গুইমারায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঈদ উদযাপন

fec-image

ঈদ শুধু মুসলমানের ধর্মীয় উৎসবই নয়। ঈদ-আনন্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানবতা ও ভ্রাতৃত্বের শক্তি। অমুসলিম প্রতিবেশী বন্ধুও যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়, এটা দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন সকলের।

পার্বত্য এলাকার সাধারণ মানুষের দীর্ঘকালীন অসাম্প্রদায়িক চেতনা ‘ ঈদ উদযাপন করে আসছে। ধর্ম পরিচয়ে নয়- মানুষকে মানুষ হিসাবে দেখা হয় ঈদে। এটাই হওয়া উচিত সবার প্রত্যাশা। ঈদে প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসা, বন্ধুকে ঈদ মোবারক জানানোসহ ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে আন্তরিকতার অসাম্প্রদায়িক ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

ঈদ উৎসবকে অর্থবহ করে তুলতে পারলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তার আপন সৌন্দর্যকে সমুন্নত রাখতে পারবে। ঈদ কিন্তু বড় অর্থে মানবতাকেই সামনে নিয়ে আসে। আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। অনেকটা স্রোতঃস্বিনী নদীর মতো। অমন বেগবান বহতা নদী কোনো বাছ-বিচার করে না। নিজ বুকে নর্দমার পানি, না স্বচ্ছ পানি মিশ্রিত হচ্ছে তা ভাবে না। সব জলরাশিকেই গ্রহণ করে আরও স্ফীত হয়। আরও তীব্র বেগে প্রবাহিত হয়। প্রতি বছর অমন মানবিকতার উদার পরিবেশ পাহাড়ে ঈদ উৎসবকে উজ্জীবিত করে ।

পার্বত্য এলাকায় ছোটরা যেমন কর গুনে গুনে ঈদের জন্য অপেক্ষা করে, একইভাবে দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা আর সরস্বতী পূজার জন্যও দিন গুনে তারা।

তবে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ ধরে রাখতে পারলে এদেশের ধর্ম-বণিক রাজনীতিকদের অপতৎপরতা আর জঙ্গিবাদ কখনো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারবে না বলে মনে করেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসীরা।

সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকয় ঘিরে দেখা যায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঈদ উদযাপনের চিত্র।

সামিয়া আক্তার ৫ম শ্রেণি ছাত্রী। শহিদ লে. মুসফিক বিদ্যালয়ে পড়ে। সে তার চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা বন্ধুদের ‘ঈদ মুবারক’জানিয়েছে।কোলাকুলি করেছে ঈদে। তারাও তাদের বিভিন্ন পূজাতে সামিয়াকে দাওয়াত দেয়। সে তাদের সাথে অনেক আনন্দ করে।

ঈদে স্কুল বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে এসে উসাসিং মারমা জানান, ঈদে তার মুসলিম বান্ধবীদের সে ঈদ মেবারক জানিয়েছে, কোলাকুলি করেছে। একসাথে বেড়াতে গেছে। একসাথে বেড়াতে অনেক মজা হয়। সে মনে করে ঈদের আনন্দ সবার।

সোনামনি চাকমা বলেন, ঈদ, পূজা, খ্রিস্টানদের বড়দিন বা বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা-যে কোনো পার্বণ উপলক্ষ্যে আমরা যদি ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে পরস্পরের জন্য শুভ কামনা করতে পারি, তাহলে তো জয় হবে মানবতারই।

ধর্মরক্ষীতা বৌদ্ধ বিহারের পঞঞাসারা ভান্তে বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব হবে সবার। পার্বত্য এলাকায় দীর্ঘকাল সকল ধর্মের মানুষ মিলে মিশে বসবাস করে আসছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঈদের আনন্দে সবাই খুশি হোক। অনালোকিত জনগোষ্ঠীকে আলোতে আনতে হবে আবহমান বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে।

হাজাপাড়া নুরানি ও হিফয মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা গোলাম মোস্তফা বলেন, আজকে ঈদের নামাজ শেষে আমরা এদেশের সকল ধর্মের মানুষের জন্য দোয়া করেছি। আল্লাহ সকলে ভালো রাখুক। সবাই যদি ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় তাহলে অধুনা ঈদ আনন্দে পার্বত্য এলাকার নাগরিকদের জীবনে অনেক রূপান্তর ঘটবে।

শিক্য মারমা বলেন, আমরা এখানে পাহাড়ি-বাঙালি মিলেমিশে বসবাস করি। ঈদে আমারা মুসলিম প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। তারাও পূজা পার্বণে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বসবাস করি। আনন্দ করি মিলেমিশে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন