চার বছর ধরে বন্ধ বান্দরবানে বাজার ফান্ড, বিপাকে ব্যবসায়ীয়া
বিগত চার বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে বান্দরবানের বাজার ফান্ড। পার্বত্য জেলা পরিষদ-প্রশাসনের অলিখিত দ্বন্দের মাধ্যমে অকার্যকর হয়ে পড়েছে এই ফান্ড। এর ফলে জেলা শহরে থমকে গেছে পাহাড়ের অর্থনীতি নিয়ে বিপাকে পড়েছে বান্দরবান শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
৩৭ বছর আগে গঠিত এই সংস্থার অধীনে থাকা বর্তমান পর্যায়ের জমির রেজিস্ট্রেশন বন্ধ। ফলে স্থাপনা নির্মাণ এবং ব্যাংক ঋণ সুবিধাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা। সংকট নিরসনে নেই কোন কার্যকারী উদ্যোগ। ব্যবসায়ীদের দাবী এই ফান্ড বন্ধ হওয়ার কারণে কেউ পাচ্ছে লোন। তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবে ব্যবসা প্রসারিত না হওয়ার পাশাপাশি জমির রেজিষ্ট্রেশন বন্ধের ফলে ক্ষুদ্ধ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এই তিন পার্বত্য জেলায় হাটবাজার পরিচালনা এবং উন্নয়নের জন্য ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় বাজার ফান্ড। প্রথমে জেলা প্রশাসন তারপর ১৯৮৯ সালে এটির দায়িত্ব দেয়া হয় জেলা পরিষদের অধীনে। আর জেলা পরিষদ থেকে ইজারার মাধ্যমে জমির মালিকানা সত্ত্ব ভোগ দখল করছে বাজার ফান্ড এলাকায় বসবাকারী বাসিন্দারা। জেলা শহরের চেয়ারম্যান পাড়া, মেম্বার পাড়া, বালাঘাটা, আর্মি পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বাজার ফান্ডের আওতাভূক্ত। এসব এলাকার বাসিন্দাদের জমি বন্দোবস্তি এবং ব্যাংক ঋণের অনাপত্তি পত্রও দেয় এ সংস্থাটি। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে বাজার ফান্ড এলাকায় ব্যাংক লোন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে বাজার ফান্ড এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাজার ফান্ডের জমির মালিকরা জানিয়েছেন, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পরেও এভাবে চলছিল বাজার ফান্ড। কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে অলিখিত ভাবে বাজার ফান্ডের আওতাধীন জায়গা রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। ফলে ঘরবাড়ি ,দোকানপার্ট, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ সবধরণের নির্মাণ কাজ বন্ধ থেকে যায় । তাই কোন প্রকার ঋণ সুবিদাও পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। শুধু বাজার ফান্ড নয় পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য শান্তিচুক্তির মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে পাহাড়ে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে আরো নানা প্রকার জটিলতা।
ওয়েস্টার্ন কাপড়ের মালিক শিমুল দাশ বলেন, দীর্ঘবছর বাজার ফান্ড বন্ধ থাকার কারণে কেউ ব্যবসার লোন পাচ্ছে না। এর ফলে ব্যবসায়ীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। তাই দ্রুত এই ফান্ড খুলে দেওয়ার দাবী জানান।
আরেক ব্যবসায়ী সেলিম আসমদ বলেন, ব্যবসাকে চাঙ্গা করতে গেলে আমাদের ফান্ডের প্রয়োজন হয়। যদি বাজার ফান্ড এইভাবে বন্ধ চলমান থাকে তাহলে বান্দরবানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কিভাবে বাড়বে। তাদের দুই দন্দ্বের কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা লোনের জন্য বিপাকে পড়ে গেছি।
বান্দরবান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এসএভিপি ও শাখা প্রধান সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, বান্দরবান বাজারফান্ডের অধীনে সাত উপজেলায় ১৮টি বাজার এবং প্রায় পাচঁ হাজারের মত জমি বন্দোবস্ত প্লট গ্রহীতা রয়েছে। পাহাড়ের সবচেয়ে মূল্যবান জমি এবং ব্যবসা বাণিজ্যগুলো বাজারফান্ডের অধিনে। রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া ব্যাংক ঋণ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
বান্দরবান চেম্বার অব কমার্সের ভাইস-প্রেসিডেন্ট লক্ষীপদ দাশ জানান, গত ৩ বছরে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি আবেদন পড়েছে ব্যাংক গুলোতে। তাই দ্রুত ঋণ ব্যবস্থাপনা চালু করার মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিচালনার সুযোগ করে দেওয়া আহ্বান জানান তিনি।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাজার ফান্ড প্রশাসক এটিএম কাউছার হোসেন বলেন, জমি ও বাজার ফান্ড রেজিস্ট্রশন নিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং জেলা প্রশাসনের অবস্থান পরস্পর বিরোধী। তবে শীগ্রই চালু হওয়ার আশ্বাস জানিয়েছেন এই কর্মকর্তার।
এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরীজি জানান, জেলা পরিষদের দেয়া ইজারাকৃত এসব জমির মেয়াদ স্বল্প সময়ের জন্য হওয়ায় জমির মালিকানা না থাকায় রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।