ইরানের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন চীনের

fec-image

ইরানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। অন্যদিকে, তেহরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির উন্নয়নের জন্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বেইজিং এবং মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারে ব্যস্ত।

চীনের রাষ্ট্রীয় টিভির ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার দেওয়া এক বিবৃতিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি বলেন, ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইরানকে সমর্থন করে চীন। আমরা একতরফাবাদ ও গুন্ডামি প্রতিরোধে সবসময় সতর্ক।’

২০ বছরের মধ্যে ইরানের প্রেসিডেন্টের প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরের আতিথ্য করছে এশিয়ান অর্থনৈতিক জায়ান্ট চীন। বেইজিং-এ মঙ্গলবার বৈঠক করেন দুই প্রেসিডেন্ট।

বিবৃতিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ইরানের পারমাণবিক সমস্যার যথাযথ সমাধানের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি ইরানের প্রেসিডেন্টকে বলেছি যে তাদের পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নে আলোচনা পুনরায় শুরু করার চেষ্টা চালিয়ে যাব আমরা।’

২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিকে সীমিত করা হয়েছিল। তবে ইরানের দাবি, শান্তিপূর্ণ কারণে পারমাণবিক শক্তির আরও উন্নয়ন করছে তারা।

২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তিটি থেকে সরে আসেন। তিনি বলেছিলেন, এটি তেহরানের পারমাণবিক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। চুক্তি থেকে সরে ফের ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে আসছে চীন। তারা জোর দিয়ে বলেছে, চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রথম পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া উচিত।

গত সেপ্টেম্বরে ইরানের তেল রফতানির সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র; যার মধ্যে চীনভিত্তিক পাঁচটি সংস্থা রয়েছে।

ওয়াশিংটন বলছে, যতক্ষণ না তেহরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করবে, ততক্ষণ তারা ইরানের তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখবে।

ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে বেইজিংয়ে ইরানের একটি বৃহৎ বাণিজ্য ও অর্থ প্রতিনিধিদল রয়েছে। এর আগে চীনে তাকে লাল গালিচায় অভ্যর্থনা জানানো হয়।

শি বলেন, ‘বিশ্ব, সময় এবং ইতিহাসের বর্তমান জটিল পরিবর্তনের মুখে চীন এবং ইরান একে অপরকে সমর্থন করেছে। সংহতি ও সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ করেছে।’

ইউক্রেন যুদ্ধের চাপ
ইউক্রেন যুদ্ধে প্রশ্নে চীন ও ইরান দুই দেশই পশ্চিমাদের চাপের মুখে আছে। পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে ইতোমধ্যে ইরান কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে।

আল জাজিরার সাংবাদিক ক্যাটরিনা ইউ বলেন, ‘চীন হলো ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। তাদের অনুমোদিত তেল রপ্তানির একমাত্র গ্রাহক। মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা ইরানকে ৪০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ফেলেছে।’

ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে মস্কোকে গভীরভাবে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেওয়ায় রাশিয়ার অবশিষ্ট মিত্রদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইরান।

পশ্চিমা দেশগুলো তেহরানকে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে সশস্ত্র ড্রোন সরবরাহ করার অভিযোগ এনেছে, যা অস্বীকার করছে ইরান। ওয়াশিংটন ডিসেম্বরে জানায়, ইরান এবং রাশিয়ার মধ্যে হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান এবং ড্রোনের মতো সরঞ্জাম আদান-প্রদান হচ্ছে।

ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণ বেইজিংয়ের জন্য একটি সংবেদনশীল বিষয়। এ ইস্যুতে বেইজিং তার কৌশলগত মিত্র রাশিয়াকে কূটনৈতিক সমর্থন দেওয়ার সময় নিজেকে নিরপেক্ষ হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছে।

সাংবাদিক ক্যাটরিনা ইউ জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চুক্তিটি পুনরুদ্ধার করতে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘ইব্রাহিম রাইসির সফর এমন সময় হচ্ছে যখন চীন এবং ইরান উভয়ই রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক জোরদার করেছে। দুই পক্ষই দাবি করে যে তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের নেতৃত্বে বিশ্বব্যবস্থার বিরোধী।’

চাইনা সেন্ট্রাল টেলিভিশন (সিসিটিভি) বলছে, দুই পক্ষ কৃষি, বাণিজ্য, পর্যটন, পরিবেশ সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ত্রাণ, সংস্কৃতি এবং খেলাধুলার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নথিতে সই করেছে।

সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনের মাঝে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাইসি এবং শি প্রথম দেখা করেছিলেন। সংস্থাটির পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য ইরানের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল চীন।

গত বছর ইরান এবং চীন একটি ২৫ বছরের একটি সহযোগিতা চুক্তির বাস্তবায়ন পর্বও শুরু করেছ। এটির অধীনে তেল এবং পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য সরবরাহের বিনিময়ে ইরানের পেট্রোলিয়াম খাতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে চীন। ২০১৬ সালে ইরান সফরের সময় শি এ চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন। সূত্র: আল জাজিরা

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইরান, চীন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন