২০ লক্ষ টাকার প্রকল্পে নয় ছয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাঙ্গামাটির দুর্গম রাজস্থলী উপজেলার মিতিঙ্গ্যাছড়ি পাড়া পানি সরবরাহকরণ প্রকল্পটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। দুই বছর আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও তা গ্রামবাসীদের কোনও কাজেই আসেনি।
রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ১ ও ২নং ওয়ার্ডের ১৩টি ত্রিপুরা গ্রামের পানি সঙ্কট দীর্ঘদিনের। খাল ও পাহাড়ের ছড়াই একমাত্র খাবার পানির উৎস তাদের। তবে, এই পানি ব্যবহারের ফলে প্রায় সময়ই তাদের পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে ভুগতে হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য অত্র ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মিতিঙ্গ্যাছড়ি পাড়াবাসী ৪ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বরাবর একটি আবেদন করা করেন । অনেক দৌঁড়-ঝাপ ও অফিসের জটিল প্রক্রিয়া পেরিয়ে অবশেষে সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থ-বছরে দুর্গম এলাকায় “পানি সরবরাহণকরণ প্রকল্পের” আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড হতে একটি পানি সরবরাহকরণ প্রকল্প বরাদ্দ মেলে তাদের ভাগ্যে। গ্রামের এহেন বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কটের দিনে এমন একটি প্রকল্প গ্রামবাসীদের মনে খুশির জোয়ার বয়ে যায়। কিন্তু সেদিনের তাদের সেই হাসি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে আরও জানা যায়, প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী উঁচু পাহাড়ের ছড়ার পানি ধরার জন্য একটা ট্যাংক বা পানির হাউজ তৈরি করা হবে। সেই হাউজ থেকে পাইপের মাধ্যমে গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি সরবরাহ করা হবে এমনটি উল্লেখ থাকলেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তা বাদ দেওয়া হয়। সবশেষে সিদ্ধান্ত মেলে রিংওয়েল খুঁড়ে পানির উৎস সৃষ্টি করা হবে। সেখান থেকে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে সাবমারশিবল পাম্পের সাহায্যে পানি ট্যাংকে পানি জমা করা হবে। আর সেই পানির হাউজ থেকে গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি সরবরাহ করা হবে।
কিন্তু উন্নয়ন বোর্ডের সেই সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্তই থেকে গেছে। কারণ রিংওয়েলের পানির স্তর কম থাকায় মোটর চালু করার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পানি শেষ হয়ে যায়। ফলে হাজার চেষ্টা করেও পানি আর ওঠে না। পানির মেইন হাউজের একশ গজের কাছেই বাস কৈন্যাতি ত্রিপুরার (৩০)।
তিনি জানান, তার বাড়ির উঠানে পানি সরবরাহের জন্য একটা স্পট করা হলেও আজ পর্যন্ত সেখান থেকে কোনও পানিই পাননি তিনি।
গ্রামবাসীরা জানান, “পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের এই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রকল্প কাজের শুরু থেকেই অনিয়মিত ছিলেন। প্রকল্পের ঠিকাদারের কাজের অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করলেও তিনি বিষয়টি আমলে নিতেন না। গ্রামের ৬০টি পরিবারের জন্য একটি মাত্র রিংওয়েল খুঁড়ে পানি সংকুলান হবে না বিধায় অন্তত দুইটি রিংওয়েল খনন করার গ্রামবাসীদের অনুরোধ শুনেননি বলে জানান ওই কর্মকর্তা। উল্টো গ্রামবাসীদের তিনি পানির স্থর পাওয়া এবং নিচে পাথর থাকায় কাজ করা সম্ভব না বলে বুঝিয়ে কাজ শেষ করেন।
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, রিংওয়েল খননের সময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে পর্যাপ্ত গভীর যদি করানো হতো পানি পাওয়া যেত। ফলে গ্রামবাসীও পানি পেত।
একই পাড়ার বাসিন্দা বেলাল ত্রিপুরা (৩৫) বলেন, “রিংওয়েল খুঁড়ার সময়টাতে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, যে রিংওয়েলটি খুঁড়া হয়েছিল, তার গভীরতা মাত্র ১০ফুট। ঠিকাদার পাথর থাকার কথা অজুহাত দেখিয়ে আর নিচে খুঁড়েনি। মাত্র ১০ ফুট খুঁড়ে ৬০টি পরিবারের পানি সরবরাহ করা সম্ভব না”।
তিনি আরও জানান, পানি সরবরাহের পাইপও ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের। তাছাড়া পাইপটি মাটির নিচ দিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও তা না করে বরং উপর দিয়ে টেনে নেয়া হয়েছে। তার উপর আবার লাইনের মাঝখানে ছিদ্র হয়ে প্রায়ই পানি পড়ে যায়। ফলে, পানি আর সংগ্রহের স্পটে পৌঁছায় না। এ বিষয়ে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের রাঙ্গামাটি প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি চলতি বছর জানুয়ারির পরপর উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেছি । প্রকল্পে কি হয়েছিল তা বিস্তারিত জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নিব। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের অবহেলিত দরিদ্র অসহাদের পানি সরবারহ না করে প্রকল্পকে নয় ছয় করে পকেট বাড়ি করেছে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু কামনা করেন এলাকাবাসী।