পাহাড়ে জমি লিজ নিয়ে জেএমবি’র প্রশিক্ষণ ক্যাম্প: ৩ সদস্য গ্রেফতার

fec-image

পাবর্ত্য অঞ্চলে জমি লিজ নিয়ে পুরনো জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছিল। সেখানে তারা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতো।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি’র প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম এ সব তথ্য জানান। এর আগে রবিবার (২৪ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় সিটিটিসি’র স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বিশেষ অভিযান চালিয়ে পুরনো জেএমবির তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন-আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আ. হাদী, হাবিবুর রহমান ওরফে চান মিয়া এবং রাজিবুর রহমান ওরফে রাজিব ওরফে সাগর। এদের মধ্যে আবু রায়হান পুরনো জেএমবির অস্থায়ী আমির বলে জানান মনিরুল ইসলাম।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ে স্থানীয়দের সহায়তায় একটি জমি লিজ নিয়ে তারা (জেএমবি) মাদ্রাসা তৈরি করেছে। সেখানেই জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গেড়ে তোলা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট দীর্ঘদিন ধরেই নব্য জেএমবি ও পুরনো জেএমবির ওপর বিশেষ নজরদারি অব্যাহত রেখেছিল। এরই এক পর্যায়ে রবিবার রাজধানীর ভাটারার সাইদ নগর এলাকা থেকে জেএমবির তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।’

তিনি জানান, ‘গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে পুরনো গ্লোবাল জামাতুল মুজাহিদিনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের অস্থায়ী আমির আবু রায়হান রয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৫০টি ডেটোনেটর, জিহাদি বই, একটি কমান্ডো ছুরি ও ২০ পিস জেল জাতীয় বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা সিটিটিসিকে জানিয়েছে, আবু রায়হান টঙ্গির তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় লেখাপড়া করা অবস্থায় ২০১০ সালে মৃত তালহা এবং মৃত ডা. নজরুলের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করে। সংগঠনের প্রতি একাত্মতা এবং বিশ্বস্ততার কারণে ২০১২ সালে সংগঠনের সিদ্ধান্তে তিনি কক্সবাজারে গিয়ে লেখাপড়াসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার দায়ী (দাওয়াতী) শাখার প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম করতে শুরু করে। ওই সময় তালহা প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এক ব্যাগ কমান্ডো ছুরি আবু রায়হানকে দেয়।

২০১৩ সালের মাঝামাঝি সংগঠনের সিদ্ধান্তে গ্রেফতার আবু রায়হান জঙ্গি খোকনের চাচাতো শালিকাকে বিয়ে করে। আবু রায়হান ওই ছুরির ব্যাগ কক্সবাজারের নুরুল হাকিমের কাছে দেয়। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর নুরুল হাকিম সংগঠনের আরও সদস্যসহ ৩০টি কমান্ডো ছুরি ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার হয়। গ্রেফতার হাবিবুর রহমান জেএমবির ইসাবা গ্রুপের প্রধান হিসেবে সংগঠন চালানোর অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে।

সে গত বছরের ২৯ মার্চ রাজধানীর দক্ষিণখান থানার পীর সাহেবের বাড়িতে ডাকাতির সময় হাতেনাতে গ্রেফতার হয়। কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সে পুনরায় জঙ্গি কার্যক্রম শুরু করে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবু রায়হান হচ্ছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া পলাতক জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীর শ্যালক। সালেহী নিজেকে গ্লোবাল জেএমবির আন্তর্জাতিক আমির ঘোষণা করে। তখন জেএমবির আমির ছিল খোরশেদ আলম। খোরশেদ নিহত হওয়ার পর ২০১৭ সালে আবু রায়হানকে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আমির ঘোষণা করা হয়।’‘

তিনি বলেন, ‘রবিবার (২৪ নভেম্বর) আবু রায়হান অন্য দুই জঙ্গি চান মিয়া ও রাজিবুর রহমানকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যাচ্ছিল। এ সময় তাদের গ্রেফতার করা হয়। হাবিবুরের বাসা ঢাকাতেই। আর রাজিবের বাড়ি নেত্রকোনার সীমান্ত এলাকায়। তার বাড়িতে নতুন জঙ্গি সদস্যরা সহজেই মিলিত হতো। গ্রেফতার তিন জন মূলত ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া, জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের আত্মীয় মাওলানা রাকীব নামে এক ব্যক্তি বিদেশ থেকে এদের অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জঙ্গিরা সব সময় হামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এরাও প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। তবে তাদের নেটওয়ার্ক শুরুতেই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এরা নব্য জেএমবির সঙ্গে এরআগে যোগাযোগ করেছে কিনা, তা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘পুলিশের ওপর নব্য জেএমবির যে গ্রুপটি হামলা চালিয়েছিল, তারা পাঁচ জনের একটি জঙ্গি সেল করেছিল। তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করা গেছে। এরইমধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দুই জন এখন দৌড়ের ওপর আছে। তাদের ছবিও পুলিশের কাছে এসেছে। তাদের সেই সেল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আর নতুন করে যেন সেল গঠন হতে না পারে, সে জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

পাহাড়ি এলাকায় মানুষের যাতায়াত কম থাকায় জঙ্গিরা ওই এলাকাকে নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছে বলেও জানান মনিরুল ইসলাম। জঙ্গিরা কার মাধ্যমে কীভাবে জমি লিজ নিয়েছিল, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছি। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেন সিটিটিসি প্রধান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন