বান্দরবানে এলজিইডি প্রকৌশলী জয়সেনের দাপট, কমিশন ছাড়া মেলে না কাজ

বান্দরবানে এলজিইডির (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) সহকারী প্রকৌশলী জয়সেনের বিরুদ্ধে টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিন শতাংশ কমিশন না দিলে মেলে না কোনো প্রকল্পের কাজ।বছরের পর বছর যোগসাজশে অনিয়মের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসায় ক্ষুব্ধ প্রকাশ করেছে ঠিকাদাররা। অফিসে বসে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে এলজিইডি অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী। অভিযোগ রয়েছে, কোন প্রকল্পের কাজ পেতে হলে এলজিইডি সহকারী প্রকৌশলী জয়সেনকে দিতে হয় তিন শতাংশ কমিশন। কমিশন না দিলে মিলেনা টেন্ডারের কোন কাজ।অনুসন্ধানে জানা গেছে, জয়সেনের জন্মস্থান চট্টগ্রামে। তিনি চট্টগ্রামে থাকাকালীন এক সময় ছাত্রলীগের রাজনৈতিক করতেন। রাজনৈতিক করার সুবাদে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তার চাকরি হয়। ২০২১ সালে ৬ জুন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে এলজিইডিতে যোগদান করেন। তার প্রথম কর্মস্থল হিসেবে যোগ দেন বান্দরবান এলজিইডি অফিসে।অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, চাকরিতে যোগদান পর তৎকালীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতা প্রভাব দেখিয়ে বিভিন্নভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে। এলজিইডি সাবেক চিফ প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথের আত্মীয় পরিচয়ে ডাপট দেখিয়ে অনিয়ম করে আসছে প্রতিনিয়ত। বাইরের কেউ কাজ পেলে তার কাছ থেকে আদায় করেন বড় অঙ্কের কমিশন। টেন্ডার পাশ করানোর আগে তিনি ঠিকাদারদের কাছে থেকে নেন বড় অঙ্কের পিসি (পার্সোনাল কমিশন)। এভাবেই তিন বছর ধরে চলছে নিজের আয়ত্তে বান্দরবানে এলজিইডি দুর্নীতি কার্যক্রম।জেলা এলজিইডি সূত্র বলছে, বান্দরবানে সদর উপজেলায় তিনটি স্থানে সুইচ গেইট নির্মাণ করার কথা রয়েছে। রাজবিলা, রেইছা ও কাইছলী খালের উপর। সেসব বড় বড় প্রকল্পের সুইচ গেইট নির্মাণ কাজে সহকারী প্রকৌশলী জয়সেন দেখাশোনা করছেন। এসব সুইচ গেইট এলাকাবাসীদের কোন উপকারে না আসলেও কমিশন পেতে ঠিকাদারদের কাজের চাপ দিয়ে থাকেন এই প্রকৌশলী। শুধু এটি নয় সদর উপজেলাতে যেসব উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে সেসব প্রতিটি অনিয়মের কাজের যোগসাজশে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ আছে এই প্রকৌশলী বিরুদ্ধে।ঠিকাদারদের অভিযোগ, এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী জয় সেনের নির্দেশে যেকোনো কাজের বাবদ অফিস খরচ বাবদ সাড়ে ৩ভাগ টাকা দিতে হবে। তাছাড়া ঠিকাদাররা কাজ ধরার আগে পার্সেন্টেজ অনুযায়ী টাকা দিয়ে দিতে হয় সহকারী প্রকৌশলীকে। কাজ করার প্রস্তুতি নেওয়ার পর এই কাজ এডজাস্টমেন্টের জন্য রাখা হয়। কাজ চালু করতে তিন শতাংশ কমিশন দিয়ে তারপর কাজ শুরু করতে হয়। কমিশন না দিলে অনেক কাজ এডজাস্টমেন্ট বলে ঠিকাদারদের করতে দেওয়া হয় না। অনেক ঠিকাদারের কাজ শেষ, কিন্তু তার টেবিলে বিল আটকিয়ে রাখা হয় শুধু কমিশনের জন্য। এভাবে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঠিকাদারদের।নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, আমরা এলজিইডি অধীনের দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদার করে আসছি। টেন্ডার পেলে কাজ শুরুর আগে সহকারী প্রকৌশলী জয়সেনকে তিন শতাংশের কমিশন ভাগ দিতে হয়। একটি কাজ পেলে ভ্যাট-ট্যাক্সে অনেক টাকা ব্যয় হয়। এরমধ্যে যদি বড় বড় পিসি প্রদান করতে হয় তাহলে কাজ করতে হবে কীভাবে। তাছাড়া ঠিকাদারকে সহকারী প্রকৌশলী জয়সে কাজের অতিরিক্ত প্রভাব ও চাপ সৃষ্টি করে আসছে বলে অভিযোগ করেন তারা।এ বিষয়ে বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর এলজিইডি সহকারী প্রকৌশলী জয়সেন অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ঠিকাদারদের অভিযোগটি মিথ্যা এবং বানোয়াট। যখন ঠিকাদারকে ভালো কাজ করার জন্য চাপ দেয় তখন ঠিকাদাররা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়। আমি উন্নয়ন কাজে বিশ্বাসী যা কাজ হবে ভালো কাজ করতে হবে। দেখেন আপনাদের সংবাদের মাধ্যমে আমি বান্দরবান থেকে চলে যেতে পারি কিনা?
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন