ভাই-বোনের দ্বন্দ্বে বিক্রি হতে যাচ্ছে সু চির গৃহবন্দি থাকা বাড়িটি

fec-image

ইয়াঙ্গুন ভিলা। এই বাড়িতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ১৫ বছর গৃহবন্দী অবস্থায় কাটিয়েছেন। এখন আদালতের আদেশে বাড়িটি বিক্রি হতে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে উঠে এল সম্পত্তি ভাগাভাগি প্রশ্নে ভাইয়ের সঙ্গে সু চির বিরোধ। অনেক বছর ধরেই বাড়িটির মালিকানা নিয়ে বড় ভাই অং সান উয়ের সঙ্গে সু চির আইনি লড়াই চলছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী উ ২০০০ সালে আদালতের দারস্থ হন। কয়েক দফা তদন্তের পর সর্বশেষ শুনানি হলো সু চির কারাবন্দি অবস্থাতেই। সম্প্রতি বাড়িটির মালিকানা প্রশ্নে লড়াইয়ে সু চির ভাইয়ের পক্ষে রায় দিয়েছেন মিয়ানমারের আদালত। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

ইয়াঙ্গুনের ইউনিভার্সিটি এভিনিউতে ইনিয়া হ্রদের তীরে অবস্থিত এ ভিলা। ঔপনিবেশিক আদলে নির্মিত বাড়িটি মিয়ানমারের অনেকের কাছেই ‘গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের’ প্রতীক।

আদালতের রায় নিয়ে সু চির ভাই যা বলছেন:
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে সু চির ভাই অং সান ও বলেন, ২০১২ সালে দেওয়া এক রুলের পক্ষেই সম্প্রতি নেপিডোর সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছেন। ২০১২ সালের ওই রুলে অং সান ও-কে ওই বাড়ির সমমালিকানা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘২০১২ সালের রুলে বলা হয়েছিল আমরা যদি বাড়িটিকে ভাগ করার ব্যাপারে সম্মত হতে না পারি, তবে যেন এটি নিলামে তুলে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা ভাগ করে নিই। কয়েক সপ্তাহ আগে আদালতের সবশেষ শুনানিতেও সে সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।’

অং সান ও বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন কি না, সে ব্যাপারে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, এটি ব্যক্তিগত বিষয়। তবে বাড়িটিকে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলতে রাজি নন অং সান ও।

সরকারের কাছ থেকে বাড়িটি পেয়েছিল সু চির পরিবার:
দুই একর (শূন্য দশমিক ৮ হেক্টর) জায়গায় নির্মিত বাড়িটি সু চির মা খিন কিয়িকে দিয়েছিল মিয়ানমার সরকার। ১৯৪৭ সালে সু চির বাবা মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক জেনারেল অং সান হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর সরকারিভাবে বাড়িটি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে সামরিক ধরপাকড় শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে খিন কিয়ি মারা যান। ওই গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সু চি।

অং সান সু চিকে প্রথমবার গৃহবন্দী করা হয় ১৯৮৯ সালে। এভাবে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ওই বাড়িতে বন্দী থেকেছেন তিনি।

গৃহবন্দী সু চি যেভাবে ওই বাড়িতে সময় কাটিয়েছেন:
প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে রেডিও শুনতেন, বই পড়তেন এবং ধ্যান করতেন তিনি। সপ্তাহ শেষে ওই ভিলা থেকে গণতন্ত্রপন্থী ভাষণ দিতেন সু চি। বাড়ির ফটকে উপস্থিত থাকা জনসমাগমের উদ্দেশে একটি টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতেন তিনি। হাজারো মানুষ তাঁর কথা শোনার জন্য সেখানে জড়ো হতেন।

পরবর্তীকালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সু চির সঙ্গে দেখা করতে ওই বাড়িতে যান।

২০১২ সালে ছাড়া পাওয়ার পর সু চি আর ওই বাড়িতে থাকেননি। এখন জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় থাকলেও অং সান ওর আইনজীবীর হিসাব অনুযায়ী, বাড়িটির মূল্য ৯ কোটি ডলার। তবে অং সান ও আদালতের নথিগুলো দেখাতে পারেননি।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, আদালত সু চির ভাই অং সান ও-এর পক্ষে রায় দিয়েছেন।

অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ২০২১ সালে ১৬ এপ্রিল সু চিকে স্টেট কাউন্সেলর করে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) গঠন করেন। এই সরকার মূলত দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এবং নির্বাসিত থেকে কাজ করছে। গত সপ্তাহে জাতীয় ঐক্যের সরকার বাড়িটিকে জাতীয় ঐতিহ্যের এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে।

এর আওতায় বাড়িটি বিক্রি কিংবা ধ্বংস করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও সামরিক জান্তা ক্ষমতাচ্যুত না হওয়া পর্যন্ত এ ঘোষণা কার্যকরের সুযোগ নেই।

জাতীয় ঐক্যের সরকারের মুখপাত্র সাসা বলেন, এটি কেবল এক বাড়ি কিংবা সম্পত্তি নয়, এটি এমন এক স্থান, যেখানে তাঁকে (সু চিকে) ১৫ বছরের বেশি সময় আটকে রাখা হয়েছিল। এটি মিয়ানমারের জনগণের জন্য আশার এক শক্তিশালী প্রতীক।

এ বাড়ি নিয়ে আদালতের সবশেষ শুনানি চলার সময় সু চির প্রতিনিধিত্বকারী কেউ ছিলেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন