পরিবারের সদস্যদের মিজোরামে পাঠিয়ে দুর্গম পাহাড়ে সশস্ত্র আস্তানা গেড়েছিল কেএনএ’র নি/হত কমান্ডার সাংমিন বম


পরিবারের সদস্যদের মিজোরামে রেখে পাহাড়ে এসে বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সশস্ত্র আস্তানা গেড়েছিল কেএনএ’র কথিত কমান্ডার সাংমিন বম। কেএনএ’র কমান্ডার সাংমিন বম চীফ কালেক্টরের পাশাপাশি সংগঠনের জন্য নতুন সদস্যও সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করত। সে কেএনএ সদ্স্য হিসেবে যুক্ত হবার পর তাকে ভারতের মণিপুর থেকে দেড় মাসের অস্ত্র চালনা কৌশলগত প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানায়।
গতকাল ৩ জুলাই ২০২৫ বৃহস্পতিবার বান্দরবানের রুমায় সেনাবাহিনী অভিযানকালে বন্দুক যুদ্ধে নি/হত কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ’র সশস্ত্র শাখার কুকি-চীন ন্যাশনাল আর্মি কেএনএ’র সক্রিয় ২ সদস্য’র মধ্যে সাংমিন বম (২৭) রুমা উপজেলায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডর মুয়ালপি পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা এবং অন্য জনের নাম- লাল হিম সাং বম (২৫)। সে রুমা উপজেলায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডর মুননোয়াম পাড়া স্থায়ী বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাংমিন বম কেএনএ’র কমান্ডার ও চীফ কালেক্টর। তার পাশাপাশি সংগঠনের নতুন সদস্যও সংগ্রহের দায়িত্বও পালন করছিল। তার পরিবারের সবাইকে গতবছর মিজোরামে রেখে আসে। সাংমিন বম কেএনএ সদ্স্য হিসেবে যুক্ত হবার পর তাকে ভারতের মণিপুর থেকে দেড় মাসের অস্ত্র চালনা কৌশলগত প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে জানা যায়।
সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএ’র কথিত কমান্ডার সাংমিন বম এর নেতৃত্বে সম্প্রতি পাইন্দু ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জুরভারং পাড়া পার্শ্ববর্তী একটি গহীন জঙ্গলে আস্তানা গাড়তে চেয়েছিল। স্থানীয়দের সহযোগিতা না পাওয়ায় ওখান থেকে চলে আসে নিজ বাড়ি মুয়ালপি পাড়া পার্শ্ববর্তী এলাকায়। আস্তানা গেড়েছিল এখানেই।
গত বৃহস্পতিবার সকালে কেএনএ’র আস্তানায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে নিরাপত্তা বাহিনী। এই সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও কেএনএ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এতে কেএনএ’র এই ২ জন নি/হত হয়, ১ জন সন্ত্রাসী আটক এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। আটক লালসাং পাস্সান বমকে রুমা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানা যায়
রুমা সদর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর-পূর্ব দিকে পাইন্দু ইউনিয়নের দুর্গম পলিপাংশা পাড়া ও মুয়ালপি পাড়া মাঝখানে তাইদাংমক এলাকার এ সফল অভিযানে সেনাবাহিনী যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে, ধারণা করা হচ্ছে উদ্ধারকৃত রাইফেলটি ব্যাংক ডাকাতির সময় পুলিশের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়া অস্ত্রগুলোর একটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেএনএফ হচ্ছে, কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট । এর সশস্ত্র শাখার নাম- কেএনএ (কুকি-চীন ন্যাশনাল আর্মি) । এ সশস্ত্র সংগঠনটি তিন পার্বত্য জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, বিলাইছড়িসহ ৯টি উপজেলা নিয়ে কুকি-চীন জনগোষ্ঠীর স্ব-শাসিত অঞ্চল দাবি করে।
২০১৯ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে কাচিন স্টেটে কেএনএফ এর প্রথম ব্যাচ সশস্ত্র প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে। পরে জঙ্গি (জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া) সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়ার অভিযোগে ২০২২ সালে আগস্টে এই সশস্ত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে রেপিট একশান ব্যাটেলিয়ন(RAB) এর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে যৌথবাহিনী।
স্থানীয়দের সূত্র অনুযায়ী, কেএনএফ’র সশস্ত্র শাখার সন্ত্রাসীরা গত বছর ২ এপ্রিল ও ৪ এপ্রিল সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের রুমা ও থানচি উপজেলার তিনটি শাখায় ব্যাংক ডাকাতি, আনসার-পুলিশের অস্ত্র লুট ও ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে মুক্তিপণ নিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থাপককে ছেড়ে দিলেও লুট করে নিয়ে যাওয়া অস্ত্রগুলো ফেরত দেয়নি কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এরপর শান্তি আলোচনা বন্ধ হয়ে যায় । এতে কেএনএফ’র সশস্ত্র অস্থিরতা ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করতে থাকে। বিভিন্ন সময় এই অভিযানে ৭ জন নিরাপত্তা সদস্যসহ মোট ২৫ জন কেএনএফ সদস্য নি/হত হয়।
ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৮৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্প্রতি কেএনএফ এর কথিত মেজর রোয়ালিন বম ও লালপেক তার বম সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।