হরতালে সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানালো ইউপিডিএফ ও এর ৮ সহযোগী সংগঠন
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত বিতর্কিত ভূমি কমিশন আইন সংস্কার প্রস্তাব বাতিলের দাবীতে বাঙালী সংগঠনগুলোর আহুত ২ জুনের হরতালে সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ইউপিডিএফ ও এর সহযোগী ও সমর্থিত ৮টি সংগঠন। বিবৃতিতে তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার জন্য বিশেষ একটি শক্তিশালী মহল নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আজকের এই জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা চালানো হয়েছে।
বিবৃতিতে অবিলম্বে পাহাড়িদের উপর হামলাকারী ও জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টার সাথে জড়িত সেটলারদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বহিরাগত সেটলাদের জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক উস্কানি বন্ধ করার জন্য জোর দাবি জানান।
ইউপিডিএফ-এর নিন্দা ও প্রতিবাদ
খাগড়াছড়িতে সেটলার বাঙালিদের সংগঠন কথিত সমঅধিকার আন্দোলন ও বাঙালি ছাত্র পরিষদ সহ কয়েকটি সংগঠনের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে আজ ২ জুন রবিবার সকালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সেটলাররা পরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার চেষ্টা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ৫ জন পাহাড়ি আহত হয়েছেন।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক প্রদীপন খীসা এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হরতাল সমর্থক পিকেটাররা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও উস্কানিমূলকভাবে জেলা সদরের পাহাড়ি অধ্যুষিত নারাঙহিয়াস্থ খাগড়াছড়ি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটো রিক্সা(টমটম) চালকদের উপর হামলা চালায় ও গাড়ি ভাঙচুর করতে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় পাহাড়ি ছেলেরা এতে বাধা প্রদান করলে বাঙালি ছেলেরা পাহাড়ি ছেলেদের উপর হামলা করতে উদ্যত হয় এবং তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয়ের মধে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর উপজেলার কাছাকাছি সবুজবাগ নামক এলাকার দিক থেকে শতশত বহিরাগত বাঙালি পরিকল্পিতভাবে লাঠিসোটা নিয়ে পাহাড়িদের এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এসময় পাহাড়িরাও নিজেদের এলাকায় সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় পাহাড়িরা পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য এগিয়ে গেলে বাঙালিরা তাদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ৫জন পাহাড়ি আহত হয়। আহতদের মধ্যে মনতোষ চাকমার মাথা ফেটে যায় এবং সুবল স্মৃতি চাকমা কানে প্রচ- আঘাত পান। এছাড়া আরো অনেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
তিনি অবিলম্বে পাহাড়িদের উপর হামলাকারী ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টার সাথে জড়িত সেটলারদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও শাস্তি, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সেটলাদের সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করার জন্য জোর দাবি জানান।
খাগড়াছড়িতে বহিরাগত বাঙালিদের জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টায় ৮ সংগঠনের নিন্দা ও প্রতিবাদ
কথিত সমঅধিকার আন্দোলন ও বাঙালি ছাত্র পরিষদ নামধারী বহিরাগত বাঙালিদের উগ্রসাম্প্রদায়িক সংগঠন কর্তৃক আজ ২জুন আহুত হরতাল চলাকালে খাগড়াছড়িতে পিকেটিং-এর নামে এবং রাংগামাটিতে মিছিল চলাকালিন সময় পরিকল্পিতভাবে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর অপচেষ্টাকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন পাহাড়ের ৮টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিতে আটটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা অফিসের সামনে পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকায় পিকেটিং-এর নামে পূর্বপরিকল্পিতভাবে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর উদ্দেশ্যে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ভাংচুরের চেষ্টা এবং চালকদের মারধোরের ঘটনা ঘটানো হয়। একই ভাবে রাংগামাটিতে বিনা উস্কানিতে পাহাড়ি মালিকানাধীন শেভরণ ক্লিনিক ও ডা: প্রলীন চাকমার চেম্বারে হামলা চালিয়ে জাতিগত সহিংস ঘটনা সংগঠিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি নতুন কুমার চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি কণিকা দেওয়ান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি থুইক্য চিং মারমা, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক শান্তি প্রভা চাকমা ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের সদস্য সচিব আনন্দ প্রকাশ চাকমা।