পাহাড়ি নারীর ইজ্জতের মূল্য মাত্র ১০ হাজার টাকা: জেএসএসের এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ

fec-image

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার কনটেন্ট ক্রিয়েটর উপমা চাকমা এপ্রিল মাসের শুরু থেকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার কেদারমারা মধ্যম পাবলাখালি এলাকার বাবুল চাকমার পুত্র দিবাকর চাকমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। সম্পর্ক ইতি টানার অভিযোগে দিবাকর চাকমার বিরুদ্ধে মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করেছে, যা স্থানীয় পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামে উত্তাল হয়ে উঠেছে উপমা চাকমা ও দিবাকর চাকমার বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে। স্থানীয় একটি আঞ্চলিক দল, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস, সন্তু গ্রুপ), সম্পর্ক ইতি টানার অভিযোগে দিবাকর চাকমার বিরুদ্ধে মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করেছে, যা স্থানীয় পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিবাকর উপমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং বৈসাবি উৎসবের সময় প্রায় ১৫ দিন একসঙ্গে কাটান। কিন্তু উপমার পরিবার যখন বিয়ের বিষয়ে দিবাকরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তিনি বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান।

এই ঘটনার পর উপমার পরিবার সামাজিকভাবে বিষয়টির সমাধান চাইলে জেএসএস ২২ এপ্রিল খেদারমারা মধ্যম পাবলকখালি একটি প্রথাগত বিচার বসায়। বিচারে দিবাকর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এসময় দিবাকর চাকমার পিতা ও আত্মীয়-স্বজন অবস্থিত ছিল। উপমা ও তার পরিবার বিয়ের দাবিতে অটল থাকলেও, জেএসএস মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে। এই সিদ্ধান্তে স্থানীয় পাহাড়ি নারী-পুরুষ (যুব সমাজ) মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর পাহাড়ি ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এই নিয়ে তোলপাড় শুরু করে। সাধারণ পাহাড়ি নাগরিকরা এই বিচারকে নারীর প্রতি অবিচার হিসেবে দেখছেন। অনেকে উপমাকে প্রথাগত বিচার প্রত্যাখ্যান করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিবাকর চাকমার একটি নগ্ন ছবি ছড়িয়ে পড়ছে। ছবিটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, উপমা চাকমা তার ফেসবুক আইডি ‘Upama Chak Ma’ থেকে ২২ এপ্রিল রাতে একটি পোস্টে আত্মহত্যার হুমকি দেন। পোস্টে তিনি তার মানসিক অবস্থা ও সামাজিক চাপের কথা উল্লেখ করেন। নেটিজেনরা তাকে ধৈর্য ধরতে এবং আত্মহত্যার পথ না বেছে নিতে অনুরোধ করেন।

স্থানীয়রা জানান, দিবাকর চাকমার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক নারী-সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তারা মনে করেন, এই ঘটনায় কঠোর বিচার হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ কমতো। তবে প্রথাগত বিচার ব্যবস্থায় ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে একটি শূকর দান বা ২০ হাজার টাকা জরিমানার মতো নামমাত্র শাস্তি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে, যা নারীদের প্রতি অবিচারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মানবাধিকার কর্মী আরাফাত হোসেন গণমাধ্যামকে বলেন, “যেখানে নারীর ইজ্জতের মূল্য মাত্র ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়, সেখানে নারীর অবস্থান কতটা নাজুক, তা স্পষ্ট। পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের উচিত এই প্রাচীন প্রথাগত বিচার ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে আইনের আশ্রয় নেওয়া।”

অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে দিবাকর চাকমা ও উপমা চাকমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগত বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং নারী অধিকারের প্রতি অবহেলার একটি চিত্র তুলে উঠে এসেছে। স্থানীয় নারী-পুরুষরা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনি সচেতনতা ও ন্যায়বিচারের দাবি জোরালো করছেন। উপমার মতো নারীরা যাতে ভবিষ্যতে প্রতারণা ও অবিচারের শিকার না হন, সেজন্য সমাজের সব স্তরে সচেতনতা ও আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার তাগিদ দিচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন