পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন বাতিলের দাবিতে বাঙ্গালীদের সমাবেশে অনির্দিষ্টকালের হরতালের হুমকি

SAM_2998

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
পার্বত্যাঞ্চলকে দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার প্রতিবাদে বিদেশী সাহায্যপুষ্ট বেসরকারি সংস্থা “সিএইচটি কমিশন”কে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে সমঅধিকার আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি বাঙ্গালী সংগঠন। জাতীয় সংসদে পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের খসড়া সংশোধনী পাশ না করার দাবীতে ডাকা রোববারের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বাঙ্গালী সংগঠন গুলোর পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

রাঙ্গামাটি পৌরসভা চত্তরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা তথ্যমন্ত্রী, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, মেসবাহ কামাল, বেগম সুলতানা কামাল, সিএইচটি কমিশনসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্রকারিদেরকে আজীবনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে হেডম্যান, কার্বারী ও উপজাতীয়দের সার্কেল চীপ প্রথা বাতিলের দাবি জানানোর পাশাপাশি সংশোধিত ভূমি কমিশন আইন সংসদে যেদিন তোলা হবে সেদিন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতাল পালনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে।

রাঙ্গামাটি জেলা সমঅধিকার আন্দোলন এর সভাপতি পেয়ার আহমদ খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মো: আফছার উদ্দীন, সমঅধিকার আন্দোলনের সহসভাপতি শহীদ উদ্দীন চৌধুরী,রাঙ্গামাটি পৌরসভার কাউন্সিলর রবিউল আলম রবি, সমঅধিকার আন্দোলনের নেতা আবু বক্কর, মিজানুর রহমান বাবু, সমঅধিকার ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আল আমিন আল ইমরান, বরকল উপজেলার সমঅধিতার নেতা খলিলুর রহমান, লংগদু উপজেলা সমঅধিকার নেতা ওয়াসেক চেয়ারম্যান প্রমুখ।

এদিকে সংশোধিত ভূমি কমিশন আইন বাতিলের দাবিতে শহরে বেশ কয়েকটি খন্ড খন্ড মিছিল করলেও সমাবেশ শেষে বাঙ্গালীদের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশি বাধার মুখে তা করতে পারেনি। হরতালকে ঘিরে সহিংসতা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি শহরে বিজিবি টহল জোরদার করা হয়।

এছাড়া কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা মধ্যদিয়ে বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর ডাকে রাঙ্গামাটি জেলায় সকাল সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত হয়েছে। হরতাল চলাকালে শহরে কোন বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তবে শহরের প্রবেশদ্বার মানিকছড়ি ও ভেদভেদীতে হরতাল সমর্থনকারীরা কয়েকটি সিএনজি ও মোটর সাইকেল আরোহীকে লাঞ্চিত করে। সকাল থেকে রাঙ্গামাটি শহর ছিলো হরতাল সমর্থনকারীদের খন্ড খন্ড মিছিলে ভরপুর। রোববার দুপুরে হরতালের সমর্থনে বাঙ্গালীদের বিশাল একটি মিছিল রাঙ্গামাটি জজ কোর্টের পাশে ভূমি অফিস ঘেরাও করে রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় দাঙ্গা পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।

পরে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গনে গিয়ে সমবেত হয়। এসময় শহরের বনরূপা এলাকায় কয়েকটি দোকানে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এদিকে পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন সংসদে পাশ না করার দাবী জনিয়ে ৪টি বাঙ্গালী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসককের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।  

এরআগে রোববার দিনের শুরুতে কাক ডাকা ভোর থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে এবং খন্ড খন্ড মিছিলের মাধ্যমে হরতালের সূচনা করে হরতাল সমর্থকরা। হরতালে সড়ক ও নৌপথ ছাড়াও রাঙামাটি শহরে অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। শহরের দোকানপাট বন্ধ থাকার পাশাপাশি অফিস আদালত খোলা থাকলেও উপস্থিতি অন্যদিনের তুলনায় কম দেখাগেছে।

হরতালে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন জায়গায় পিকেটারদের উপস্থিতি দেখা গেছে অন্য হরতাল গুলোর তুলনায় বেশি। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। হরতালের শুরুতে সকাল থেকে জেলার কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া হরতালে শহরের অভ্যন্তরের একমাত্র যানবাহন সিএনজি অটো রিক্সা চলাচল বন্ধ থাকায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ ছিল লক্ষ্যনীয়।

পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনে খসড়া সংশোধনী মন্ত্রী সভায় নীতিগত অনুমোদনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার সংবাদ সংম্মেলনের মাধ্যমে রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন ও সম-অধিকার ছাত্র আন্দোলন,পার্বত্য যুব ফ্রন্ট, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদসহ বেশ কয়েকটি বাঙ্গালী সংগঠন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন