ডিআইজি'র ক্যাম্প পরিদর্শন

উত্তপ্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প : অপহৃত আরও ৫ জন উদ্ধার, আটক-২

fec-image

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সপ্তাহব্যাপী দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্প। পুলিশ বুধবার অপহৃত আরও ৫জনকে উদ্ধার করেছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে ২ জনকে আটক করেছে।

সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হামলার ভয়ে কুতুপালং ২ ইস্ট ক্যাম্পের তাবলীগ জামাতের মারকাজে আশ্রয় নিয়েছে ২ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা। উত্তেজনাপূর্ণ লম্বালিশয়া ক্যাম্প থেকে অন্যত্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ৫শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবারকে। এছাড়াও স্থানীয় দুইজনকে জবাই করে হত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের নয়াপাড়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। এঘটনায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের জিআইজি ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন।

জানা গেছে, বুধবার সকালেও দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় এক রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। নিহত রোহিঙ্গা কুতুপালং জি-ব্লকের বাসিন্দা জামাল হোসেনের ছেলের শফিউল আলম (১৭)। এ ঘটনায় দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। আটকৃতরা হলো উখিয়া কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের মাঝি কালা বদা ও মোহাম্মদ আলম।

অপরদিকে খবর পাওয়া গেছে, গত সোমবার অপহৃত ৮ জনের মধ্যে আহত অবস্থায় ৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তৎমধ্যে কুতুপালং ব্লক-ই বাসিন্দা মাস্টার মোহাম্মদ আলমের ছেলে রবিউল হাসান, একই ব্লকের জাহাঙ্গীর আলম ও জিয়াবুর রহমানকে এখনো পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি ক্যাম্প প্রশাসন।

কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ইনচার্জ খলিলুর রহমান, বুধবার অভিযান চালিয়ে ৪জনকে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তাৎক্ষণিক উদ্ধারকৃতদের পরিচয় জানা যায়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দোকান-পাট এবং যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের এসব তান্ডবের প্রতিবাদে সাধারণ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করতেও দেখা গেছে।

কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কদিন ধরে টানা সংঘর্ষের ঘটনায় এনজিও কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে আসছিল।

মঙ্গলবার রাতে নিহত ৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছেন পুলিশ প্রশাসন। নিহতরা হলো রোহিঙ্গা নেতা মুন্নার দুই ভাই মোহাম্মদুল্লাহ ওরফে গিয়াস উদ্দিন ও মো. ফারুক। অপর দুই জন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী এলাকার দিলদার আহমদের ছেলে নুরুল বশর, একই এলাকার নোহা চালক নুর হোসেনের ছেলে নুরুল হুদা।

স্থানীয় বাসিন্দা নিহত নুরুল হুদার ছোট ভাই মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, নোহা চালক নুরুল বশরকে রোহিঙ্গা নেতা মুন্না মাস্টার ফোন দিয়ে তার বোনকে হ্নীলা ক্যাম্পের নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করে। ওই সময় নোহা চালক আমার ভাইকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পে যায়। তখন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে আমার ভাইসহ ৪জনকে জবাই করে হত্যা করে। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।

কুতুপালং ওয়ান ইস্টের ক্যাম্প ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উত্তেজনা বিরাজ করায় ৫শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবারকে অন্যত্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

আইএসসিজি’র কো-অর্ডিনেটর সৈকত বিশ্বাস বলেছেন, সাধারণত ৪টার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন এনজিও কর্মীরা থাকার সুযোগ নেই। তবে আজকে কয়েকটি ক্যাম্পে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে সকলকে সতর্কতার পাশাপাশি নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

ঘটনা পরবর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। পরিদর্শন শেষে ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে ঘন্টাব্যাপী বিভিন্ন সংস্থার লোকজনের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাম্পের সংঘটিত ঘটনায় ইতোমধ্যে দুইজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের আটক করতে যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্যাম্পের বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে গত কয়েকদিনের ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইএসসিজি কর্মকর্তা নাঈমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও কর্মীদের বুধবার নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আটক, উত্তপ্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ডিআইজি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন