রাবার ড্যাম ছিঁড়ে ঢুকছে লবণাক্ত পানি, বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা
কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টে নির্মিত দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যামের রাবারের ব্যাগ ছিঁড়ে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন করে রাবার ড্যামের একটি স্প্যানের রাবারের ব্যাগ ছিঁড়ে যাওয়ায় বোরো মৌসুমের জন্য রাবার ড্যামের উপরের দিকে আটকে রাখা মিঠা পানি সমুদ্রের দিকে নেমে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ঢুকে দুটি উপজেলার (চকরিয়া-পেকুয়ার) বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ করা বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত সোমবার (২ এপ্রিল) ভোরে সামুদ্রিক জোয়ারের সময় এ রাবার ড্যামের ২ নম্বর স্প্যানের একটি অংশের রাবার ছিঁড়ে যায়। জোয়ারের পানিতে এমনটা হয়েছে বলে ধারণা করছেন রাবার ড্যামের কেয়ারটেকার আবদুর রহিম। তবে ছিঁড়ে যাওয়া রাবার ড্যামের জোড়া লাগানোর কাজ প্রাথমিকভাবে শুরু করেছে।
স্থানীয় জানায়, এ অবস্থায় নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ৬০ হাজার একর জমিতে রোপণ করা ফসল। কারণ ড্যামের সহায়তায় নদীর মিঠা পানি ধরে রেখে জমিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে ইরি-বোরোসহ শস্যের চাষাবাদ করে আসছিলেন দুই উপজেলার কৃষকরা। বর্তমানে আমন মৌসুমে দুই উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ওই পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ হুমকির মুখে। কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাৎক্ষণিক ভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ড্যামটি দ্রুত সচল করার বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।
স্থানীয়রা আরো জানায়, ড্যামের একেবারে কাছ থেকে শক্তিশালী ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু তোলার কারণে গোড়ার মাটি সরে যাওয়া, সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির চাপে পড়াসহ নানা কারণে ২০১৮ সালের পর থেকে চারবার রাবার ছিঁড়ে ড্যাম অকার্যকর হয়ে পড়ে। তখন মেরামতের মাধ্যমে ড্যামটি সচল করা হয়েছিল। পাঁচ বছরের মাথায় আবার ড্যামটির রাবার ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটলো।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, বিগত ১০ বছর পূর্বে মাতামুহুরী নদীর মিঠা পানি আটকে শুষ্ক মৌসুমে বোরো চাষের জন্য নদী সংলগ্ন উপজেলার চকরিয়াস্থ পালাকাটা, বাঘগুজারা ও পেকুয়ার ভোলা খালে তিনটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। রাবার ড্যামগুলো নির্মাণ করার মাধ্যমে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে চকরিয়া-পেকুয়ায় প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে ইরি, বোরো ও রবি শষ্যের চাষ হয়ে আসছে। ইরি, বোরো চাষ শেষে প্রতি বছরের মে মাসের শুরুর দিকে রাবার ড্যামগুলোর রাবার ব্যাগ আবার নামিয়ে দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে বোরো চাষে পানি সেচের প্রয়োজনীয়তা আরো প্রায় এক মাস রয়ে গেছে। এ অবস্থায় গত সোমবার (২ এপ্রিল) ভোরে বাঘগুজারা রাবার ড্যামের ২ নম্বর স্প্যানের রাবার ছিঁড়ে গিয়ে নদীর উপরের দিকে আটকানো মিঠাপানি বের হয়ে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী জামাল মোর্শেদ বলেন, ড্যামটির বর্তমান অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চারটি স্প্যানে নতুন করে রাবার লাগানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ীভাবে যাতে এ ড্যাম সচল করা যায়, সে জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তবে ছিঁড়ে যাওয়া রাবারের জোড়া লাগানোর কাজ প্রাথমিকভাবে শুরু করা হয়েছে।