জাতিসংঘে বিতর্কিত বক্তব্য রাখায় সন্তু লারমার নাতনির সমালোচনায় মুখর সোশ্যাল মিডিয়া

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প ও পুনর্বাসিত বাঙালিদের পার্বত্য এলাকার বাইরে প্রত্যাহারসহ জাতিসংঘে একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছেন সন্তু লারমার নাতনি অগাস্টিনা চাকমা।

জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আদিবাসী বিষয়ক ফোরামের ২৪তম অধিবেশনে জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এসব দাবি জানান।

গত ২১ এপ্রিল নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে চলমান জাতিসংঘের স্থায়ী আদিবাসী বিষয়ক ফোরামের (UNPFII) ২৪তম অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে অগাস্টিনা চাকমা যোগ দেন। এতে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ট্রাইবাল নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেও বক্তব্য দেন।

দেশে টানা ২৮ বছর প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগকারী সন্তু লারমার নাতনি অগাস্টিনা চাকমা এ নিয়ে পরপর তিন বছর এ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখলেন।

২১ এপ্রিল অধিবেশনের ৫(ই) নং এজেন্ডা: আন্তঃআঞ্চলিক, আন্তঃপ্রজন্ম ও বৈশ্বিক সংলাপ ‘আদিবাসী নারীদের অধিকার’ বিষয়ে বক্তব্য প্রদানকালে অগাস্টিনা চাকমা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ১৯৯৭ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে আদিবাসী জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, ভারতে আশ্রিত জুম্ম উদ্বাস্তু ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত জুম্ম পরিবারসমূহকে পুনর্বাসন, সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য এলাকার বাইরে সম্মানজনকভাবে প্রত্যাহার এবং পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে কার্যকর ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়ায় ‘আদিবাসী’ নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন শেষ হবে ২ মে। সম্মেলনে পিসিজেএসএসের পক্ষে অগাস্টিনা চাকমা ছাড়া আরও দুজন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। তারা হলেন চঞ্চনা চাকমা এবং মনোজিত চাকমা। এছাড়াও সভায় নিচ্ছেন কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা, বিনোতাময় ধামাই এবং টনি চিরান।

পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। এতে আরো উপস্থিত আছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) অনুপ কুমার চাকমা।

অগাস্টিনা চাকমা তার বিবৃতিতে বলেন, ‘১৯৯৭ সালের চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (সিএইচটি চুক্তি) বাস্তবায়নের সঙ্গে আদিবাসী জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের গভীর সংযোগ রয়েছে।

কিন্তু সিএইচটি চুক্তি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ায়, আদিবাসী জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন এখনো অর্জন করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, ‘২০২৪ সালে মুসলিম বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা ১২টি জুম্ম নারী ও মেয়েদের প্রতি যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনায় ১৬ জন জুম্ম নারী ও মেয়ে প্রতিসহিংসতার শিকার হয়েছে।

এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের কয়েকজন গ্রেফতার হলেও দুর্বল অভিযোগ ও পুলিশের দুর্বল ভূমিকার কারণে গ্রেপ্তারের কয়েকদিন পর জামিনে মুক্তি পায় আসামিরা। সুতরাং, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোন ব্যক্তি এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করেনি। বিচারিক কার্যক্রম থেকে মুক্তি পাওয়ার সংস্কৃতির জন্য সিএইচটি পাহাড়ে জুম্ম নারী ও শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।’

স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাসকারী সন্তু লারমার এই নাতনি আরো বলেন, ‘সিএইচটি আদিবাসী মহিলাদের অধিকারের ব্যাপারে, স্থায়ী ফোরামকে অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে যা সিএইচটি-তে দুর্বল আদিবাসী মহিলাদের তাদের অধিকার সহ রক্ষা করতে পারে এবং তা করতে, স্থায়ী ফোরামকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

জতিসংঘের সদরদপ্তরে দেয়া অগাস্টিনা চাকমার এসব বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। সেখানকার বাঙালি নেতৃবৃন্দ অগাস্টিনা চাকমার এসব বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেন, অগাস্টিনা চাকমা সম্পর্কের দিক থেকে সন্তু লারমার নাতনি হলেও তার জন্ম এদেশে নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা চাঁদার টাকায় তার পরিবার কানাডায় বিলাসী জীবনযাপন করে। সেখানেই তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। বিকিনী পরে তার যেসব ছবি নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে সেসব পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা বা অন্য কোনো জনগোষ্ঠির কৃষ্টি কালচারের সাথে যায় না।

বাংলাদেশে যেহেতু কোনো আদিবাসী নেই, তাই জাতিসংঘের আদিবাসী ফোরামে জেএসএসের প্রতিনিধি দল কীভাবে যায় সেই প্রশ্ন তুলে নেতৃবৃন্দ বলেন, এটা রাষ্ট্রের দুর্বলতা। যে দেশে কোনো আদিবাসী নেই, সেই দেশ থেকে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনোভাবেই জাতিসংঘের আদিবাসী ফোরামে প্রতিনিধি পাঠানো রহিত করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন