ভারতকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারি


ভারতের পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেছেন, ভারতকে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে রেড লাইন অতিক্রম করতে দেবে না পাকিস্তান। কারণ এমন পদক্ষেপ হবে একটি দায়িত্বহীন কাজ যা সীমিত রাজনৈতিক স্বার্থে কোটি কোটি মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর জানিয়েছে।
হিমবাহ সংরক্ষণ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে শুক্রবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিন্ধু নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ধু পানি চুক্তি একতরফাভাবে ও বেআইনিভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘কোটি কোটি মানুষের জীবনকে রাজনৈতিক স্বার্থের জিম্মি করা যাবে না। পাকিস্তান তা কখনোই হতে দেবে না। আমরা কখনোই রেড লাইন অতিক্রম করতে দেব না।’
তিন দিনব্যাপী এই হিমবাহ সম্মেলনটি ২৯ থেকে ৩১ মে তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জাতিসংঘের ৮০টি সদস্য রাষ্ট্র ও ৭০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার আড়াই হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী, উপ-রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী এবং জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবগণ।
তাজিকিস্তান সরকার জাতিসংঘ, ইউনেস্কো, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল হিমবাহ সংরক্ষণের অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু সহযোগিতা জোরদার করা।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ তার ভাষণে হিমবাহ সংরক্ষণ, পাকিস্তানের জলবায়ু ঝুঁকি, ২০২২ সালের বন্যা, বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থা, বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাস, পানির অস্ত্রায়ন এবং প্রকৃতি ও মানবতার ভাগ্য রক্ষার আহ্বানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আজকের বিশ্ব গাজায় প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহারের নতুন ক্ষত বহন করছে, যা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যেই আমরা এখন এক নতুন ও বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছেছি — তা হলো পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা।’
প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন যে পাকিস্তানে ১৩ হাজারের বেশি হিমবাহ রয়েছে, যা দেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি করে তুলেছে। এই হিমবাহগুলো সিন্ধু নদী ব্যবস্থার প্রায় অর্ধেক বার্ষিক প্রবাহ সরবরাহ করে, যা পাকিস্তানের সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখে।
তিনি বলেন, ‘সিন্ধু, ঝেলম, চেনাব, রবি ও শতদ্রু — এই পাঁচটি প্রধান নদী আমাদের ভৌগোলিক দৃশ্যপট গঠন করে। এগুলো হিমবাহ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার উপর নির্ভরশীল। ফলে যেকোনও জলবায়ু পরিবর্তন যা হিমবাহকে প্রভাবিত করে, তা পাকিস্তানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।’
শাহবাজ শরিফ আরও বলেন, পাকিস্তান ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার মাধ্যমে হিমবাহ গলে পড়ার ঝুঁকি প্রত্যক্ষ করেছে, যা লক্ষ লক্ষ একর ফসলি জমি এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস করেছে, যদিও পাকিস্তানের বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে অংশ মাত্র শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশেরও কম।
তিনি বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলে হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে আগামী দশকগুলোতে বন্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এরপর হিমবাহ সঙ্কোচনের ফলে নদীর প্রবাহ নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাবে। এই পরিবর্তনগুলো আমাদের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী দায়িত্ব ও সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রতি পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোকে তাদের জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি বিলম্ব না করে পূরণ করতে হবে। অভিযোজন, প্রশমন, ক্ষয়ক্ষতি এবং ক্ষতিপূরণ — সব কিছুর উপর সমান গুরুত্ব দিতে হবে।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ২০২৫ সালকে আন্তর্জাতিক হিমবাহ সংরক্ষণ বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২১ মার্চকে প্রতি বছর ‘বিশ্ব হিমবাহ দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে, উদ্বোধনী আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি আয়োজনের দায়িত্ব তাজিকিস্তানকে দেওয়া হয়েছে।