আঞ্চলিক দেশগুলোকে সাগরে ভাসা রোহিঙ্গাদের নিতে বলছে ইইউ

fec-image

দুটি ট্রলারবোঝাই প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে সপ্তাহজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেল এবং সংস্থাটির কমিশনার জানেস লেনারিচ এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। ব্রাসেলসে ইইউ’র সদর দপ্তর থেকে গতকাল শুক্রবার ওই বিবৃতিটি দেওয়ার পর ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস শনিবার তা প্রচার করেছে।

দুই সপ্তাহ ধরে সাগরে দুটি ট্রলারে ভাসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশলেতে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানান। পরে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমদও টেলিফোনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে একই অনুরোধ জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমে বলেছেন, দুটি নৌকায় প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা বঙ্গোপসাগর ও আন্দামানে ভাসছে। মালয়েশিয়া সরকার তাদের নেয়নি। ফলে এখন তারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তবে তারা এখন বাংলাদেশের জলসীমায় নেই। তাই তাদের গ্রহণ করার কোনো দায়বদ্ধতা বাংলাদেশের নেই। তাদের সাহায্যের জন্য অন্য দেশও এগিয়ে আসতে পারে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এ অঞ্চলে তো মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারতসহ আরও অনেক দেশ আছে। তাদের তো বলা হয় না। শুধু বাংলাদেশের কাছে এদেরকে নেওয়ার অনুরোধ আসে কেন?

ইইউর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জোসেপ বোরেল এবং জানেস লেনারিচ তাদের যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘অব্যাহতভাবে উদারতা ও মানবতা দেখিয়ে বাংলাদেশ ২৬ এপ্রিল চার শতাধিক রোহিঙ্গাকে নিরাপদে আশ্রয় দিয়েছে। আমরা আশা করব, এ অঞ্চলের দেশগুলো এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে।’

ইইউর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমারের সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অবিলম্বে নিঃশর্তে অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে সবাইকে নিয়ে শান্তি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানাই। এটি রোহিঙ্গাদের মূল সমস্যার সমাধান করবে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক ও উন্নয়ন অংশীদার ইইউ এ অঞ্চলের জন্য আরও সহায়তা দিতে তৈরি আছে। রোহিঙ্গাদের আদি নিবাসে নিরাপদ, টেকসই, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের প্রতি আমরা অব্যাহতভাবে উৎসাহ দিয়ে যাব। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর পূর্ণ জবাবদিহি নিশ্চিতের প্রক্রিয়ায়ও সমর্থন করে যাব।’

কূটনৈতিক এবং কক্সবাজারের স্থানীয় সূত্রগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের বহনকারী ট্রলার দুটি ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখে তারা আর বাংলাদেশের জলসীমায় আসতে পারেনি। বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিনের কাছে মিয়ানমারের জলসীমার সিতার পাহাড়ের কাছাকাছি জায়গায় ট্রলার দুটি অবস্থান করছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাগরে ভাসা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের দায়িত্ব নিতে বলছে। অথচ এই রোহিঙ্গারা সাগরে গিয়েছে তো মিয়ানমারের কারণে। কিন্তু এর জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করা কিংবা তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে এখনো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কিছু বলতে শুনিনি।’

ইমতিয়াজ আহমেদ আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভাসমান ট্রলারের একটি আন্দামানে ভাসছে বলে শুনেছি। যদি তা–ই হয়ে থাকে, এ ক্ষেত্রে ভারতের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি সামনে চলে আসে। কারণ ইইউ তো বলেছে, আঞ্চলিক দেশগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে। কাজেই বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু ভারত নয়, আঞ্চলিক দেশগুলোর রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার নৈতিক দায়িত্ব এসে পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইইউ বিবৃতিতে মিয়ানমারের বিবদমান সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে অবিলম্বে নিঃশর্ত অস্ত্রবিরতিতে যেতে বলেছে। আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, রাখাইনে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে। রাখাইনে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে মিয়ানমার যে ব্যর্থ হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে, এটা তো ইইউর না বোঝার কথা নয়।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন