কক্সবাজারে দস্যু বাহিনীর শতাধিক সদস্যের আত্মসমর্পণ পর্ব শুরু

fec-image

মহেশখালী-কুতুবদিয়া উপকূলীয় এলাকাজুড়ে বিচরণ রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনীর শত শত সশস্ত্র সদস্য। জল ও স্থলে সমান তালে চলে তাদের দস্যুতা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এ অবস্থায় গত বছরের ২০ অক্টোবর প্রথম দফায় ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণের পর আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) দস্যু বাহিনীর আরও শতাধিক জলদস্যু আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। সকাল ১১ টার মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের হাতে অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণ করবেন বলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন নিশ্চিত করেছেন।

তবে এ আত্মসমর্পণকে কেন্দ্র করে মহেশখালীর কালারমারছড়া বাসীর মাঝে উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে এ আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে মহেশখালীর প্রতিটি জনপদে শান্তি ফিরবে এমনটা প্রত্যাশা করেন সাধারণ জনগন।

জানা গেছে, একের পর এক জলদস্যু বাহিনী আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ঘটনায় উদ্বুদ্ধ হয় কক্সবাজারের উপকূলীয় জলদস্যু গ্রুপগুলো। এ নিয়ে কক্সবাজারের উপকূলীয় জলদস্যু বাহিনীগুলোর সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

জেলা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, আত্মসমর্পণ করা সন্ত্রাসীদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হবে। তবে সন্ত্রাস ও দস্যুতার পথ পরিহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের তরফ থেকে গতবারের মতো তাদেরকেও সর্বোচ্চ আইনি সহায়তাসহ সার্বিক সহায়তা করা হবে।

জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের মধ্যস্থকারী সাংবাদিক আকরাম হোসাইন জানান, কুতুবদিয়ার শীর্ষ জলদস্যু গ্রুপ গুরাকালু বাহিনীর প্রধান গুরাকালুসহ ৯ সন্ত্রাসী ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশের সেফহোমে চলে এসেছে। তাছাড়া প্রথম দফায় আত্মসমর্পণের পর থেকে এ পর্যন্ত কুতুবদিয়ায় শতাধিক জলদস্যু গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বিপুল অস্ত্র ও গুলি।

আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে কূখ্যাত খউস্বর বর গ্রুপ, কালারবর গ্রুপ, জিয়া বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, আইয়ুব বাহিনী, জমির বাহিনী, কামাল বাহিনী, সিরাজদৌল্লা বাহিনী আয়াতুল্লাহ বাহিনীসহ ১৭ টি পৃথক জলদস্যু বাহিনীর প্রধান, সদস্যরা, অস্ত্রের কারিগরদের সর্দার, দাগী পলাতক আসামীরা আত্মসমর্পণ করতে মধ্যস্থতাকারীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ৮ টার মধ্যেই সকল আত্মসমর্পণকারীদের অনুষ্ঠানস্থলে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া প্রহরায়। এ সব কূখ্যাত বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত কালারমারছরাসহ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মহেশখালী থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, এ আত্মসমর্পণের পর মহেশখালী সম্পূর্ণ সন্ত্রাসমুক্ত হবে বলে আশা করছি। আত্মসমর্পণ উপলক্ষে সমাবেশ সফল করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

এই আত্মসমর্পণের একমাত্র মধ্যস্থতাকারী আনন্দ টিভি’র চট্টগ্রাম ব্যুরো চীফ কক্সবাজারের পেকুয়ার কৃতি সন্তান এম.এম আকরাম হোসাইন জানান, অস্ত্রের কারিগর, বহু মামলার পলাতক আসামী, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও জলদস্যুরা দেড় শতাধিক অবৈধ অস্ত্র, প্রায় ২ হাজারের বেশী গোলাবারুদ, ধারালো ভয়ংকর অস্ত্র, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করবে।

তিনি আরো জানান, দেশের অন্যান্য এলাকার জলদস্যু এবং কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জলদস্যুদের মধ্যে একটু ভিন্নতা রয়েছে। এখানকার জলদস্যুরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে অনেকটা জিম্মি। জলদস্যু নিজে ও স্বজনদের জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে জলদস্যুতা, অস্ত্র তৈরীর মতো জগণ্য পেশাকে অবলম্বন করে অন্ধকার জগতে রয়েছেন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, শনিবার সকাল পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণে তালিকাভুক্তি হওয়ার সুযোগ পাবে। যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে নগদ অনুদান দেয়া হবে। পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য তাদেরকে চেকের মাধ্যমে আরও টাকা দেয়া হবে অনুদান হিসেবে।

এবার মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও চকরিয়ার জলদস্যুরা আত্মসমর্পণের সুযোগ পাবে। তাছাড়া বাঁশখালীর জলদস্যুরাও ইচ্ছা করলে আত্মসমর্পণ করতে পারবে। যারা এ সুযোগ পেয়েও আত্মসমর্পণ করবে না সে সব সন্ত্রাসীদের জন্য কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

এ লক্ষ্যে অনুষ্টানস্থলকে বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছে। মাঠ ও আশপাশ এলাকার নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে র‌্যাব, পুলিশ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত আছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আত্মসমর্পণ, সন্ত্রাসী বাহিনী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন