ভূমি কমিশন সংস্কার প্রস্তাব অনুমোদন: নীরব বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো
সরকারী সিদ্ধান্ত- আওয়ামী লীগের এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল, বিএনপি’র উপজাতীয় নেতাদের পাশ কাটানো নীতি, বাঙালীরা সরব হলেও কোনো কর্মসূচী নেই। অথচ বাঙালীদের ভোট চায় সবাই
আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:
আবারো নতুন করে উত্তপ্ত হতে চলেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতি। পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনে খসড়া সংশোধনী মন্ত্রী সভায় নীতিগত অনুমোদনের সিদ্ধান্তের পর থেকেই উত্তাপ ছড়াতে থাকে পার্বত্যাঞ্চলে। যার ফলশ্রুতিতে ৩০মে অবরোধ, হরতাল এরপর আগামী রবিবার পুরো রাঙামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণার পাশাপাশি বিতর্কিত ভূমি কমিশন আইন পাশ করা থেকে বিরত না থাকলে লাগাতার কর্মসূচির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অচল করে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছে এখানকার ৬টি স্থানীয় সংগঠন। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কেউ রাঙামাটি শহরে নিজেদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে আবার গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এইসব কর্মসূচির ঘোষণা দেয় মঙ্গলবার।
এদিকে বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এসে পার্বত্য ভূমি কমিশনের ২০১৩ আইনটির খসড়া সংশোধনে মন্ত্রী সভায় নীতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপারটি নিয়ে পার্বত্য শহর রাঙামাটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের মাঝে। আর এই ক্ষেত্রে একেবারে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে ক্ষমতাসীন দলের বাঙালী ও পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ।
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি (এক সময়ে ভূমি কমিশনের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি) এডভোকেট দীপেন দেওয়ানের কাছে জানতে চাইলে তিনি আইনটি পূর্ণাঙ্গ না পড়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম জানালেন, পার্বত্যাঞ্চলে বিরাজমান পরিস্থিতিতে শুধূমাত্র ভোটের পাল্লা একান্তই নিজেদের করে নেবার লক্ষ্যে সরকারের এক পক্ষীয় কোনো সিদ্ধান্ত এখানে বসবাসরতদের মাঝে শুধুমাত্র বিভাজন তৈরি করবে তা নয়, এইখানে বিরাজমান পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হবে। একটি বিশাল সম্প্রদায়ের অস্তিত্বকে পাশ কাটিয়ে কোনো হটকারি সিদ্ধান্ত না নিয়ে সকলের সমান উপস্থিতিতে পার্বত্য ভূমি কমিশন গঠন করে বিরাজমান ভূমি সমস্যার সমাধান করতে তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান।
অপরদিকে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভূট্টো জানান, বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এসে এই আইন পাশের ভূমিকা হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালীদেরকে একবারে পরিপূর্ণভাবে ঠিকানাবিহীন করার কৌশল। অসম কমিটি এবং অসম ব্যক্তিদের দিয়ে একটি জাতির প্রতিক্রিয়াকে নিয়ে যে ভূমি কমিশন বর্তমানে বিতর্কিত অবস্থায় আছে সেখানে এই আইন বাস্তবায়নের স্দ্ধিান্ত পাহাড়ের বিরাজমান সমস্যা আরো জটিল করে তুলেছে, বর্তমান সরকারকে এর প্রতিফল অবশ্যই দিতেই হবে বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাহবুবুর রহমানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মূছা মাতব্বর এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, আসলে ভূমি কমিশন আইনটি আমি পূর্ণাঙ্গভাবে এখনো পড়িনি তাই এবিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না।
এদিকে পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের খসড়া সংশোধনী বর্তমান সরকারের মন্ত্রী সভায় নীতিগত অনুমোদনের ব্যাপারটিকে আপাত দৃষ্টিতে শুভ লক্ষণ উল্লেখ করে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক এই আইন বাস্তবায়ন করবে বর্তমান সরকার এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা। যেসব সংগঠন ভূমি কমিশন আইনের খসড়া অনুমোদনে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবরোধসহ হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসুচি দিয়েছে তিনি তাদের সমালোচনা করে বলেন, আমাদের সকলের উচিত সবার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
এদিকে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি কমিশন আইন বাস্তবায়নে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাঙামাটি শহরে সাংবাদিক সম্মেলন করে আগামী ৩০মে বৃহস্পতিবার তিন পাবর্ত্য জেলায় ও আগামী ২রা জুন রাঙামাটি জেলায় হরতালের ঘোষণা দিয়েছে পার্বত্য সমঅধিকার আন্দোলন, পাবর্ত নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য সম অধিকার ছাত্র আন্দোলন নামে তিনটি সংগঠন।