শহীদ সিপাহী মোঃ আইয়ুব আলী, বীর বিক্রম

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বীর সেনানিদের বীরত্বগাঁথা

fec-image

শহীদ সিপাহী মোঃ আইয়ুব আলী, বীর বিক্রম, ১৯৭৯ সালে লংগদু জোনে কর্মরত ছিলেন। ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ তারিখে তাঁর ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কাদেরের নিকট গোয়েন্দা সূত্রে খবর আসে যে, লংগদু থানার রাঙাপানিছড়া গ্রামে শান্তি বাহিনীর ৪–৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী বিগত এক সপ্তাহ ধরে জেলে নৌকা থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছে। বিষয়টি বিভিন্ন উৎস থেকে নিশ্চিত হওয়ার পর লেফটেন্যান্ট কাদের দ্রুততার সাথে একটি টহল দল নিয়ে অভিযানে রওনা হন।

লক্ষ্যবস্তুর নিকটবর্তী হলে পাহাড়ের ওপর একটি ঘরে কিছু ব্যক্তির সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। সেনা টহল দল কাছাকাছি পৌঁছলে ঘর থেকে একাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী বেরিয়ে এসে গুলি বর্ষণ করে।

পাল্টা গুলিবর্ষণের ফলে তারা পাহাড়ের অপর প্রান্তে ঢালুতে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। সেনাসদস্যরা দ্রুততার সাথে ওই ঘরটি তল্লাশি করে দুইজন সন্ত্রাসীকে আটক করেন এবং একটি স্টেন গান, গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদিসহ আদায়কৃত ৩২,৪৩৮ টাকা উদ্ধার করেন।

পরবর্তী নির্দেশ অনুযায়ী আশপাশের ঝোপঝাড়ে তল্লাশি চালানোর সময় সিপাহী মোঃ আইয়ুব আলী এক সন্ত্রাসীকে দেখতে পান এবং সঙ্গে সঙ্গে সকলকে সতর্ক করেন। তিনি লক্ষ্য করেন, আরেকজন সন্ত্রাসী লেফটেন্যান্ট কাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে সিপাহী আইয়ুব আলী নিজের জীবন বাজি রেখে সেই সন্ত্রাসীর দিকে দৌড়ে যান এবং তাকে প্রতিহত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন।

দুর্ভাগ্যবশত, সন্ত্রাসীর গুলিতে তাঁর বুক বিদ্ধ হয় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। সিপাহী মোঃ আইয়ুব আলী নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে সহকর্মীদের জীবন রক্ষায় যে অসামান্য সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর অনন্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বীর সেনানিদের বীরত্বগাঁথা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন