৬১ হাজার উদ্বাস্তু পার্বত্য বাঙালি পরিবারের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে কে?


পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি সংবেদনশীল অঞ্চল, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগোষ্ঠীগত বৈষম্য, ভূমি বিরোধ এবং আভ্যন্তরীন উদ্বাস্তু বা শরণার্থী সংকট বিদ্যমান। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির (কথিত শান্তি চুক্তি) পর গঠিত হয় শক্তিশালি “ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স। যার উদ্দেশ্য ছিল দুইটি: এক. ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থীদের পুনর্বাসন এবং দুই. অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন।
প্রথম কাজটি সম্পন্ন হলেও দ্বিতীয় কাজটি “অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন” আজও ঝুলে আছে। বিশেষ করে বাঙালি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন নিয়ে টাস্কফোর্সের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বিশেষ কারো কাছে লিজ দেয়া হয়েছে?
টাস্কফোর্সের সূচনা ও পক্ষপাতের ভিত্তি:
১৯৯৮ সালে ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স গঠনেরপর সে বছরের ২৭ জুন অনুষ্ঠিত ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স–এর সভায় অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের সংজ্ঞা ও সংখ্যা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত “ক” অনুযায়ী বলা হয়- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হতে ১৯৯২ সালের ১০ আগস্ট (কথিত শান্তিবাহিনীর অস্ত্র বিরতির শুরুর দিন) পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজিত অস্থিতিশীল ও অশান্ত পরিস্থিতির কারণে যে সকল উপজাতি নিজ গ্রাম, মৌজা, অঞ্চল ত্যাগ করে স্বদেশের মধ্যে অন্যত্র চলে গেছেন বা যেতে বাধ্য হয়েছেন, তারা অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে যে সকল অ-উপজাতীয় ব্যক্তিরা উপরোক্ত সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি একই সাথে ভিন্নভাবে বিবেচনা করা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি উদ্বাস্তু পরিবারের সংখ্যা কত?
টাস্কফোর্স প্রাথমিক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ ৮৯,২৮০ উপজাতীয় উদ্বাস্ত পরিবার এবং ৫৭,৬৯২ অ- উপজাতীয় তথা বাঙালি উদ্বাস্তু পরিবার চিহ্নিত করে।
অথচ ১৯৯৭ সালের ১২ নভেম্বর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক প্রশাসন জনাব মসিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়: পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬১,২০২ অ-উপজাতীয় তথা বাঙালি উদ্বাস্তু পরিবার রয়েছে। যা খাগড়াছড়িতে: ৪৫,২৭০ পরিবার, রাঙামাটিতে: ১৫,৬৭৩ পরিবার, বান্দরবানে: ২৫৯ পরিবার। তার মনে এখানেই প্রায় ৪ হাজার উদ্বাস্তু বাঙালি পরিবার বাদ পড়েছে। অর্থাৎ, পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের পূর্বেই সরকার এই সংখ্যা স্বীকার করেছে। কিন্তু টাস্কফোর্স পরবর্তীতে যে সংখ্যা উল্লেখ করেছে, তাতে প্রায় ৪ হাজার পরিবার বাদ পড়ে গেছে। এই সংখ্যাগত গড়মিল শুধু ভুল নয়, বরং ইচ্ছাকৃত বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিগত ২৮ বছরে কি করেছে টাস্কফোর্স?
