আজ পালিত হচ্ছে সশস্ত্রবাহিনী দিবস

Tri_service_bd_forces

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

সশস্ত্রবাহিনী দিবস আজ। সশস্ত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে যথাযথ মর্যাদা এবং উত্সাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে দিবসটি উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দেশের সব সেনানিবাস, নৌঘাঁটি, স্থাপনা এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটির মসজিদগুলোয় দেশের কল্যাণ, সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্রবাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্যদিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক অ্যাডমিরাল আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোত্সর্গকারী সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান এবং বিমান বাহিনী প্রধান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তিন বাহিনীর প্রধানরা বঙ্গভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্রবাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্রবাহিনী বিভাগে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিত সংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা জানাবেন।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে এক বৈকালিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতিরা, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার, বাংলাদেশে নিযু্ক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, ঢাকা এলাকার সংসদ সদস্য এবং তিন বাহিনীর সাবেক প্রধানরা, ২০১৩ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, নির্বাচিত রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, স্বাধীনতা যুদ্ধের সব বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারীরা, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তাদের উত্তরাধিকারীরা, উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তা এবং তিন বাহিনীর চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে।

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সশস্ত্রবাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

রাষ্ট্রপতির বাণী
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে বলেছেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জাতীয় জীবনে আমাদের অহঙ্কার। কঠোর অনুশীলন, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের চরম পরাকাষ্ঠার মাধ্যমে সশন্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ তাদের গৌরব সমুন্নত রাখবে।

বাণীতে সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনালগ্নেই বাহিনীর সদস্যগণ শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের এ দিনে (২১ নভেম্বর) সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করে। ফলশ্রুতিতে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, অকুতোভয় সশস্ত্র বাহিনীর অনেক সদস্যই সেদিন দেশমাতৃকার জন্য অকাতরে জীবন উত্সর্গ করেছিলেন। তিনি এ দিবস উদযাপন উপলক্ষে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য শাহাদত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর দেশপ্রেমিক জনতা, মুক্তিবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও বিভিন্ন আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের আত্মত্যাগে ১৬ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ পালন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে একটি আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। তার হাতে গড়া সেই বাহিনী আজ পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন তাদের সব কর্মকাণ্ডে। বর্তমান সরকার জাতির পিতার নির্দেশে ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’-এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

খালেদা জিয়ার বাণী
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে বলেন, সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে আমি বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সব সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তাদের এবং তাদের পরিবারের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করি।
সশস্ত্রবাহিনী আমাদের গর্বের প্রতিষ্ঠান। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যরা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে চলেছেন। বিশ্বশান্তি রক্ষায়ও তারা পালন করে চলেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

বাণীতে বলা হয়, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীকে একটি আধুনিক, গতিশীল ও দক্ষ পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে আমরা সরকারে থাকতে সেসব কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়ন এবং একে শক্তিশালী করে তুলতে সচেষ্ট থেকেছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। বিরোধীদলীয় নেত্রী সশস্ত্রবাহিনী দিবসের সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন