জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনায় মিলছে না চিকিৎসাসেবা


বান্দরবান সদরের সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন উপজেলা ও দুর্গম এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত দরিদ্র রোগীরা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু যুগের পর যুগ ধরে চিকিৎসক সংকট নানা অপরিচ্ছন্নতা ও অপব্যবস্থানায় জর্জরিত বান্দরবানের সরকারি হাসপাতাল। এছাড়া ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও কম জনবল ও চিকিৎসক সংকটে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। যার ফলে নানা ভোগান্তি পড়ার অভিযোগ করেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। চিকিৎসক সংকটসহ অব্যবস্থাপনা জর্জরিত বান্দরবানের সরকারি হাসপাতাল।
জানা গেছে, সরকারি এ হাসপাতালে নানা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিরও অভাব। দীর্ঘ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে আলট্রাসনোগ্রাফি। রোগীরা বিনামূল্যে ঔষধ নিতে গেলেও ঠিক মত মিলছে না এ হাসপাতালে। এছাড়াও বাথরুম অপরিচ্ছন্নতা, ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ রোগীরা। বেশিরভাগই সরকারি হাসপাতালে নার্সিং শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। তবে নাই তাদের কোনো অভিজ্ঞতা। সিনিয়র অভিজ্ঞতা নার্সরা কাজ থেকে রেহাই পেতে দেখাচ্ছেন নানা অজুহাত। পুরো হাসপাতাল জুড়ে এখন ময়লা পরিবেশ ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষকে দায় দিচ্ছেন রোগীরা।
রোগীদের অভিযোগ, পানি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। এছাড়াও হাসপাতালের বাথরুম অপরিষ্কার ও ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে রোগীদের বাড়ছে আরো নানা রোগব্যাধি। একটা রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর নানা দুর্গন্ধে নতুন রোগ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয় রোগীদের। হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও সে-সব চিকিৎসক এখনো অভাব রয়েছে। তার পরিবর্তে অন্য অন্য কোন চিকিৎসক মাধ্যমে সেবা নিতে হয়। কিন্তু একটি ঔষধ বদলে অন্য একটি মেডিসিন ধরিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। প্রকৃত ডাক্তার না থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন আলট্রাসনোগ্রাফি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় অনেকের। সে-সব থেকে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই।
সিভিল সার্জন তথ্য মতে, বান্দরবান এই সরকারি হাসপাতালে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মধ্যে চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ১২ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ৪ জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট ২৭ জন মধ্যে রয়েছে ৬ জন, মেডিকেল অফিসার প্রায় ৫০ জন মধ্যে ১১ জন রয়েছে। এছাড়াও মেডিকেল টেকনোলজি ২২ জন, ফার্মাসিস্ট ৩ জন, হেলথ এডুকেটর ২ জন, নার্স ৬৮ জন, ৩য় শ্রেণি ১০ জন, তাছাড়া ৪র্থ শ্রেণি ২০ জন থাকার কথা থাকলেও এসব মিলে রয়েছে মাত্র ১৫ জন। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয় রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি, লামা, আলীদকম, নাইক্ষ্যংছড়ি এই ৬টি উপজেলাতে একই অবস্থা। জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনা রয়েছে প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একমাত্র সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় বিভিন্ন উপজেলা ও দুর্গম এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত দরিদ্র রোগীরা সেবা নিতে আসে এই সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তার দেখাতে রোগীদের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তবুও দেখা মিলেছে না সে-সব রোগের চিকিৎসকদের। ফলে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে দ্বিগুণ টাকা খরচ করে নিতে হচ্ছে সেবা।
অপরদিকে পুরুষ-মহিলা ওয়ার্ডের বাথরুম অবস্থাও পুরাই নাজেহাল। ময়লা- আবর্জনা দুর্গন্ধে থাকতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালে রোগী ঘুমানো বেডের চিত্র একই । ময়লা ভরা নিয়ে একের পর এক বেডে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন কর্মী থাকলেও তারা আছে রাজকীয়ভাবে। কোনো কিছু বলতে গেলে রাগান্বিত হয়ে উঠে বসে মাথা জুড়ে। মহিলা ওয়ার্ডে দিনের পর দিন বাড়ছে রোগীর চাপ। বিছানা না পেয়ে ফ্লোরে নিতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
বান্দরবান সদর হাসপাতালে আবাসিক কর্মকর্তা (আর এমও) মো. তারেকুল ইসলাম বলেন, কোন সমস্যা কথা জানালে আমরা দ্রুতভাবে সমাধান করার চেষ্টা করি। আর রোগীদের কোনো লিখিত অভিযোগ দিলে সেটি ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, অব্যবস্থাপনা যেটা সেটি পুরো দেশে প্রতিটি হাসপাতালে থাকে। আর আমাদের কাছে যখন কোন অব্যবস্থাপনা অভিযোগ আসে তখন চেষ্টা করি দ্রুত সমাধান করতে বা কি কারণে এই অব্যবস্থাপনা হচ্ছে সেটি খুঁজে বের করে সমাধান করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
