টাস্কফোর্সের কার্যবিবরণী থেকে দেখা যায়- ২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর তারিখে প্রাক্তন চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউজে টাস্কফোর্স সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ৮৯,২৮০ উপজাতীয় অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্ত পরিবার এবং ৫৭,৬৯২ অ- উপজাতীয় তথা বাঙালি উদ্বাস্তু পরিবারের তালিকা পুনর্বাসনের নিমিত্তে উপস্থাপন করা হয়।
টাস্কফোর্সের ২০১০ সালের গত ২৭ জানুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী থেকে দেখা যায়- যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র উক্ত প্রথম সভায় উপস্থাপিত বাঙালি অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের বিষয়ে দ্বিতীয় টাস্কফোর্স সভায় জনসংহতি সমিতি তথা সন্তু লারমার প্রতিনিধি লক্ষ্মীপ্রসাদ চাকমা উক্ত বাঙালি পরিবারগুলোকে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করার আহ্বান জানান।
যদিও উক্ত সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, তৎকালীন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও জিওসির প্রতিনিধি ‘অ-উপজাতীয়দের অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্ত হিসেবে চিহ্নিত করে এর প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব তুলে ধরে তাদের অন্তর্ভুক্তি যথাযথ হয়েছে মর্মে অভিমত প্রদান করেন। তারা আরও বলেন – যিনি বাস্তু থেকে উৎখাত হয়েছেন তিনিই উদ্বাস্তু। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত উপজাতীয় এবং অ-উপজাতীয় সকলকে অন্তর্ভুক্ত রাখা বাঞ্ছনীয়’। তারপরও ঐ সভায় ১১(চ)সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ”অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংজ্ঞা কি হবে সে বিষয়ে নির্দেশনার জন্য বিষয়টি পরবর্তী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষন কমিটির সভায় উপস্থাপন করার জন্য রাখা হয়।
২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখের টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র টাস্কফোর্স ৩য় সভায়ও অ-উপজাতীয় তথা বাঙালি পরিবারকে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করার পুনরায় আহ্বান জানান সন্তু লারমার প্রতিনিধি লক্ষীপ্রসাদ চাকমা। পরপর ২য় ও ৩য় টাস্কফোর্স সভায় জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধির আপত্তির পর ২০১৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র ৪র্থ টাস্কফোর্স সভায় জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা ) নিজে উপস্থিত থেকে এর বিরোধিতা করেন এবং পূর্ববর্তী ৩য় সভার সিদ্ধান্ত ১২(ঘ) – ‘অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্ত এর সংজ্ঞা কী হবে সে বিষয়ে নির্দেশনার জন্য বিষয়টি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে’বলে সিদ্ধান্তটি বাতিল করেন।
এই সভায় অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু সংজ্ঞা নির্ণয়কল্পে সিদ্ধান্ত ৬(ক) মতে বলা হয়- ‘আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু’র সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের বিগত ২৭/৬/১৯৯৮ খ্রি. সভার সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হবে।’ উল্লেখ্য ২৭/৬/ ১৯৯৮ খ্রি. তারিখে অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্স সভার অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংজ্ঞার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ‘ক’ মতে বলা হয়- ‘১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট হতে ১০ আগস্ট ১৯৯২ ইং পর্যন্ত (অস্ত্র বিরতির শুরুর দিন) সময় কালে পার্বত্য চট্টগ্রামে (খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান) বিরাজিত অস্থিতিশীল ও অশান্ত পরিস্থিতির কারণে যে সকল উপজাতি নিজ গ্রাম, মৌজা, অঞ্চল ত্যাগ করে স্বদেশের মধ্যে অন্যত্র চলে গেছেন বা চলে যেতে বাধ্য হয়েছে তারা অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে যে সকল অ-উপজাতীয় (বাঙালি) ব্যক্তিরা উপরোক্ত সময়ে বিরাজিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি একই সাথে ভিন্নভাবে বিবেচনা করা হবে।’
এই সংজ্ঞার আওতায় অ-উপজাতীয় তথা বাঙালি উদ্বাস্তু পরিবার যারা উক্ত অশান্ত অস্থিতিশীল সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে এ ৪র্থ টাস্কফোর্স সভায় ৬(খ), ৬(গ) মতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে , অ-উপজাতীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকার ভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’
কিন্তু আবারো সন্তু লারমা গত ২৯ /৯ /২০১৪ খ্রি. তারিখে পরবর্তী ৫ম সভায় উপস্থিত হয়ে ৪র্থ টাস্কফোর্স সভার ৬(খ এবং) ৬(গ) সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে উক্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করান।
অর্থাৎ ৮৯,২৮০ উপজাতীয় উদ্বাস্তু পরিবারের পুনর্বাসনের বিষয়টি বহাল থাকবে, কিন্তু ৫৭,৬৯২ অ-উপজাতীয় তথা বাঙালি পরিবারের পুনর্বাসনের বিষয়টি বাতিল করা হয়।
২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্সের ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম সভাগুলোতে বাঙালি অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের বিষয়ে নানা অপকৌশলে আর কোন আলোচনা করতে দেয়া হয়নি।
