যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে আবারও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। স্থানীয় সময় শনিবার ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও শিকাগোসহ বিভিন্ন শহরে একযোগে এসব বিক্ষোভ হয়।

বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি, সরকারি চাকরিতে ছাঁটাই, গাজা ও ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিরোধিতা করে। তাদের অভিযোগ— এসব নীতি মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আঘাত করছে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন, যেমন— ‘শ্রমিকদের শক্তি থাকা উচিত’, ‘রাজতন্ত্র চাই না’, ‘ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করো’, ‘অভিবাসীদের স্বাগত’ এবং ‘অত্যাচার বন্ধ করো’।

অন্য শহরগুলোতেও একই রকম স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা অভিবাসনবিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশে দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।

অনেক বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করেন এবং গলায় ফিলিস্তিনি রুমাল (কেফিয়েহ) পরেন। তারা গাজায় নির্বিচারে হত্যা ও ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের প্রতিবাদ জানান। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চেয়ে স্লোগান দেন— ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’।

কিছু বিক্ষোভকারী ইউক্রেনের পতাকাও বহন করেন। তারা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিক্ষোভকারীদের মতে— ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন আইনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের বহিষ্কার করতে আইন ব্যবহার করছে। আমরা প্রতিবেশীদের বাঁচাতে নিজেদের মতো করে প্রতিরোধ গড়ে তুলছি।’

গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি ইলন মাস্ককে সরকারি দক্ষতা বিভাগের দায়িত্ব দেন। এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের দুই লাখেরও বেশি চাকরি বাতিল করা হয়।

সরকার সম্প্রতি অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে এবং তাদের মধ্যে অনেকে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন অধিকার সংগঠন।

পরিবেশ, স্বাস্থ্যনীতি ও মানবাধিকার ইস্যুতেও ট্রাম্পের প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

ওয়াশিংটন মনুমেন্টের পাশে বিক্ষোভকারীদের ব্যানারে লেখা ছিল— ‘ঘৃণা কোনো জাতিকে মহান করে না’ এবং ‘সবার সমান অধিকার মানে কারও অধিকার কমে যাওয়া নয়।’

এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছে ‘৫০৫০১’ নামের একটি সংগঠন। যার অর্থ— ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ৫০টি বিক্ষোভ ও একটি জাতীয় আন্দোলন। তারা শনিবারের বিক্ষোভ কর্মসূচির নাম দিয়েছে ‘ন্যাশনাল ডে অব অ্যাকশন’।

আয়োজকদের দাবি, এই কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রায় ৪০০টি বিক্ষোভ হয়েছে।

এর আগে, চলতি মাসের ৫ এপ্রিল ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছিল। সেটির আয়োজন করেছিল ‘ইনডিভিজিবল’ নামের একটি সংগঠন। ওই বিক্ষোভের নাম ছিল ‘হ্যান্ডস অফ’, যার মানে হতে পারে— ‘আমাদের জীবন থেকে দূরে থাকো’।

‘৫০৫০১’ ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ১ মে ‘মে ডে স্ট্রং’ নামে আরও একটি দেশব্যাপী বিক্ষোভ আয়োজন করা হবে।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন, মানবাধিকার ও বৈদেশিক নীতিতে চলমান অনিয়মের বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষ থেকে এ প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। সূত্র: রয়টার্স

Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন