জাতিসংঘকে বাংলাদেশ: ‘রোহিঙ্গা স্থানান্তর সমর্থন করো, নইলে দেশ ছাড়ো’
ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উপর পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ তিনি চান, রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরের বাংলাদেশের যে পরিকল্পনা, তাতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সমর্থন দিক, নইতো (সংস্থাগুলো) দেশ ছেড়ে চলে যাক৷
ডিডাব্লিউ: অধিকাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থীই মিয়ানমারে ফিরতে চায় না৷ সে কারণেই কি আপনারা তাদের ভাসান চরে সরাতে চাইছেন?
একে আব্দুল মোমেন: আমার মনে হয় রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে পাঠানোর এখনই সময়৷ তবে ঐ দ্বীপে সব রোহিঙ্গাকে পাঠানো সম্ভব নয়৷ আমরা মাত্র এক লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে পাঠাতে পারি৷
আমরা তাদের জোর করে পাঠাতে চাই না৷ আমরা আশা করেছিলাম, তারা স্বেচ্ছায় সেখানে যাবে৷
দ্বীপে শরণার্থীরা অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে৷ কিন্তু কক্সবাজারে কাজ করা ত্রাণ সংস্থাগুলো ভাসান চরে যেতে চায় না৷ কক্সবাজারে তারা পাঁচ তারকা হোটেলে থাকতে পারেন, তাই তারা অন্য জায়গায় যেতে চান না৷
আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার মধ্যে যারা রোহিঙ্গা ইস্যুকে রাজনীতিকরণ করতে চাইছে আমরা তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি৷
ডিডাব্লিউ: তার মানে কি এই যে, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো আপনাদের পরিকল্পনা সমর্থন না করলেও আপনারা রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে পাঠাবেন?
হ্যাঁ, সম্ভবত৷ আমরা অনেক লিফলেট, সিডি ও ভিডিও জব্দ করেছি, যেগুলোতে রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট কিছু দাবি না মানলে মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কিছু দাবি মানতে রাজি হয়েছে, যেমন নিরাপত্তা দেয়া ও চলাফেরার অনুমতি৷ তবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দেয়া, রোহিঙ্গাদের এথনিক গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া এবং রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের ঘরবাড়িতে ফেরার অনুমতি দেয়ার মতো দাবি মানা হয়নি৷
ডিডাব্লিউ: জাতিসংঘের সমর্থন ছাড়া কি বাংলাদেশ এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে সরাতে পারবে?
আমরা তা করতে পারবো৷
ডিডাব্লিউ: জাতিসংঘ কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে?
জাতিসংঘকে এই পরিকল্পনা মেনে নিতে হবে, নয়তো তারা রোহিঙ্গাদের তাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে৷ এই মানুষদের অনেকেই ইতিমধ্যে অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছে৷
ঐ এলাকায় রোহিঙ্গাদের সংখ্যা স্থানীয়দের প্রায় দ্বিগুন৷ স্থানীয়রা নিয়মিত অপরাধমূলক কার্যক্রমের অভিযোগ করছে৷ আমরা তা হতে দিতে পারি না৷ সে কারণে আমরা তাদের ভাসান চরে যেতে বাধ্য করতে পারি৷
বাংলাদেশ ধনী রাষ্ট্র নয়৷ আমরা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্র৷ এরপরও আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক কিছু করেছি৷ এখন অন্যদের এগিয়ে আসতে হবে কারণ এটা শুধু আমাদের সমস্যা নয়৷ এটা একটা আন্তর্জাতিক ইস্যু৷ আমরা যদি তাদের নিরাপত্তা না দিতাম, তাহলে তারা গণহত্যার শিকার হতে পারতো৷
ডিডাব্লিউ: এটা হুমকির মতো শোনাচ্ছে৷
আমরা তাদের যে কোনো জায়গায় পাঠাতে রাজি, যে কারও কাছে, যারা তাদের নিতে চায়৷ তাদের অনেক বছর রাখার সামর্থ্য আমাদের নেই৷
ডিডাব্লিউ: যদি তা না ঘটে, তাহলে কি রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে যেতে হবে?
এটা একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা৷ আমরা তাদের চিরদিন রাখতে পারি না৷
ডিডাব্লিউ: জাতিসংঘের বিরোধিতা করার সামর্থ্য কি বাংলাদেশের আছে?
জাতিসংঘ আমাদের বেশি সাহায্য করছে না৷ তারা মিয়ানমারের রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারছে না৷ জাতিসংঘের এই সংস্থাগুলো কেন মিয়ানমারে কাজ করছে না? তাদের মিয়ানমারে যাওয়া উচিত, বিশেষ করে রাখাইনে৷ সেখানে এমন পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যা রোহিঙ্গারা ফিরতে সহায়তা করতে পারে৷ জাতিসংঘের কাছ থেকে আমরা যে কাজ প্রত্যাশা করি, তা জাতিসংঘ করছে না৷
ডিডাব্লিউ: জাতিসংঘের সংস্থাগুলো যদি আপনাদের পরিকল্পনা সমর্থন না করে তাহলে কি আপনারা তাদের তাড়িয়ে দেবেন?
যদি প্রয়োজন হয়, আমরা তা-ই করবো৷
ডিডাব্লিউ: দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ৷ সেটি কি মানুষের বসবাসের উপযোগী?
এটা নিরাপদ৷ আমরা সেখানে সুন্দর বাড়ি ও বাঁধ নির্মাণ করেছি৷ আমরা যদি বাংলাদেশিদের সেখানে যেতে বলি তাহলে তারা নিশ্চয় যাবে৷
ডিডাব্লিউ: রোহিঙ্গারা যদি ভাসান চরে যায় তাহলে কি তারা ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতে পারবে, নাকি তাদের ঐ দ্বীপেই থাকতে হবে?
আমার মনে হয় তারা ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরা করবে৷
নাওমী কনরাড ও আরাফাতুল ইসলাম ২৬ আগস্ট, ২০১৯ ঢাকায় সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন৷