচেতন ব্যক্তি জানান, স্থলমাইন তাদের কাছে এখন বড় সমস্যা। কারণ, গরু-ছাগল অবুঝ প্রাণি। তারা কখন গিয়ে আবার স্থলমাইনের কবলে পড়ে সেজন্য আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মনে।

কেননা চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী তারা পাহাড়ে তাদের গরু-মহিষ-ছাগল চরতে দেয়। পাহাড়ি জঙ্গল বা ঘাস খেয়ে গরু-মহিষ গুলো গোয়ালে ফিরে আসে সন্ধ্যায়। এখন সে সুযোগ আর নেই। স্থলমাইন তা বন্ধ করে দিয়েছে তাদের। কখন আবার তাদের গরু-মহিষ-ছাগল সেদিকে যায়, স্থলবিষ্ফোরণে মারা যায়। এই ভেবে তাদের দুঃচিন্তায় রাতে ঘুম হয়না।

এছাড়া ১১ বিজিবি জোয়ানরা সীমান্তে গরু-মহিষ- ছাগল বা স্থানীয়ভাবে চলাচলের গাড়ি যেতে বারণ করে রেখেছে কয়েক সপ্তাহ। এর আগে সাইনবোর্ড টাঙগিয়ে সংযোগ সড়ক গুলো বন্ধ করে দেয় বিগত ৩ মাস। যেন সীমান্ত সড়ক বা জিরো পয়েন্টে লোকজন অবাধে ঘোরাঘেরা না করে। তবে স্থানীয় গ্রামবাসীর নিতান্ত পারিবারিক কাজ করতে বাঁধা নেই এ সব স্পটে।

এ বিষয়ে বিজি্বির কোন দায়িত্বরত কর্মকর্তা এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে রাজি না হলেও তাদের একটি সূত্র দাবি করেছেন, তারা জনস্বার্থে অন্য গ্রাম বা স্থানের লোকজনকে সীমান্তে যেতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ সাইনবোর্ড দেন । যাতে তারা নিরাপদ থাকে, সমস্যা সৃষ্টি না হয়।

অপর দিকে সীমান্ত এলাকার সবচাইতে বেশি স্পর্শকাতর ৩৪ ও ৩৫ পিলার দিয়ে গত ৬ দিন পর্যন্ত কোন প্রকার বিস্ফোরণের শব্দ মিয়ানমার থেকে আসেনি বলে জানান তুমরুর ব্যবসায়ী মো. সরোয়ার আলম।

তিনি বলেন, বিভিন্ন গোলাবারুদের শব্দ তাদের এলাকায় না আসাতে মানুষজন ক্রমান্বয়ে আতঙ্ক মুক্ত হচ্ছেন।

দৌছড়ি ইউনিয়নের সীমান্তের কাছাকাছি থাকা কৃষক মো. কামাল জানান, তাদের বাড়ির কাছের ৫০নং সীমান্ত পিলার এলাকা শান্ত আছে বিগত ১২দিন। এখন সেখানে কিছুটা আতঙ্ক আছে কিন্ত গুলি বা স্থলমাইনের আওয়াজ নেই।

সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবসার ইমন বলেন, গোলাগুলিতে এতো দিন মানুষ ছিলো একধরণের আতঙ্কে। এখন আতঙ্ক স্থলমাইনের। গরু-ছাগল এখন সীমান্ত গিয়ে মাইনের কবলে পড়বে এটা নতুন করে বিপাকে পড়েছে সীমান্তবাসী।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নাইক্ষ্যংছড়ি, বিস্ফোরণ, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন