পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সকল সরকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে- দেবাশীষ রায়

fec-image

চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেছেন, আমি কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের আগমন উপলক্ষে বলেছিলাম যে, যে নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং তৎকালীন আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে জেডি লারমা ওরফে সন্তু লারমা চলে এসেছেন, ভারতে আশ্রিত শরণার্থীরা চলে এসেছেন, উনি সেটা করতে পেরেছেন এবং এখন যে কিছু রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংঘাত, কিছু আইন-শৃঙ্খলা জনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা রয়েছে আমি মনে করি এটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য কিছু না।

তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী সুনজর দেবেন আমাদের অঞ্চলে। এ সংঘাত কিছু না। এখানে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সকল সরকারী সংস্থার সকলের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে, দক্ষতা বজায় রাখতে হবে। তা না হলে কিন্তু হবে না। আমি আশাবাদী, সময় লাগতে পারে। অনেক ধরনের দলের কথা বলেছে, চারটা-পাঁচটা, আমি মনে করি ১৬টা দলও যদি হয় তথাপিও আস্থা রাখি যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যথার্থ শান্তি আনতে পারব আমরা।

রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দানোত্তম কঠিন চীবর দান শুরু উপলক্ষে চাকমা সার্কেল চিফ উপরোক্ত কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকালে বেইন ঘর এবং চরকায় সূতা কেটে উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। এ সময় পূণ্যার্থীদের সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত পুরো রাজবন বিহার প্রাঙ্গণ। আগামীকাল শুক্রবার বিকালে ভিক্ষু সংঘের কাছে এই চীবর দান করা হবে। এ উৎসবকে ঘিরে বসেছে গ্রামীন মেলা।

রাজবন বিহারের কার্যকরী কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, রাজবন বিহারের বিশাল এলাকা জুড়ে প্রায় ৩৯২ টি চরকা ও ১৯৬ টি বেইন স্থাপন করা হয়। এতে শতাধিক মহিলা-পুরুষ এই চীবর প্রস্তুত কাজে অংশ গ্রহণ করে। তিনি আরো বলেন, উৎসবকে ঘিরে যথাযথ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় আরো বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছরও দেশের বাইরে থেকে কিছু সংখ্যক বিদেশী পূণ্যার্থী এসেছেন। কিন্তু এই বছর একটু জটিলতার কারণে বিদেশ থেকে পূণ্যার্থী আসতে চাইলেও আসতে পারেননি। তাই তিনি আগামী বছর থেকে বিদেশী পূণ্যার্থীরা যাতে সহজে আসতে পারেন তা ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান করেন।

দেবাশীষ রায় বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রতি বছর লাখো মানুষের সমাগম ঘটে রাজবন বিহারে। অনুষ্ঠান যাতে সুষ্ঠু ও শান্তি-শৃংখলাপূর্ণ পরিবেশে শেষ হতে পারে, সেজন্য সবার আন্তরিক সহযোগিতার কামনা করেন তিনি।

দেবাশীষ রায় বলেন, পরমপূজ্য বনভান্তের স্বর্গীয় অনুভুতি থেকে সর্বপ্রথম ১৯৭৩ সালে রাজবন বিহারে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা বের করে বুনন, রংকরণ ও সেলাইসহ কাপড় তৈরি শেষে দানকার্য সম্পাদন করা হয়। একমাত্র বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজবন বিহার এবং শাখা বন বিহার ছাড়া বিশ্বে আর কোথাও বিশাখা প্রবর্তিত হাজার বছরের নিয়মে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এ মহাপুণ্যাযজ্ঞ সম্পাদন হয় না। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রংকরণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেছিলেন।

উল্লেখ্য, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে, সূতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় তাঁতে কাপড় বুনে চীবর তৈরি করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে এর নাম কঠিন চীবর দান। পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধরা এ উৎসব পালিত হয় প্রাচীন নিয়মে। প্রাচীন নিয়ম মতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরি করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উৎসর্গ করা হয়।

বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরির প্রচলন করেছিলেন। প্রতি বছর আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস শেষে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর দান করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সাল থেকে বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে ৪৬ বছর ধরে কঠিন চীবর দান উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, জগতে যত প্রকার দান রয়েছে তার মধ্যে এ চীবর দানই হচ্ছে সর্বোত্তম দান। ২৪ ঘন্টার পরিশ্রমে তৈরি করা এ চীবর চাক্মা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় পার্বত্য ধর্মীয় গুরু বনভান্তের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শুক্রবার ভিক্ষু সংঘের নিকট এ চীবর উৎসর্গ করবেন। রাতে রাজবন বিহারে ফানুষ উড়িয়ে শেষ হবে এ কঠিন চীবর দান উৎসব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন