গুইমারায় যানজট নিরসন, স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ
খাগড়াছড়ির গুইমারায় সাপ্তাহিক হাটবার মঙ্গলবারে লেগে থাকা যানজটের অবসান হলো। মহাসড়কে বাজারের পণ্য বিক্রি, সকাল বেলা সড়কের উপর গাড়ি লোড-আনলোডের কারণে তীব্র যানজটের এই সমস্যাটা গুইমারার জন্য পুরান ঘটনা ছিলো। অনেকে উদ্যোগ গ্রহণ করেও পারেনি বাস্তবায়ন করতে। অবশেষে বর্তমান গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী অনেকটা সফল হয়েছেন বলে মনে করছেন যানজটের কারণে ভুক্তভোগী লোকজন।
সোমবার থেকে মাইকিং করে গণ সচেতনতা তৈরি সহ মঙ্গলবার সকাল থেকে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সাথে নিয়ে রীতিমতো মহাসড়কে বসা বিভিন্ন পণ্য-ক্রেতা -বিক্রেতা ও পরিবহন চালকদের সচেতনতা করণে বাজারে নানান মুখী কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইউএনও। এসময় তিনি সমতল থেকে আসা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করে বলেন, সকালে নয়, দুপুর বেলায় যাতে পণ্যবাহী গাড়ি লোড করেন।
চট্টগ্রাম থেকে আসা শান্তি পরিবহনের যাত্রী এনজিও কর্মী প্রশান্ত চাকমা বলেন, মঙ্গলবার গুইমারায় যানজট নতুন কোন ঘটনা নয়। গত সপ্তাহে যেমন গরম তেমনই যানজটের কারণে তিনি গাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
তিনি বলেন, এটা চরম ভোগান্তি সকল শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য। যানজট নিরসনে ইউএনওর এমন কার্যক্রম গুইমারার অসুস্থ রোগী তথা চট্টগ্রাম খাগড়াছড়িগামী সকল শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য ভোগান্তি লাগব হবে বলে তিনি আশা করেন ।
মূলত সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার হাটবার। বেশ লোকসমাগম হয় এ বাজারে। বাজারটি বেশ পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী বাজার। হাটবারে দূর দূরান্তের পাহাড়ে উৎপাদিত কৃষি পণ্যসহ নানান কিছু বিক্রি করতে আসা লোকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাড়াঁতে হয় মূল সড়কের পাশে। আবার বেপারিদের ক্রয়কৃত পণ্যও রাখতে হয় মূল সড়কের পাশে। মূল সড়কের পাশে পার্কিং করে পণ্য বোঝাই করা ট্রাক বা পিকাপ। এ কারণে হাটবারে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
বিষয়গুলোকে গভীর পর্যবেক্ষণ করে ইউএনও রাজীব চৌধুরী ভাড়ায় চালিত সিএনজি, অটো, মোটর সাইকেল চালক সমিতির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে যানজট নিরসনে আলোচনা করেন এবং সকাল থেকে দুপুর ২টার পূর্বে মহাসড়তে কোন পরিবহনে মাল বোঝাই না করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
কাঠাল বিক্রেতা কমলা চাকমা বলেন,এরকম নিয়ম হলে আমরা সকাল সকাল মালপত্র নিয়ে চলে আসবো বাজারে। তাহলে সবার জন্য ভালো হবে।
কাঁচামাল ক্রেতা (বেপারী)মোঃ সাদেক মিয়া জানান,অনেক বছর যাবৎ তিনিএ বাজারে ব্যবসা করেন। গাড়ি লোড, আনলোড, কেনা বেচা সব কিছুই যার যার ইচ্ছে মত হয়। সকাল বেলা গাড়ী লোডিং এর কারনে যানজট তৈরি হয় এটা মিথ্যে নয়।বিকাল বেলা লোড হলে যানজট হবে না। তবে বিকাল বেলায় লোড দিয়ে ব্যবসায়ীরা কাঁচা মাল নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁচতে কষ্ট হবে।
পণ্যবাহী ট্রাক চালক মো. মনির হোসেন বলেন, তার গাড়িতে কাঁঠাল লোড করা হয়েছে। পিরোজপুর যাবেন। আজ দুপুরের পরে তার গাড়ি লোড দেওয়া হয়েছে। এর আগে সকালে তিনি লোড করে রাখতেন। গাড়ি ছেড়ে যেতেন সন্ধার পর।দুপরের পরে লোড দেওয়া তার কোনো সমস্যা হয়নি। বরং নিরিবিলি পরিবেশে লোড হয়েছে এটা ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. রিপন বলেন, এ নিয়মে তার কোন সমস্যা নেই, তবে কাঁচা মালের মোকাম সকাল বেলায় হয়। রাতে পৌচতে পারলে সুবিআ হবে। বাজারের লেবার হয়তো কম, যার কারণে দুপুর বেলায় লোড দিলে সিরিয়াল পেতে কষ্ট হয়।
বাজারের পণ্য লোডকারী শ্রমিক সর্দার সাত্তার মিয়া জানান, লোড করতে একটু কষ্ট হলেও এই নিয়মটা সকলের জন্য মঙ্গল হয়েছে।
বাজার পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব শীল বলেন, ব্যবসায়ীদের সাথে তিনি কথা বলেছেন, দুপুর ২টার পর গাড়ি লোড হলে কোন সমস্যা নেই তাদের। তিনি ইউএনওর এমন উদ্যোগ সকলের জন্য ভালো হয়েছে বলে মনে করেন।
এমন উদ্যোগের বিষয়ে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ব্রিজ পর্যন্ত সাপ্তাহিক হাটবারে যে পরিমাণে যানজট হয় এর ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। অনেক সময় জরুরি চিকিৎসার জন্য অসুস্থ রোগী নিয়ে এম্বুলেন্সও পার হতে পারে না। দূরপাল্লার যাত্রী, অসুস্থ রোগী ও স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণের ভোগান্তি লাগব করতে ২টার পর গাড়ি লোড -আনলোড সহ সড়কে হাটের দিন অহেতুক গাড়ি পার্কিং না করতে মাইকিং করা হয়েছে। এটা একটা জনসচেতনতামূলক কাজ বলেও জানান তিনি।