তবে বিগত ২২/১০/২০১৯ খ্রি. তারিখে টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্সের ১০ম সভায় জিওসির প্রতিনিধি মেজর মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বাঙালি জনগোষ্ঠীকে ৫ম সভায় বাদ দেয়ার বিষয়টি উত্থাপন করলে তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে মানবিক কারণে আলাদাভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে মর্মে ঐ সভায় ১১(খ) সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
গত ২৪/০৯/ ২০২৩ খ্রি. তারিখে অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্সের ১১তম সভায় আবারো অ-উপজাতীয় উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের পদক্ষেপের প্রশ্নে যৌক্তিকতা উপস্থাপিত হলে এই সভার সিদ্ধান্ত ১- এ বলা হয় ‘… অ-উপজাতীয়দের নতুন করে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী সভায় সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে চূড়ান্ত করা হবে।’
সেই গুরুত্বপূর্ণ সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে আওয়ামী সরকারের পতন হয় ২০২৪ এর আগস্টে। কিন্তু তার আগে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় চেয়ারম্যান নিয়োগ পাওয়া কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় চেয়ারম্যানের শূন্য হয়। সে পদে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় টাস্কফোর্সে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সুদত্ত চাকমাকে। তবে সরকার পতনেরপর আওয়ামী আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় টাস্কফোর্সে বাঙালি প্রতিনিধি নিয়োগ পাওয়া অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন কবীর পদত্যাগ করলে বাঙালি প্রতিনিধি পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়োগ পাওয়ার দায়ে বাঙালি প্রতিনিধি নিয়োগ পাওয়া অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন কবীর পদত্যাগ করলেও একই আমলে নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যান বহাল রয়েছেন। অপরদিকে বাঙালি প্রতিনিধি হিসেবে সে পদে আর কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।
এদিকে ২২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিগত সরকারের আমলে নিয়োগকৃত চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমা’র সভাপতিত্বে সভা আহ্বান করা হয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে বাঙালি প্রতিনিধি বিহীন এ সভায় বাঙালি প্রতিনিধি না থাকার সুযোগে বাঙালি উদ্বাস্তুদের বিষয়ে ষড়যন্ত্রমুলক সিদ্ধান্ত আসতে পারে এমন আশঙ্কায় সভা অনুষ্ঠানের বিষয়ে আপত্তি উঠে। সমালোচনার ঝড় উঠলে সভাটি বাতিল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠে—সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী রাষ্ট্রীয় কাঠামো কীভাবে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অধিকার অস্বীকার করে? এই চক্রান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
১৬ সদস্যের এই টাস্কফোর্স কমিটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- এতে উপজাতি সম্প্রদায় থেকে বাধ্যতামুলক ভাবে ১ জন চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান রয়েছে। বাকি ১৫ সদ্যস্যের মধ্য বাধ্যতামূলক উপজাতি থেকে নিয়োগ পাওয়া ৩ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ৩ জন, ৩ সার্কেল চিফ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির একজন (উপজাতি ছাড়া কেউ সদস্য নেই) প্রতিনিধি এবং ভারত প্রত্যাগত উপজাতি শরণার্থীদের একজন প্রতিনিধিসহ মোট ৯ জন উপজাতীয় সদস্য। অপর দিকে বাঙালি প্রতিনিধি হিসেবে শুরুতে কোনো সদস্য না থাকলেও পরে দাবির প্রেক্ষিতে ১জন বাঙালি সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া বাকি ৬ জনের একজন পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পদটি উপজাতীয়দের জন্য সংরক্ষিত সুতরাং মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা উপদেষ্ঠার প্রতিনিধি হিসেবে যিনি আসবেন তিনি উপজাতি হিসেবেই গণ্য হওয়া স্বাভাবিক। বাকি ৫ জনের মধ্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, তিন জেলার জেলা প্রশাসক এবং জিওসির প্রতিনিধি। এসব সদস্যরা কোনো ব্যক্তি হিসেবে নয়ম বরং রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে একান্তই প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকাদের থেকে অন্তর্ভুক্ত।
একমাত্র বাঙালি সদস্যের পদটি পদত্যাগজনিত কারণে বর্তমানে শূন্য রয়েছে। বাঙালি সদস্যের অনুপস্থিতিতে বাঙালি উদ্বাস্তুর অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কিভাবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। দেখার অপেক্ষায় বাঙালি উদ্বাস্তুরাও টাস্কফোর্সের আওতায় পুনর্বাসিত হবেন নাকি সন্তু লারমা গংদের প্রবল আপত্তি, বিরোধীতায় অপকৌশলে বাদ যাবেন।
উপসংহার: পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬১ হাজারের অধিক বাঙালি উদ্বাস্তু পরিবারের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে একটি রাষ্ট্রীয় টাস্কফোর্স। যাদের কাজ ছিল পুনর্বাসন, তারা আজ পুনর্বাসন থেকে বাদ দেওয়ার নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। এই চক্রান্ত শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, এটি রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সম্প্রীতির বিরুদ্ধে অবস্থান।
এখনই সময়—এই টাস্কফোর্সের কাঠামো পুনর্গঠন করে, সকল জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে, বাঙালি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যায়, শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা।
লেখক: এ এইচ এম ফারুক,
সাংবাদিক, লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

















