মানিকছড়িতে যৌতুকলোভী স্বামীর অমানুষিক নির্যাতনে গৃহবধূ গুরুতর আহত
খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে যৌতুকলোভী স্বামীর অমানুষিক নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়েছেন রাহেনা আক্তার(২৬) নামে এক গৃহবধূ। বর্তমানে তিনি রামগড়ে তার পৈতৃক বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন।
এদিকে, গত দুদিন স্বামী আব্দুল গফুরের চালানো অমানুষিক নির্যাতনে গৃহবধূর ক্ষতবিক্ষত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ফলে নির্যাতনকারী আব্দুল গফুরের কঠোর শাস্তির দাবি উঠেছে জোরালোভাবে। অন্যদিকে, এ ঘটনায় নির্যাতিতা রাহেনা আক্তার বাদি হয়ে খাগড়াছড়ি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
নির্যাতনে আহত গৃহবধূ রাহেনার মামা সাহাব উদ্দিন জানান, মানিকছড়ির পূর্ব গচ্ছাবিলের খালেরপাড়ের বাসিন্দা আমিন উদ্দিনের ছেলে আব্দুল গফুরের সাথে ২০১২ সালে বিয়ে হয় রাহেনার। বর্তমানে তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর স্বামীর দাবি অনুযায়ী চার দফায় এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা যৌতুক দেন তার বাবা। কিন্তু গফুর আরও টাকার জন্য রাহেনাকে চাপ দিতে থাকে। দরিদ্র পিতার পক্ষে আর কোন টাকা দেয়া সম্ভব নয় জানালে সে ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন শুরু করে। সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর ভোর ৩টার দিকে গফুর রাহেনার ওপর নির্যাতন শুরু করে। এলোপাথারি কিলঘুষি মারার পর কাঠের লাঠি দিয়ে সমস্ত শরীরে আঘাত করে সে। অমানুষিক নির্যাতনের এক মূর্হুতে রাহেনা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। সকালে খবর পেয়ে তার মা, বাবাকে সাথে তিনি ছুটে যান মানিকছড়িতে।
সাহাব উদ্দিন অভিযোগ করেন, নির্যাতনে গুরুতর আহত অবস্থায় রাহেনা ছটফট করলেও কেউ তাকে হাসপাতালে বা কোন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়নি। এ অবস্থায় তারা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে রাহেনার স্বামী, শাশুড়ি ও দেবর বাধা দেয়। পরে তাদের প্রতিবেশী সাবেক মহিলা মেম্বার শিউলি বেগমকে ঘটনা জানানোর পর তার সহযোগিতায় গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাহেনাকে মানিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ঐদিন বিকাল পর্যন্ত স্বমী বা তাদের কেউই হাসপাতালে যায়নি। ফলে মানিকছড়ি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে রামগড়ে এনে এখানে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। আব্দুল গফুর পেশায় ট্রাক চালক। সে একজন নেশাগ্রস্ত লোক। এরআগেও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রাহেনা বাবার বাড়িতে চলে আসেন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সালিসের মাধ্যমে স্বামীর বাড়ি ফিরে গেলেও তার ওপর নির্যাতন বন্ধ করেনি।
মানিকছড়ি ইউনিয়নের সাবেক মহিলা মেম্বার শিউলী বেগম বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি নিজেই গুরুতর আহত অবস্থায় রাহেনাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এরআগেও বেশ কয়েকবার তার ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সালিস বেঠকও হয়। সাবেক মহিলা মেম্বার আরও বলেন, স্ত্রীর ওপর এ ধরণের নির্যাতন করায় গফুরকে তিনি বকাঝখাও করেছেন।
এদিকে, নির্যাতিতা গৃহবধূ গত ২৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধনী/০৩) এর ১১(গ)/৩০ ধারায় স্বামীসহ পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মানিকছড়ি থানার উপ পরিদর্শক মো: শাহ নেওয়াজ বলেন, এ ব্যাপারে থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে এ ব্যাপারে এখনও কোন নির্দেশনাও থানায় আসেনি। নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।