পর্যটকরা এবার ক্যাবল কারে যাবে মহেশখালী আর সি-প্লেনে ছড়ে সেন্টর্মাটিনে


পর্যটকদের কক্সবাজারে এলে সমুদ্র ছাড়া তেমন কিছু দেখার সুযোগ থাকে না । একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে গিয়েও নীল জলরাশিতে গা ভেজানো ও ৩ ঘণ্টার জাহাজ ভ্রমণের মজা ছাড়া কিছু নেই। এবার কক্সবাজারের দুই দ্বীপের পর্যটন খাতকে রাঙিয়ে তুলতে যুক্ত হচ্ছে ক্যাবল কার ও সি-প্লেন।
আগামী ৬ বছরের মধ্যে পাখির চোখে পাহাড়-পর্বত দেখতে দেখতে ক্যাবল কারে চড়ে মহেশখালী এবং সাগরপথে নীল তিমির বেশে সেন্টমার্টিন যাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় নিজ কার্যালয়ে কউক চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু মাইলস্টোন আছে। সেই মাইলস্টোনের মধ্যে পরিকল্পনা রয়েছে কক্সবাজার টু মহেশখালী ও কক্সবাজার টু টেকনাফ ক্যাবল কারের ব্যবস্থা করা। সাবরাং ট্যুরিজম অংশে চালু হবে আন্ডার ওয়াটার অ্যাকুরিয়াম। এবং কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাবে সি-প্লেন। কক্সবাজারে আমরা ক্লোজড ট্যুরিজম চালু করব। এছাড়াও আমরা অনেক আবাসন প্রকল্প রেখেছি। চারপাশের ট্রাফিক ব্যবস্থায় হয়রানি রোধে সংযোগ যোগাযোগ সড়ক বৃদ্ধি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কক্সবাজারে আসা পর্যটকরা সকাল বেলায় হাঁটা-চলার পরও দুপুর কিংবা রাত্রিবেলা ঘুরে বেড়ানোর জন্য বিনোদন ও সিনেপ্লেক্সের ব্যবস্থা করা হবে। এক কথায় ‘আমার কক্সবাজার আমার গর্ব’— স্লোগানে কক্সবাজার সাজিয়ে তুলে এবং উন্নত রূপ দিয়ে এগিয়ে নিতে চাই। শুধু সরকারের টাকায় এ সব করতে হবে এমন কথা নেই। এই মুহূর্তে আমাদের তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারি এবং ইউক্রাইন সংকট। এগুলোর কারণে সব দেশের মতো আমাদের দেশেও বাজেট কম হচ্ছে। এক্ষেত্রে কিছু আমাদের, কিছু সরকারের এবং কিছু বিদেশি অর্থায়নের মাধ্যমে এসব উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে পারব।’
কক্সবাজারের প্রতিটি উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে কক্সবাজারের প্রত্যেক সেক্টরের স্টেকহোল্ডার, বিভিন্ন পর্যটন সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, উপজেলা-জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সচেতন মহলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করা হবে বলে জানিয়েছেন কউক চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার।
বর্তমানে কক্সবাজারে দেশীয় পর্যটকরা আসছেন। তবে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কউক চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, ‘বিদেশি পর্যটক না আসলে কখনো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে হবে এবং তাদের নিশ্চিয়তা দিতে হবে যে, কক্সবাজারে তাদের নিরাপত্তাসহ যথেষ্ট বিনোদনের সুবিধা রয়েছে। তাই তাদের জন্য আলাদা পর্যটন জোন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কথা মাথায় রেখে আমরা ৩০টি প্রজেক্ট নিয়েছি, যা তাদের বিনোদনের সহায়ক হবে। ১২০ কিলোমিটার সৈকতে বিদেশিদের বিশেষ জোন এবং দেশীয়দের জন্য আলাদা জোনের ব্যবস্থা করা হবে। কক্সবাজারের নিরাপত্তার বিষয়ে সরকার যথেষ্ট সজাগ। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থা এবং অন্যান্য বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত এবং উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে সমর্থন জানিয়েছেন একাধিক পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী।
ট্যুর অপারেটরস্ অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর প্রধান উপদেষ্টা মফিজুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কক্সবাজারকে পরিকল্পনা মাফিক ট্যুরিজম স্পট করার জন্য আমাদের ভূমিকা থাকবে। তবে সেক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে সামঞ্জ্যতা রেখে কাজ করতে হবে। ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যত্নবান হয়ে এবং পরিবেশ ও পর্যটনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা গ্রহণ করলে নিশ্চয় সেটা পর্যটনখাত এবং বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে। আমাদের দাবি থাকবে কউক চেয়ারম্যান এসব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর আগে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, যারা পর্যটন নিয়ে কাজ ও গবেষণা করেন; তাদের সঙ্গে যেন মতবিনিময় করেন।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভিশনের মধ্যে রয়েছে পর্যটন প্রসার, সুনীল অর্থনীতি সম্পদ ব্যবহার করা, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজনের উপর ফোকাস, বঙ্গোপসাগরে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাজে লাগানো, রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের দিকে নজর রাখা।