শেষ মুহূর্তে মানিকছড়িতে কোরবানী বাজার বেশ জমে উঠেছে

fec-image

 বৈশ্বিক মহামারী করোনার দুর্যোগ স্বত্তেও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডেইরী শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে ঝুঁকি নিয়ে কোট কোটি টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করা ডেইরী ফার্ম ও প্রান্তিক কৃষকের গৃহে পালিত কোরবানীর গরু বাজারজাতে প্রাণ ফিরে পেয়ে স্বস্থিবোধ করেছেন খামারিরা। শেষ মুহূর্তে এসে কোরবানীর বাজার বেশ জমে উঠতে শুরু করেছে। লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে বড় খামারী এ.কে এগ্রো ডেইরী ফার্ম লাইফ ওয়েট পদ্ধতিতে এবং অনলাইনে গরু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে ।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস ও খামার মালিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ছোট-বড় গো-খামার আছে ৩০টি। এসব খামারে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কোরবানে বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক দেশি-বিদেশী গরু সৃজিত সবুজ ঘাস, খড়, সাইলিজ, খৈল, ভূষিতে মোটাতাজা করা হয়েছে। এখানকার খামারে বেড়ে উঠা গরু দেখতে যেমন সুন্দর, মাংস তেমন সু-স্বাদু। ফলে সমতলের কোরবানী করা লোকজন পাহাড়ের গরু পছন্দ করে বেশি।

এছাড়া এখানকার গ্রামে-গঞ্জের হাজারো কৃষক নিজ গৃহে ২/৪টি করে অন্তত কয়েক হাজার দেশি বলদ, ষাড় লালন-পালন করছেন। গো-খামারের প্রতিটি গরু গড়ে ৭-১৪-২০ মণ ওজনের। এত বড় গরু সাধারণভাবে হাটে তোলা কষ্টকর। ফলে গত বছর থেকে উপজেলার সবচেয়ে বড় এ.কে এগ্রো ডেইরী ফার্মে(তিনটহরী)লাইফ ওয়েট পদ্ধতিতে গরু বিক্রি করে আসছেন ফার্মের স্বত্তাধিকারী আলহাজ্ব মোঃ ইকবাল হোসেন। তিনি উপজেলা ডেইরী ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরী ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি।

তিনি বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উপজেলার ছোট- বড় ৩০টি খামারের পাশাপাশি হাজারো কৃষকের গৃহে দেশীয় পদ্ধতিতে সু-স্বাদু খাবারে এসব গরু লালিত-পালিত হয়েছে। কৃষকের ছোট ও মাঝারী গরু অনায়াসে হাটে তুলতে পারলেও খামারের ৭-১৪-২০মণ ওজনের গরু হাটে তোলা খুবই কষ্টকর। যার ফলে লাইফ ওয়েট পদ্ধতি ও অনলাইনে আমি গরু বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ৪০% গরু বিক্রি করেছি।

সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাদের বলেন, শখ করে গত দুই বছর যাবত ছোট পরিসরে(তুলাবিল)ডেইরী ফার্মে পুঁজি বিনিয়োগ করেছিলাম। এবারও ছোট ও মাঝারী ৩০/৩৫টি দেশি ষাড় মোটাতাজা করিয়েছি। যা ইতোমধ্যে বেশির ভাগ অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। আগামী ১৭ ও ১৮ জুলাই উপজেলার মানিকছড়ি ও তিনটহরী স্কুল মাঠে সর্বশেষ হাট। এর মধ্যে তিনটহরী হাটে গত ১৪ জুলাই অন্তত সাড়ে তিনশ গরু বিক্রি হয়েছে। গড়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩০ টাকা মূল্যের গরু বেশি বেচা- কেনা হয়েছে । তবে ইজিয়াম বড় গরুর ক্রেতা ছিল না। ফলে বড় বড় এসব গরু ফেরত গেছে।

হাতিমুড়ার মোঃ আবদুর রশিদ ভূইয়া জানান, আমার বড় বড় ৩ টি ইজিয়াম ষাঁড় বিক্রি করতে পারিনি। তিনটির দাম উঠেছে মাত্র ৫ লক্ষ টাকা! শহরের বড় পাটি আসলে এই গরু কমপক্ষে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা বিক্রি হতো।

তিনটহরী বাজার ইজারাদার প্রতিনিধি মো. আবদুল আলিম বলেন, শেষ মুহূর্তে এসে কোরবানীর হাটে স্বস্তি এসেছে। করোনার এই দুঃসময়ে এর চেয়ে বেশি দাম আশা করলে ভূল হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারী খামারী অন্তত পুঁজি ফিরে পেয়েছে। আগামী রোববার তিনটহরী বাজারে কয়েক হাজার গরু উঠবে। এখানে হাসিল সহনীয়, ফলে গরুর ক্রেতা থাকে বেশি।

উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডা. সুচয়ন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বৈশ্বিক মহামারীর এই দুঃসময়ে কোরবানীর হাট জমে উঠার খবরে বেশ ভালা লাগছে। এই উপজেলায় ৩০টি তালিকাভুক্ত ছোট-বড় খামারে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, খাবারে ও আধুনিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। প্রতিটি খামার আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেছি। করোনার এই দুঃসময়ে বাজার কিছুটা ভালো হওয়ায় খামারীরা অন্তত ডেইরী শিল্পে উৎসাহিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন