রাখাইন সঙ্ঘাতে অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে মিয়ানমারের সব লক্ষণ

fec-image

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে প্রশমন দূরে থাক সহিংসতার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। ওই এলাকাতে মজবুত অবস্থান গড়ে তুলেছে আরাকান আর্মি (এএ) , সেখানে লড়াইয়ের তীব্রতা দেখে অনেকেরই আশঙ্কা যে, এটা আরও বাড়তে থাকবে।

মাঠের যে সব কমান্ডাররা আশা করেছিলেন যে, তারা এবার কিছুটা নিষ্কৃতি পাবেন, তাদের জন্য খবর সুখকর হয়।

রোববার সামরিক বাহিনী বা তাতমাদাও দেশের কিছু অংশে অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে, যেটা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বজায় থাকবে। তবে অস্ত্রবিরতি রাখাইন রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য নয়। মার্চ মাসে সামরিক বাহিনী এএ-কে সন্ত্রাসী গ্রুপ ঘোষণার পর থেকেই দুই পক্ষ তীব্র যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে।

নেপিদোর হাই-কমান্ডের চিন্তাভাবনা হলো, যেহেতু অন্যান্য জাতিগত গ্রুপগুলোর সাথে সঙ্ঘাত অতটা গুরুতর নয় এবং বিশেষভাবে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি, কোকাং বিদ্রোহী গ্রুপ, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতে কোন সঙ্ঘাতই নেই, সে কারণে উত্তর রাখাইনে লড়াইয়ের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

আনুষ্ঠানিক ভাষ্যে সামরিক বাহিনী অবশ্য বলেছে যে, কোভিড-১৯ মহামারীর দিকে মনোযোগ দেয়ার জন্য অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছে তারা। গত মাস থেকে সামরিক বাহিনী কোভিড-১৯ এর ল্যাব টেস্ট করছে, যেখানে দিনে ২০০ নমুনা পরীক্ষা করা যায়। ট্রায়াঙ্গেল কমান্ডের অধীনে পূর্ব শান রাজ্যের কেংটুং এলাকাতে অবস্থিত ৩০০ বিছানার সামরিক হাসপাতালে এই পরীক্ষা করা হচ্ছে।

অস্ত্রবিরতির ঘোষণার পর সামরিক বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং তাতমাদাওয়ের ট্রায়াঙ্গেল কমান্ড পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনি ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (ইউডাব্লিউএসএ), এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এনডিএএ) নেতাদের সাথে বৈঠক করেন।

এনডিএএ নেতাদের সাথে সিনিয়র জেনারেল অং লাইংয়ের বৈঠক ভালোভাবেই শেষ হয়েছে। তারা দুই পক্ষের মধ্যে স্থিতিশীলতার কথা বলেছেন এবং স্বীকার করেছেন যে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।

তবে সম্প্রতি চীন থেকে ২০০ রাখাইনের অধিবাসী এনডিএএ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ফিরে এসেছে এবং সেখানে তাদেরকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে এবং এটি নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এনডিএএ তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে।

সামরিক রদবদল

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় সিনিয়র জেনারেলের সফরের পর সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে বেশ কিছু রদবদল করা হয়েছে এবং তরুণ কর্মকর্তাদেরকে সিনিয়র কমান্ড পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।

এই পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে রযেছেন মেজর জেনারেল কিয়াউ সোয়ার লিন, যিনি এর আগে তাতমাদাওয়ের সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান ছিলেন। তাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়েছে এবং কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ওই পদে এতদিন ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাইও স, যিনি অবসরে যাচ্ছেন। তবে অবসরে গেলেও সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন মিয়ানমার ইকোনমিক কো অপারেশানের প্রধান থাকবেন তিনি।

৪৯ বছর বয়সী কিয়াউ সোয়ার লিন তরুণতম কর্মকর্তা হিসেবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হলেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কর্নেল ওয়াই লিন – যিনি আগে কোস্টাল রিজিওন কমান্ডে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাকে নেপিদোতে সামরিক বাহিনীর সদরদপ্তরের জেনারেল স্টাফ অফিসার করা হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কো কো উ’র স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি।

কো কো উ মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে মধ্যমপন্থী হিসেবে পরিচিত এবং তাকে পদোন্নতি দিয়ে সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান করা হয়েছে। কো কো উ এর আগে জেনারেল মাউং আয়ের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিলেন, যখন জেনারেল মাউং সাবেক ক্ষমতাসীন স্টেট পিস অ্যাণ্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের (এসপিডিসি) ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং সশস্ত্র বাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি ছিলেন।

অস্ত্রবিরতির ঘোষণা যখন দেয়া হয়, তখন মাঠের কমান্ডাররা আশা করেছিলেন যে, রাখাইন রাজ্যেও হয়তো এটা কার্যকর হবে। কিন্তু তাদের আশা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

মনে হচ্ছে ভাইস সিনিয়র জেনারেল সো উইন – যিনি এর আগে রাখাইন, চিন ও কাচিন রাজ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি তার কমান্ডারদের কোন বিশ্রাম দিতে চান না। এর একটাই অর্থ – আগামীতে আরও রক্তপাত আর সঙ্ঘাতের মাত্রা বাড়তে চলেছে।

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল, মিয়ানমার, রাখাইন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন