স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সাত স্তরে সুপারিশমালা

fec-image

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের সুপারিশগুলোকে সাতটি স্তম্ভে ভাগ করে উপস্থাপন করেছে ‘স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন।’

স্তম্ভগুলো হলো- স্বাস্থ্য সেবাদান ও ভৌত অবকাঠামো, নেতৃত্ব, সুশাসন ও কর্মসংস্কৃতি, স্বাস্থ্য জনবল ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য জনবলের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধপত্র, চিকিৎসা প্রযুক্তি ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ, স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন ও স্বাস্থ্য তথ্যব্যবস্থা।

স্বাস্থ্য সবার অধিকার উল্লেখ করে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদনের শুরুতেই সংস্কার কমিশন উল্লেখ করেন যে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এ শহীদ বীরদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত এ সংস্কার প্রতিবেদন।

একটি বৈষম্যহীন ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাদের স্বপ্নের সহায়ক হোক এই স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রস্তাবনা।

প্রস্তাবনার মুখবন্ধে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পরবর্তী দশকগুলোতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

জনমত জরিপ থেকে প্রাপ্ত মূল মতামতসমূহ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ‘স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন’। জনমত জরিপে ৯৭ ভাগ উত্তরদাতা জানিয়েছেন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেয়া প্রয়োজন; ওষুধের মূল্য, রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষার মূল্য ও ডাক্তারের পরামর্শ ফি বা অস্ত্রোপচারের ফি নির্দিষ্ট করার পক্ষে মত দিয়েছেন যথাক্রমে ৯৭, ৯৬, ও ৯৫ ভাগ উত্তরদাতা।

জনমত জরিপে শহর অঞ্চলের ওয়ার্ডগুলোতে গ্রামীণ ইউনিয়ন পর্যায়ের মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তৈরি করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৯২ ভাগ উত্তরদাতা। চিকিৎসা, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম তথা জনস্বাস্থ্য সেবা পৃথক অবকাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত, এ বিষয়ে হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিয়েছেন ৭২ ভাগ উত্তরদাতা।

সহায়ক পদে কর্মরতদের বদলির পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৬ ভাগ উত্তরদাতা।

৬৮ ভাগ উত্তরদাতা এমবিবিএস ডাক্তার ছাড়া অন্য কারো প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের বেশির ভাগের দায়িত্ব থাকা উচিত সরকারের- এই মত ৯২ ভাগ উত্তর প্রদানকারীর,

স্বাস্থ্যহানিকর খাদ্য, পানীয় ও ভোগ্যপণ্যের উপর উচ্চহারে কর প্রয়োগ করা উচিত এই বিষয়ে একমত ৭৯ ভাগ উত্তরদাতা। স্বাস্থ্যবীমা গ্রহণে আগ্রহী ৭১ ভাগ উত্তরদাতার এবং স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিচালিত একই ধরনের সেবাক্রম একীভূত করা উচিত বলে মনে করেন ৬৭ ভাগ উত্তরদাতা।

স্বাস্থ্যসেবাকে জনমুখী, সহজলভ্য ও সার্বজনীন করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন’ নামে কমিশন গঠন করে গত ১৮ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করা হয়।

জাতীয় অধ্যাপক ও ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ডা: এ কে আজাদ খানকে কমিশনের প্রধান করা হয়। ড. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন (সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট), প্রফেসর লিয়াকত আলী (চেয়ারম্যান, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশন), প্রফেসর ডা. সায়েবা আক্তার (গাইনোকলজিস্ট),

প্রফেসর ডা. নায়লা জামান খান (শিশু স্নায়ুতন্ত্র বিভাগ), এম এম রেজা (সাবেক সচিব), প্রফেসর ডা: মোজাহেরুল হক (সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা), ডা: আজহারুল ইসলাম (কনসালটেন্ট আইসিডিডিআর,বি), প্রফেসর ডা: সৈয়দ মো: আকরাম হোসেন (স্কয়ার ক্যান্সার সেন্টার, স্কয়ার হাসপাতাল),

প্রফেসর ডা: সৈয়দ আতিকুল হক, (চিফ কনসালটেন্ট, গ্রীন লাইফ সেন্টার ফর রিউম্যাটিক কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ), ডা: আহমদ এহসানুর রাহমান (বিজ্ঞানী, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগ, আইসিডিডিআর’বি), উমাইর আফিফ (৫ম বর্ষ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ) কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দেন।

সূত্র : বাসস

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন